আইন কমিশনের প্রথম নারী চেয়ারম্যান বিচারপতি জিনাত আরা
বিচারপতি জিনাত আরা

আপিল বিভাগের দ্বিতীয় নারী বিচারপতি জিনাত আরাকে বিদায়ী সংবর্ধনা

আপিল বিভাগের দ্বিতীয় নারী বিচারপতি জিনাত আরাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) প্রধান বিচারপতির কোর্টে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বক্তব্য দেন।

এ সংবর্ধনার জবাবে বিচারপতি জিনাত আরা বলেন, ৪১ বছরের বেশি কর্মজীবন শেষে আজ অবসরে যাচ্ছি। শেষের কয়েকটা মাস মনে হচ্ছিল দ্রুত সময় কেটে গেলেই আমার মুক্তি। কিন্তু আজ মুক্তির স্বস্তি থাকলেও বিচারাঙ্গণ থেকে সবাইকে ছেড়ে যেতে যে বিষণ্নতা কাজ করছে তা অস্বীকার করি কি করে?

নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিচারপতি জিনাত আরা বলেন, ‘আমি ঢাকা কোর্টে নারী মুনসেফ হিসেবে প্রথম যোগ দিই। আমার পূর্বে ঢাকায় কোনো নারী বিচারক না থাকায় আমার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়। শত শত লোক প্রতিদিন কোর্টে আমাকে দেখতে আসত। পুরান ঢাকায় কেউ এলে সুযোগ পেলেই কোর্টে আমাকে একনজর দেখতে যেত। এমন পরিস্থিতিতে বিচারকার্য সঠিকভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে কোর্টে মানুষের ভিড় কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল আমি হাইকোর্ট বিভাগে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করি। ওইদিন আমার মন ছিলো বিষণ্নতায় ভরা। আমার বাবা এর মাত্র তিনমাস আগে ২৭ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছিল আমি বিচারপতি হচ্ছি। আমার বাবা আমাকে বিচারপতি হিসেবে দেখার জন্য উন্মুখ ছিলেন। অথচ দেখে যেতে পারেননি। প্রসঙ্গত বিচারপতি জিনাত আরার বাবা হাফেজ মোহাম্মদ রইস উদ্দিন সিদ্দিকী জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন।

বিচারপতি জিনাত আরা

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বিচারক ও আইনজীবীদের ওপর সমানভাবে বর্তায় বলে মনে করেন বিচারপতি জিনাত আরা। আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আইনজীবীদের সার্বিক সহযোগিতা ব্যতীত বিচারকার্য সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। দেশের সুপ্রিম কোর্টসহ সব অধস্তন আদালতের বিচারকদের স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করার নেপথ্যে আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আপনাদেরই পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। দলমত–নির্বিশেষে বিচারপ্রার্থী জনগণকে সহায়তা করতে হবে। আশা করব, আপনারা দলমত-নির্বিশেষে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। বিচার বিভাগের প্রতি যেন জনগণের আস্থার সংকট না হয়, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি যেন সমুজ্জ্বল থাকে, আইনজীবীরা সে ব্যাপারে সব সময় সজাগ থাকবেন। মনে রাখবেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করার মূল দায়িত্ব আমাদেরই।’

আগামী ১৪ মার্চ এ বিচারপতির ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু ওই সময়ে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিচারপতি জিনাত আরা আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া দ্বিতীয় নারী বিচারপতি। তিনি বিএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর মুন্সেফ (সহকারী জজ) হিসেবে বিচার বিভাগে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে জেলা ও দায়রা জজ হন।

পরবর্তীকালে ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পরে তিনি স্থায়ী হন। এরপর ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ পান।