কাজী হেলাল উদ্দিন:
এক সময় সমাজে একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, নারীরা আইনজীবী হতে পারবেন না। এই ভুল ধারণাটা ভারতীয় উপ মহাদেশে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, সে সময় কেউ হয়ত স্বপ্নেও কল্পনা করতনা যে, একজন নারী আইনজীবী হতে পারেন।
ব্রিটিশরা ভারতে আসার পূর্বে আমাদের এই উপমহাদেশে কোন নারী আইন পেশায় এসেছিলেন কিনা তা এখনো জানি যায়নি। তবে ব্রিটিশরা ভারতে আসার অনেক পরে বিস্তর বাধা বিঘ্ন পার হয়ে একজন নারী আইন পেশায় এসেছিলেন, সে কথায় পরে আসছি।
ব্রিটিশরা ভারতে আসার পর থেকে অন্যান্য আইনের পাশাপাশি আইনজীবী বা আইন পেশার জন্য বিভিন্ন আইন প্রবর্তন করতে থাকে। ১৭৭৪ সনের রাজকীয় সনদেও আইন পেশা সম্বন্ধে বলা হয়। পরবর্তীতে ১৭৯৩, ১৮৪৬, ১৮৫৩, ১৮৭৯ খ্রিঃ আইনজীবী বা আইন পেশা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন পাশ হয়। এই আইন গুলির মাধ্যমে আইনজীবী বা আইন পেশাজীবীদের আইনের সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন চলতে থাকে।
এই সকল আইনের কোথাও এমন কথা লেখা ছিল না যে, নারীরা আইন পেশায় আসতে পারবেন না। কিন্তু তখন শুধু মাত্র পুরুষরা আইন পেশায় আসতেন। সমাজের গভীরে এই ধারণাটা ছিল যে, আইন পেশায় নারীরা আসতে পারবেন না।
তখনকার ইংরেজ আইনজ্ঞরা বিষয়টি সম্যক উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই শুধু মাত্র সামাজিক এই ভুল ধারণা বা সংস্কার দূর করার জন্য ১৯২৩ সনের এপ্রিল মাসের ২ তারিখে একটি আইন পাশ হয়। এই আইনটি ছিল, The Legal Practitioners (women) Act, 1923. (১৯২৩ সনের ২৩ নং আইন)।
এই আইনের প্রথমেই বলা হয়, An Act for the removal of doubts regarding the rights of women to be enrolled and practice as legal practitioners. Whereas it is expedient to remove certain doubts which have been arisen as to the rights of a woman to be enrolled and to practice as legal practitioners;
এই আইনটির প্রারম্ভিক পাঠ করলেই বোঝা যায়, “নারীরা আইনজীবী হতে পারবেন না” সমাজের এই ভুল ধারণা বা সন্দেহ দূর করার জন্য এই আইনটি প্রবর্তন করা আবশ্যক হয়েছিল।
আইনটির ৩ নং ধারায় বলে দেওয়া হয়, ব্রিটিশ ভারতের কোথাও যদি এমন কোন আইন বা নিয়ম থেকে থাকে যা নারীদের আইনজীবী হওয়ার জন্য বাধা স্বরূপ, তা হলে সেই আইন বা নিয়ম বাতিল হবে। শুধু মাত্র সমাজের একটি ভুল ধারনা বা সন্দেহ দূর করার জন্য এই আইন প্রবর্তন করা হয়।
এই আইন পাশ হওয়ার পূর্বেই যে একজন ভারতীয় নারী আইন পেশায় এসেছিলেন, তিনি হলেন কর্ণেলিয়া সরাবজি। তিনি ১৮৯৯ সনে এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে ওকালতি সনদের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এর পর সময়ের পরিক্রমায় নারীরা আইন পেশায় আসতে থাকেন।
আমাদের সমাজে এমন অদ্ভুত ধারনা এখন আর নেই। তবুও বাংলাদেশের আইন পেশাজীবীদের মূল ভিত্তি “দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ২৮ এ পরিষ্কার করা হয়েছে যে, No woman shall be disqualified for admission to be an advocate for reason of her sex”.
নারীরা আইনজীবী হতে পারবেন না এই প্রাচীন ধারনা অনেক আগেই দূর হয়েছে। এখন নারী পুরুষ সমান তালে আইন পেশায় এগিয়ে যাচ্ছেন।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট