প্রিয়াংকা মজুমদার: মনে করুন, আপনি নিজের মেধা খাটিয়ে একটা কিছু উদ্ভাবন করেছেন, যা একেবারেই নতুন আপনার আগে কেউ এমন কিছু উদ্ভাবন করেনি। ধরে নিন, আপনি শ্যাম্পুর কোন নতুন ফর্মুলা উদ্ভাবন করেছেন যা ব্যাবহার করলে খুব দ্রুত চুল পরা অবিশ্বাস্য ভাবে কমে যাবে। আপনি এই শ্যাম্পু উদ্ভাবন করে বাজারে ছাড়লেন এবং বেশ সাড়াও পেলেন। কিছুদিন পরে আপনারই এক প্রতিবেশী আপনার আইডিয়া নকল করে অন্য নাম দিয়ে একই শ্যাম্পু বাজারে ছাড়লো এতে আপনার যে লোকশান হবে, মার্কেটে আপনার কম্পিটিশন বেড়ে যাবে, আরো অনেকে একই রকম শ্যাম্পু বানিয়ে বাজারে ছাড়তে চাইবে। এতে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আপনি ভাবছেন ভুল টা কোন যায়গায় হলো। সহজ উত্তর হলো আপনি আপনার উদ্ভাবন শ্যাম্পুর নতুন ফর্মুলার পেটেন্ট করাতে ভুলে গেছেন। আজ যদি আপনি পেটেন্ট করাতেন, না ওই প্রতিবেশী, না অন্যান্য আরো অনেকে আপনার উদ্ভাবন কপি করতে পারতো। পেটেন্ট আপনার উদ্ভাবন কে কপি না হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়।
আসুন জেনে নেই আরো বিস্তারিত:
পেটেন্ট কি:
পেটেন্ট হল বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (Intellectual Property)।
পেটেন্ট একটি একচেটিয়া অধিকার যা উদ্ভাবককে তার নতুন উদ্ভাবনের জন্য স্বীকৃতি হিসেবে দেয়া হয়৷ এটি উদ্ভাবকের স্বত্বের অধিকার যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেয়া হয়। উদ্ভাবন বলতে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান বোঝায়। উদ্ভাবন টি হতে পারে কোন পণ্য, কোন কিছু সম্পন্ন করার নতুন কোন পদ্ধতি বা কোন সমস্যার কারিগরি সমাধান দেয়া। পেটেন্ট তার উদ্ভাবককে এই নিশ্চয়তা দেয় তার অনুমতি ব্যতিত কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবে না।
পেটেন্ট লাভের শর্ত:
পেটেন্টের অধিকার লাভ করতে গেলে প্রধানত ৩ টা শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন
১) উদ্ভাবনটিকে অবশ্যই নতুন হতে হবে থাকতে হবে অভিনব উপাদান ও আনকোরা বৈশিষ্ট্য।
২) উদ্ভাবন টির বাস্তবিক ব্যবহার থাকতে হবে। যা উদ্ভাবনের পর কোন কাজেই লাগবে না তার পেটেন্ট হবে না।
৩) উদ্ভাবনের বিষয়বস্তু পেটেন্ট যোগ্য বলে স্বীকৃত হতে হবে। প্রকৃতিতে পাওয়া জিনিসের পেটেন্ট হয় না।
পেটেন্টের সুবিধা:
একজন উদ্ভাবক অনেক কস্ট ও পরিশ্রমের পর নতুন কিছু আবিস্কার করেন এই ভেবে যে ইহা জনকল্যাণে কাজে লাগবে। তার অনুমতি ব্যাতিত যদি কেউ এটি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করে তাহলে উদ্ভাবন মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু পেটেন্ট সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে এই নিশ্চয়তা পান তার উদ্ভাবিত জিনিসে শুধু তারই অধিকার রয়েছে, অন্য কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবেনা। যেহেতু পেটেন্টের মাধ্যমে তিনি সুরক্ষা পান ফলে তিনি আরো নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য উৎসাহিত হন।
পেটেন্টের অসুবিধা:
পেটেন্ট সুবিধা না নিলে অন্য কেউ ইচ্ছামত ব্যবহার করবে এতে উদ্ভাবকের শ্রম ও সুনাম নস্ট হয়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তিনি।
পেটেন্ট লাভের বা রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতি:
যে কোন ব্যাক্তি নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে পেটেন্ট দাখিল করতে পারেন। পণ্য বা পদ্ধতির উদ্ভাবনকারী ও তার আবেদনকারী একই ব্যক্তি হলে নির্ধারিত Form-1 এর মাধ্যমে পেটেন্ট দরখাস্ত করতে হয়। আবেদনকারীকে দরখাস্তের সাথে পণ্য বা পদ্ধতির সমুদয় বর্ণনা এবং কোন দাবী থাকলে তা নির্ধারিত ফরমে জমা দিতে হয়। পণ্য বা পদ্ধতির বর্ণনার সাথে Drawing, Plan, Diagram থাকলে সেটি ও প্রদান করতে হয়। পেটেন্ট জমা দেয়ার পর স্বীকৃতিপত্র (receipt) দেয়া হয়। পেটেন্ট আইন অনুসারে ১৮ মাসের মধ্যে পেটেন্ট গ্রহনের বা দরখাস্ত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পেটেন্ট গ্রহন করা হলে পেটেন্ট সীল করার জন্য Form-8 এর মাধ্যমে নির্ধারিত ফিস দিতে হয়। গৃহীত পেটেন্ট দরখাস্ত বাংলাদেশ গেজটে প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। গেজেট প্রকাশের চার মাসের মধ্যে কোন বিরোধিতা দরখাস্ত দাখিল না হলে মূল পেটেন্ট সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
পেটেন্টের মেয়াদ:
বাংলাদেশের পেটেন্ট ও ডিজাইন আইন ১৯১১ অনুযায়ী পেটেন্টের মেয়াদের সময়সীমা, তার তারিখ থেকে ষোল বছর এবং নবায়ন করতে হয় চার বছর পর।
লেখক- আইনজীবী, ফেনী জজ কোর্ট।