মোহাম্মদ আরিফ উদ্দীন চৌধুরী:
ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমে চলতি মাসের ১৯ তারিখ “হাইকোর্টে তালিকাভূক্তিতে এমসিকিউ পরীক্ষা বাতিল হবে না: বিচারপতি নুরুজ্জামান” শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে জানতে পারি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে নবীন আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের (আপিল বিভাগ) বিচারপতি ও বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট কমিটির সম্মানিত চেয়ারম্যান বিচারপতি জনাব মোঃ নুরুজ্জামান। উক্ত অনুষ্ঠানে বিচারপতি জনাব মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, “আমরা আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষাকে এমন ভাবে উন্নীত করতে চাই, যাতে একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার চেয়ে একজন আইনজীবী কোন অংশেই কম না হয়”। আইনজীবীদের অভিভাবক, মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি, সর্বোপরি একজন আইনজীবী হিসেবে স্যারের এ বক্তব্য আমার অন্তর ছুঁয়ে গেছে। স্যারের এমন প্রত্যাশা বা স্বপ্ন আছে জেনে, আমার খুব ভাল লাগলো। আমি ব্যক্তিগতভাবে স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। আমিও একজন নবীন আইনজীবী হিসেবে স্বপ্ন দেখি, আইনজীবীরা বিজ্ঞ নামক যে শব্দটা নামের পাশে বসানোর গৌরব অর্জন করে তার সঠিক মর্মার্থ অনুধাবন করে, তার যথার্থ ব্যবহারও যেন সকল আইনজীবীরা দখলে রাখে। আমি একজন নবীন আইনজীবী হিসেবে প্রকৃত অর্থে বিজ্ঞ হবার পথে সবেমাত্র যাত্রা শুরু করেছি। আমি তালিকাভূক্ত হওয়ার পর প্র্যাকটিস করতে গিয়ে দেখছি, প্রকৃতপক্ষে আমাদের জ্ঞানের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি আইন ও আদালত বিষয়ে কিছু ব্যবহারিক শিক্ষাও দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে পেশাগত জীবনে এসে দেখছি, আইন ও আদালত একটি বিশাল জগৎ, যেখানে শেখার শুরু আছে, কিন্তু শেষ নাই। দন্ডবিধির ৩২৩ ধারার মধ্যে একটি ধারার উপরও কত রকমের ওকালতি চলে, কত রকমের জেরা-জবানবন্দি হয়, কত রকমের আদেশ হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজেকে ন্যূনতম একজন আইনজীবী হিসেবে দাঁড় করানোর ক্ষেত্রেও এখানে অনেক অধ্যাবসায়, পরিশ্রম ও সময়ের দরকার হয়। বিচারপতি জনাব মোঃ নুরুজ্জামান স্যারের কথাটা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। বিশ্বায়নের এ যুগে টিকে থাকতে হলে, নিজেকে অনেক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। স্যার, উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় নিজের জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ১৯৮০ সালে হাইকোর্ট তালিকাভূক্তি পরীক্ষায়, লিখিত পরীক্ষা অন্তর্ভূক্তিকে ক্ষেন্দ্র করে এর বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন করেছেন, কিন্তু অন্দোলনে সফল হন নি, অন্য যারা পরীক্ষা দিয়েছিলো, তারা পাশ করেছে। স্যার, একই সাথে এটাও বলে সাবধান করেছেন যে, “কোন অন্দোলন বা চাপের মুখে এমসিকিউ পরীক্ষা বাতিল হবে না”। স্যারের, এ বক্তব্য সামনের পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা।
বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখা গুলোর মধ্যে আইন বিষয়টা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক পড়াশুনা যেমন এমবিবিএস, ডেন্টাল, ফার্মেসি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্যামিকেল, টেক্সটাইল, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ট্যুরিজম, বিষয় ভিত্তিক ডিপ্লোমা ইত্যাদি বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষার্থীরা সরাসরি কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারে। নামের পাশে বসাতে পারে উক্ত ডিগ্রীর বিশেষ বিশেষণ। উচ্চতর পড়ালেখার জন্য প্রয়োজন মতে, তারা দেশে বা দেশের বাইরে থেকেও ডিগ্রী আনতে পারে। তবে, বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখা করার পর তাদের কে বিশেষ কোন পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হয় না। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর পড়ালেখা শেষ করে সরাসরি তারা উক্ত পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে এবং নামের পাশে যুক্ত করতে পারে তৎবিষয়ের বিশেষ বিশেষণ। তবে, শুধুমাত্র আইন বিষয়ে পড়ালেখার ক্ষেত্রে এটার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। একজন আইনের শিক্ষার্থী আইন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’তে ডিগ্রী অর্জন করার পর নিজের নামের পাশে আইনজীবী বা অ্যাডভোকেট শব্দটি সংযোজন করতে পারে না বা সরাসরি আইনপেশায় নিয়োজিত হতে পারে না। এই বিশেষ শব্দটি বা অনুমতি একজন আইনের শিক্ষার্থীকে অর্জন করতে হয় আইনজীবীদের সর্বোচ্চ অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা “বাংলাদেশ বার কাউন্সিল” কর্তৃক নির্দেশিত কার্যক্রম সফলতার সহিত সু-সম্পন্ন করার মাধ্যমে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সর্বশেষ নিয়ম মোতাবেক, একজন আইনের ডিগ্রীধারীকে আইন পাশ করার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ সংগ্রহ করে আইনজীবী হিসেবে ১০ বছর অতিক্রম করেছে এমন একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর অধীনে চুক্তিভূক্ত হয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করে আইন, মামলা-মোকদ্দমা ও আদালত সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হয়। সে হিসেবে উক্ত বিজ্ঞ আইনজীবীর অনুমতি সাপেক্ষে ও সত্যায়নে প্রায় ২০০০/- (দুই হাজার) টাকা পে-অর্ডার মূলে জমা করে, বার কাউন্সিলের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়, সে অনুযায়ী বার কাউন্সিল প্রণীত নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ ও পিউপিলেজ সময় ০৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর বার কাউন্সিল থেকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করে। পরবর্তিতে উক্ত আইনের ডিগ্রীধারী বিজ্ঞ সিনিয়রের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকার সময়, যে সমস্ত মামলার উপরে জ্ঞান অর্জন করেছে, তা শর্ত মোতাবেক ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলার তালিকা তৈরী করে উক্ত মামলা সমূহের ঘটনা ও গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপ উল্লেখ পূর্বক ২য় বার ইন্টিমেশন অর্থ্যাৎ চূড়ান্ত আবেদন করতে হয়। ২য় বার আবেদন করার সময়ও আবেদনকারীকে প্রায় ৪,৭০০/- (চার হাজার সাত শত) টাকা জমা দিতে হয়। পরবর্তিতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে। বর্তমান প্রচলিত নিয়মানুসারে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয় ০৩ (তিন) টি স্থরে। সফলতার সাথে অ্যাডভোকেট তালিকাভ’ক্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর যথানিয়মে একজন আইনজীবীকে হাইকোর্ট তালিকাভূক্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য বার কাউন্সিল বরাবরে আবেদন করতে হয়। হাইকোর্ট তালিকাভূক্তি পরীক্ষাতেও আইনজীবীকে দু-বার আবেদন করতে হয় এবং আবেদন করতে গিয়ে ১ম বার ৩,৫০০/- (তিন হাজার পাঁচশত) টাকা ও ২য় বার ১৩,৫০০/- তের হাজার পাঁচশত) টাকা জমা দিয়ে বার কাউন্সিল প্রণীত সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিম্ন আদালতের আইনজীবী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে হাইকোর্টে তালিকাভুক্ত হতে হয়। অ্যাডভোকেটশীপ তালিকাভূক্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয় যথাক্রমে এম.সি.কিউ, লিখিত এবং সর্বশেষ ভাইভা গ্রহণের মাধ্যমে। এই তিন স্থরের পরীক্ষা সম্পন্ন হয় রাজধানী ঢাকায়। দেশের চলমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, গতিশীল উন্নয়ন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বানিজ্য, নৌ-পথ, স্থল-পথ, আকাশ পথ, বিভিন্নভাবে দেশ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অংশগ্রহণ করছে, সমুদ্রসীমা আইন, এদেশে বিদেশীদের বিনিয়োগ, নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্টান স্থাপন, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এন.জি.ও বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনা ও বৃদ্ধি, ইত্যাদি কারণে দেশে আইন-আদালত ও আইনজীবীর প্রয়োজন বেড়েছে বহুগুন। সে-কালে শুধু স্থানীয় মারামারি বা জায়গাজমি সংক্রান্ত্র বিরোধ নিষ্পত্তি আইন-আদালতের কার্যতালিকার মূখ্য কাজ থাকলেও বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তার ক্ষেত্র বেড়েছে। বর্তমানে শুধু মারামারি বা জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের মধ্যে মানুষ আর সীমাবদ্ধ নেই। আইন ও আদালতের বহুমুখী কার্যক্রম বেড়েছে। প্রতিনিয়ত নানাবিধ নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আদালতকে কাজ করতে হয়। নতুন উদ্ভুদ বিষয় নিয়ে নতুন আইন করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত পুরাতন আইন গুলোকে সংশোধন, সংযোজন করে আপডেট করতে হচ্ছে। বর্তমানে একজন আইনজীবীকে অনেক গুলো বিষয় নিয়ে জ্ঞান রাখতে হয়। এই অনেক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করাটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভব নয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির দেয়া কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরই পাঠদান করে থাকে। এর বাইরে অবশ্য আনলিমিটেড বিষয়ের জ্ঞান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিতেও পারবে না। এটা কোনভাবেই সম্ভব না। তাহলে এ শিক্ষাটা তারা অর্জন করবে বাস্তবিক ব্যবহারিক পেশাগত অনুশীলনে। এ শিক্ষার কোন শেষ নেই। বিজ্ঞ হবার এ পথ থামবে মৃত্যু বা অবসর গ্রহণের মধ্য দিয়ে। নিম্ন আদালতের অ্যাডভোকেট তালিকাভূক্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বা হাইকোর্টের তালিকাভূক্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সংক্রান্তে বার কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলো প্রশংসনীয় হলেও কিছু বিষয় সম্পর্কে জনমনে অস্থিরতা, উৎকন্ঠা বা উত্তেজনা কাজ করে। যেমন, বার কাউন্সিল নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা নিতে পারে না। নিম্ন আদালতের একটি এমসিকিউ পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রায় ০৩ (তিন) বছর সময় লেগেছে, এমন উদাহরণও আছে। সেখানে হাইকোর্টে নতুন করে এমসিকিউ যোগ করে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়াকে আরো দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে কিনা? সে বিষয়ে সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে উৎকন্ঠা তৈরী হয়েছে। নানাধরণের পরীক্ষার বেড়াজালে না জড়িয়ে, সময় ক্ষেপন না করে, আইনজীবীদের পেশাগত মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে আইনজীবী প্রশিক্ষণ কর্মশালার মতো কার্যকর কার্যক্রম কেন নেওয়া হচ্ছে না? সে বিষয়ে সাধারণ আইনজীবীর একটি প্রত্যাশা লক্ষ্য করা যায়।
এক সময় বার কাউন্সিলের অধীনে পেশায় নবীন- প্রবীণ সকল আইনজীবীদের জন্য পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ওয়ার্কশপ করানো হতো। দেশি-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে কোর্স করানো হতো। দেশের ও দেশের বাইরের বিচরক-আইনজীবীরা সেসব ওয়ার্কশপে লেকচার ডেলিভারী দিতেন। অথচ কালের আবর্তনে সেসব কার্যক্রম একেবারে বন্ধ প্রায়। বর্তমান সময়ে পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য বাস্তব ভিত্তিক ওয়ার্কশপ বেশি দরকার বলেই মনে করেন আইন-আদালতে অনুশীলনরত সাধারণ বিজ্ঞ আইনজীবীগণ। জুডিসিয়াল অফিসারদের সরকারিভাবে দেশে ও দেশের বাইরে গিয়ে ওয়ার্কশপ/ট্রেনিং/উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও সাধারণ আইনজীবীদের ক্ষেত্রে এ ধরণের কোন সুযোগ-সুবিধা বা ব্যবস্থা রাখা হয় নি। প্রকৃতপক্ষে, অ্যাডভোকেটশীপ তালিকাভূক্তি পরীক্ষা বা হাইকোর্ট তালিকাভূক্তি পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে একজন আইনের ছাত্রের মেধা যাচাই করা সম্ভব নয় বা একজন আইনের ছাত্রকে ভালো আইনজীবী বানানোও সম্ভব নয়। ভালো আইনজীবী বানানোর জন্য প্রফেশনাল ট্রেনিং/ওয়ার্কশপ/সেমিনার/কোর্স করানোর কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বার কাউন্সিলের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক বার সমিতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বার কাউন্সিল প্রয়োজনে তালিকাভূক্তি পরীক্ষা বাদ দিয়ে আইন পাশ করা শিক্ষার্থীদের সরাসরি অ্যাডভোকেট হিসেবে নিবন্ধন করে পরবর্তিতে সময়ে সময়ে ওয়ার্কশপ/ট্রেনিং/সেমিনার/কোর্স আয়োজন করে এবং উক্ত আয়োজন গুলোতে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আইনজীবীদের পেশার মান উন্নয়ন করতে পারে। এছাড়াও একজন আইনের ছাত্র সদ্য শেষ করা তার শিক্ষাজীবন পার করে, পেশাগত জীবনে প্রবেশের শুরুতে বার কাউন্সিল প্রণীত পরীক্ষা সমূহে অংশ নিতে যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা বিজ্ঞ সিনিয়রের অধীনে থেকে উপার্জন করে দেয়া সম্ভব নয়। তৎকারণে, শিক্ষানবিশরা পেশাগত ইথিকস্ মেনে চলতে পারে না। পেশাগত জীবনের একেবারে শুরুতে শিক্ষানবিশদের বার কাউন্সিল পরীক্ষার ফি বহন করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। যার কারণে, শিক্ষানবিশরা ব্যক্তিগতভাবে মামলা মোকদ্দমা গ্রহণ করে অনৈতিক লোভের বশবর্তী হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে বার কাউন্সিল পরীক্ষার ফি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এসে বা পরীক্ষার ফি এর ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি অনুদান গ্রহণ করে শিক্ষানবিশদের তালিকাভুক্তির পথ সুগম-মসৃণ করতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অ্যাডভোকেটশীপ তালিকাভূক্তি পরীক্ষা নিয়মিত ভাবে বছরান্তে গ্রহণ করা। পাশ করা আইনের ছাত্র দীর্ঘদিন ধরে তালিকাভুক্তি পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে থাকতে থাকতে প্রফেশনাল ইথিকস্ ভুলে গিয়ে টাউট প্রকৃতির কাজ করতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে সনদ পরীক্ষা জট লেগে থাকার কারণে আদালতের ও আঞ্চলিক বার গুলোর শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। শিক্ষানবিশরা পারিবারিক ও আর্থিক চাপে পড়ে লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন চাকুরী-ব্যবসা করে বা প্রবাসে পাড়ি জমায়। তাই, অ্যাডভোকেটশীপ তালিকাভুক্তি পরীক্ষা নিয়মিতভাবে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়াটা বেশি জরুরী বলে মনে করি। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার যে মহান উদ্দেশ্যে আইন ও আদালতের উৎপত্তি হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায়, সে মহতী উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল গঠিত হয়েছে, তার সবটুকু পূরণ হোক। আইনের জগতে বিদ্যমান বার-বেঞ্চের সাথে জড়িত যোদ্ধার জয় হোক। জয় হোক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের। একে অন্যের হাত ধরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বিনির্মাণ হোক সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।
লেখক: অ্যাডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ