তানজিম আল ইসলাম:
বিশ্বব্যাপি করোনায় এখন বিপর্যস্ত অবস্থা। বাংলাদেশে করোনার আঘাতে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি আমরাও। এ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পড়তে শুরু করছে মন্দা। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যারা ফ্রিল্যন্সার এবং মুক্তপেশার মানুষ। আইনজীবীরাও মুক্ত পেশার মানুষ। আইন সেবামূলক পেশা হলেও এটি ব্যক্তি বিশেষ দৈনন্দিন আয়নির্ভর পেশা এবং সম্পূর্ণভাবে জনসম্পৃক্তমূলক পেশা। করোনার প্রভাবে দেশে অধস্তন আদালতের কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে ছুটি চলছে এবং এ ছুটি বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বাভাবিক ভবেই আদালত বন্ধ থাকলে এর একটি বিরূপ প্রভাব আইনজীবীদের আয়ের উপর পড়ে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বিচারপ্রার্থীরা আইনজীবীদের কাছে আসছেন না। এমনকি জরুরী কাজও করা যাচ্ছেনা। আইনজীবীরা যেহেতু আদালতের উপর নির্ভর করতে হয় তাই আদালত সীমিত থাকলে আইনজীবীদের জীবিকা নির্বাহে এর প্রভাব পড়েই। সিনিয়র আইনজীবীগণ হয়ত স্বাবলম্বী হওয়ায় অতটা সমস্যার সম্মুখীন না হলেও জুনিয়র আইনজীবীদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এমনিতে বাস্তবতা হচ্ছে জুনিয়র আইনজীবীদের অনেক আর্থিক দীনতায় দিন যাপন করতে হয় তার উপর এমন অবস্থায় দিনাতিপাত করা ভীষণ দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। অনেক চেম্বারে মাসিক ভিত্তিতে জুনিয়ররা সম্মানী পেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিনিয়ররা জুনয়িরদের সম্মানী দেন দিন ভিত্তিক। স্বাভাবিকভাবেই যদি জুনিয়র আদালতে না যেতে পারেন তাহলে সেটুকু সম্মানী থেকেও বঞ্চিত হতে পারে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে একজন জুনিয়র নিজের ব্যয় নির্বাহই দু:সাধ্য হয়ে পড়ে সংসার থাকলে তো বলাই বাহুল্য যে কী পরিমাণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর সিনিয়রগণের আয় কমে গেলে জুনিয়ররাও পাবেন কীভাবে? অনেক বারে অনেক অসুস্থ এবং শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী আইনজীবীও রয়েছেন যারা অন্তত আদালতে হাজির হয়ে দৈনন্দিন কাজগুলো সম্পন্ন করেন। তাদেও জন্য যেন এক খড়গ নেমে আসে।
এমতবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট বারসহ দেশের সব আইনজীবী সমিতিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণত আইনজীবীদের কল্যাণে যে তহবিল থাকে বা বেনিভোলেন্টফান্ড তা জীবিত অবস্থায় প্রাপ্ত হন না। এছাড়া কোন আপদকালীন ফান্ডেরও ব্যবস্থা নেই। এখন করোনার এ দুর্বিসহ সময়ে সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতিসহ অন্যন্য জেলাবরাগুলো আইনজীবীদের কল্যাণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। বারসমিতিগুলো অনতিবিলম্বে বেনিভোলেন্টফান্ড থেকে যার যার প্রাপ্য হিসাব থেকে একটি অংশ আপদকালীন ভাতা হিসেবে প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে। এর অতিরিক্ত কারও প্রয়োজন হলে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি বারেই নির্বাচনের আগের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নির্বাচিত হওয়ার পর কথাগুলো যেন ব্যথা হয়ে দাঁড়ায়! সুপ্রিম কোর্ট বারেও কোন আপদকালীন ব্যবস্থায় কোন ফন্ডের প্রচলন করেন নি কেউই। কোন আইনজীবী অসুস্থ হয়ে গেলে জীবিত অবস্থায় সে কোন সাহায্য পায়না, কোন নজীর আছে কিনা জানা নেই। অথচ আমার মতে জীবিত অবস্থাতেই নির্দিষ্ট মেয়াদ পরপর একজন আইনজীবীকে তার বেনিভোলেন্ড ফান্ড থেকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। মরার পরে টাকা তার উত্তরাধিকারীরা পাবে সেটি বিবেচ্য নয়। তাই অনতিবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতিসহ সকল বারের নেতৃবৃন্দসহ নীতিনীর্ধারকদের কাছে নিবেদন দয়া করে করোনার এ ক্রান্তিকালে গঠনমূলক চিন্তা করে প্রতিটি আইনজীবী সদস্যের জন্য আপদকালীন ভাতার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে ঋণ প্রদান করুন। এ ভাতা কিন্তু একজন আইনজীবীর মাসিক চাঁদা এবং ওকালতনামা ক্রয়ের টাকা হতেই প্রাপ্য হবেন। যে ভাতা পাবে সে ভাতা পরবর্তীতে সামঞ্জস্য করে নিলেই হয়। এছাড়া বর্তমানে যে মাসিক চাঁদা দিতে হচ্ছে কেউ দেরীতে দিলে বিলম্ব ফিও মওকুফ করা হোক। এমনকি বার কাউন্সিলও তহবিল নিয়ে একই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বারের নির্বাচিত নেতাদের কাছে সবিনয়ে নিবেদন সকল আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করার এখনই সুযোগ। আইনজীবীদের দুর্দিনে এগিয়ে আসুন। আইনজীবীদের সবাই প্রতিষ্ঠিত নয় এবং বারের সদস্যদেরও বেশিরভাগই জুনিয়র আইনজীবী বিষয়টি আপনাদের আমলে আনতেই হবে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট