এইচ. এম. মুনতাসীর রোমেল: কোর্ট ম্যারিজ (Court Marriage) লোকমুখে অতি প্রচলিত একটি ধারণা। সাধারণ মানুষ কোর্ট ম্যারিজ বলতে যা বোঝে, প্রকৃতপক্ষে কোর্ট ম্যারিজ আসলে তা নয়। এই ধারণাটি একটি অস্বার্থক নাম (Misnomer) নিয়ে বিকাশ লাভ করেছে ।
কোর্ট ম্যারিজ কী? এর আইনগত ভিত্তি ও ফলাফলই বা কী? এর কোনো প্রায়োগিক উপযোগিতা আছে কী? এই বিষয়গুলো এখানে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
কোর্ট ম্যারিজ কী?
সাধারণ মানুষ কোর্ট ম্যারিজ বলতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কোর্টে বিবাহ সম্পন্ন হওয়াকে বোঝে থাকে। বাস্তবে কোর্টে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রচলিত অর্থে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে, হলফনামার মাধ্যমে তাদের দ্বারা এমন ঘোষণাকেই কোর্ট ম্যারিজ বলে। এই হলফনামা আবার ২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারি পাবলিক করে বা প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। দেখা যায়, উক্ত ধারণাটি যদি কোর্ট ম্যারিজ না হয়ে বিয়ের ঘোষণা নামে বিকাশলাভ করতো, তাহলে অতটা ভ্রান্তির সৃষ্ট হতো না।
আইনগত ভিত্তি (Legal Basis)
কোর্ট ম্যারিজের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। অর্থাৎ হিন্দু আইন, মুসলিম আইন বা প্রচলিত অন্য কোনো আইনেই কোর্ট ম্যারিজের কোনো বিধান নেই। এ ধরণের ম্যারিজের ঘোষণাকে বৈধ বিয়ে হিসেবে গণ্য করা হয় না।
আইনগত ফলাফল (Legal Consequences)
যেহেতু কোর্ট ম্যারিজের আইনের দৃষ্টিতে কোনো ম্যারিজই নয়, ফলে এর আইনগত ফলাফলও শুন্য। অর্থাৎ একটি বৈধ বিবাহের ফলে যেসব দায়িত্ব ও অধিকারের সৃষ্টি হয়, কোর্ট ম্যারিজের ক্ষেত্রে তা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোর্ট ম্যারিজকে বৈধ ম্যারিজ হিসেবে ধরে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী যদি বসবাস শুরু করলে-
১. সন্তান হলে তা আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ হবে;
২. স্ত্রী দেন মোহর, ভরণপোষন পাওয়ার অধিকারী হবে না;
৩. স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হতে পারবে না;
৪. দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা করার কোনো সুযোগ থাকবে না ইত্যাদি।
প্রায়োগিক উপযোগিতা (Practical Utility)
কোর্ট ম্যারিজ স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই প্রভাবমুক্ত সম্মতির প্রমাণ বহন করে । ফলে পরবর্তীতে কন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ বা অন্য কোনো ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে বরপক্ষের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে।
কোর্ট ম্যারিজ করে ফেললে কী করবেন?
আইনানুযায়ী কাজীর মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন না করে, আগে কোর্ট ম্যারিজ করে ফেললে উক্ত ম্যারিজের সাথে দিন বা তারিখের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজীর মাধ্যমে পরে বিয়ে করলে কোন সমস্যা থাকবে না।
শেষ কথা
কাবিননামা-ই বিয়ের মূল প্রমাণ। কোর্ট ম্যারিজ হলো হলফনামার মাধ্যমে উক্ত বিয়ের ঘোষণামাত্র! আইনানুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন করে কেউ যদি উক্ত বিয়ের অতিরিক্ত প্রমাণ হিসেবে হলফনামার মাধ্যমে ঘোষণা দিতে চাইলে আইনগত কোন বাঁধা নেই।
লেখক- অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।