মো. জিয়াউর রহমান :
সূচনা: প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সারা বিশ্বের মৃত্যুদন্ডের পরিসংখ্যান ও বিশ্ব প্রবণতা (Global Trends) নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। এবারও তারা এমন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে (২১ এপ্রিল, ২০২০) যাতে ২০১৯ সনের জানুয়ারী হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুদন্ডের ডাটা রয়েছে। মৃত্যুদন্ড নিয়ে এ্যমনেস্টির পরিসংখ্যান সারা বিশ্বে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হিসাবে ধরা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ সন হতে প্রতি বছর পৃথিবীতে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের হার পূর্বের চেয়ে ধারাবাহিক ভাবে কমছে। ২০১৮ সনে যেখানে পৃথিবীতে ৬৯০ টি মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছিল, সেখানে ২০১৯ সনে ৬৫৭ টি মৃত্যদন্ড কার্যকর হয়েছে। এই সংখ্যা গত ১০ বছরের মধ্যে কম। আর ২০১৮ সনের চেয়ে ২০১৯ সনে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের হার ৫% কম। বাস্তবে কিন্তু এই সংখ্যা দ্বিগুনের বেশী। প্রকৃতপক্ষে সারা বিশ্বে যতগুলো মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়, এককভাবে চায়না তার চেয়ে বেশী মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে এবং তা কম করে হলেও ১০০০(+)। কিছু রাষ্ট্রে গোলযোগের কারণে সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, যেমন সিরিয়াতে। আবার, গোপনীয় নীতির কারণে সব দেশের পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় না। চায়না সহ কিছু রাষ্ট্র মৃত্যুদন্ড সংক্রান্ত পরিসংখ্যান State Secret হিসেবে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে চায় না। তার মানে, ২০১৯ সনে সবমিলে সারা পৃথিবীতে ১০০০(+) + ৬৫৭= কমপক্ষে ১৬৫৭(+) টি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। রিপোর্টে যেসব দেশের নামের পাশে + ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ মৃত্যুদন্ড ঘোষণা হয়েছে, তবে ঠিক কত তা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে জানা যায়নি৷ আর যেখানে কোন সংখ্যার পর + ব্যবহার করা হয়েছে, এর মানে কমপক্ষে সেই সংখ্যা, তার বেশীও হতে পারে। চীনের বাইরে ইরান, ইরাক, সৌদি আরব মৃত্যুদন্ড কার্যকরে এগিয়ে আছে। এ্যমনেস্টির মতে, এসব দেশে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে মৃত্যুদন্ড ব্যবহৃত হতে পারে। উল্লেখ্য, গত বছর সারা বিশ্বে ৫৬ টি দেশে ২৩০৪ টি মৃত্যুদন্ডের শাস্তি ঘোষিত হয়েছে যা তার আগের বছরের চেয়ে কম (২০১৮ সনে ২৫৩১)। ২০১৯ এর শেষ নাগাদ সারা পৃথিবীতে মৃত্যুদন্ড পাওয়া সর্বমোট বন্দী ২৬৬০৪ জন। বিশ্বে তিন ভাগের মধ্যে দুই ভাগের বেশী রাষ্ট্রে মৃত্যুদন্ড নেই (Abolitionist)। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার হার ধীর গতিতে হলেও কমছে। এই লেখার উদ্দেশ্য মৃত্যুদন্ডের পক্ষে বা বিপক্ষে কোন যুক্তি উপস্থাপন নয়, বরং ডাটা ভিত্তিতে সারাবিশ্বের প্রবণতা (world trends) ও বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণ করা।
২.১ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশ ২০১৯ সনে ২ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে, নতুন করে মৃত্যুদন্ড পেয়েছে আরও ২২০ জন। এর মধ্যে ১৪ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (ICT) কর্তৃক এ দন্ডাদেশ পায়। সবমিলে ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে দিনাতিপাত করছে ১৭১৮+ জন বন্দী। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ২০১০ সনে ৯ জন, ২০১১ সনে ৫ জন, ২০১২ সনে ১ জন, ২০১৩ সনে ২ জন, ২০১৫ তে ৩ জন, ২০১৬ তে ১০ জন, ২০১৭ তে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে। ২০১৪ ও ২০১৮ সনে বাংলাদেশ কোন মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেনি। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সর্বশেষ ১৯৩৭ সনে একজন নারীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলেও তারপর আর কোন নারীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়নি। সে হিসেবে বাংলাদেশকে আংশিক রহিতকারী (Partly Abolitionist) ও বলা যেতে পারে।
২.২ রাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক সংগঠন ভিত্তিক পরিসংখ্যান: ২০১৯ সনে জাতিসংঘের ১৯৩ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ২০ টি রাষ্ট্র মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। আমেরিকার ৩৫ টি দেশের মধ্যে শুধু USA মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। তবে, USA এর প্রতিটি স্টেট মৃত্যুদন্ড বিষয়ে আলাদা আলাদা অবস্থান বজায় রাখে। স্টেটসগুলোর মধ্যে ২১ টি স্টেটসে মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ। কমনওয়েলথ ভুক্ত ৫৪ টি দেশের মধ্যে ৪ টি দেশ- বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর এবং বোতসোয়ানা মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। ASEAN এর ১০টির মধ্যে ২ টি- সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। আরবলীগ এর ২২ টির মধ্যে ৮ টি রাষ্ট্র- বাহরাইন, ইজিপ্ট (মিশর), ইরাক, সৌদি আরব, সিরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন গত বছর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন এর ৫৫ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ৫ টি রাষ্ট্র- বোতসোয়ানা, ইজিপ্ট, সোমালিয়া, সাউথ সুদান এবং সুদান মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। OSCE এর ৫৭ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ২ টি- বেলারুশ ও USA মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে।
২.৩ অঞ্চল ভিত্তিক পরিসংখ্যান: এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের রিপোর্টে সারা বিশ্বকে ৫ টি আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে ভাগ করেছে আলোচনা করেছে।
ক. আমেরিকাঃ এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শুধু মাত্র USA ২০১৯ সনে ২২ টি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। ২০১৮ সনে কার্যকর করেছিল ৪৫ টি। বর্তমানে USA এর ২১ অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ। উল্লেখ্য, শতাব্দীর শুরুতে (২০০০ সনে) USA এতে মাত্র ৮ স্টেটসে মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ ছিল। যেগুলোতে চালু আছে, সে সব রাজ্যের মধ্যে কেউ লেথাল ইনজেকশনের মাধ্যমে (যেমন- ফ্লোরিডা) এবং কেউ বৈদ্যুতিক শক এর মাধ্যমে (যেমন-টেনেসি) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে। বর্তমানে USA তে ২৫৮১ মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী (Death Row Convict) আছে। এই গেল মার্চ মাসে (২০২০) কলারেডো মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ করেছে। Death Penalty Information Centre এর ধারনা মতে, USA এর মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের মধ্যে গড়ে ২৫ জনের কমপক্ষে ১ জন নির্দোষ। কিছু ক্ষেত্রে USA তেও International Fair Trial Standards মানা হয়নি দাবী করে এ্যমনেস্টি।
খ. এশিয়া প্যাসিফিক: এ অঞ্চলেই বিশ্বের বেশিরভাগ মৃত্যুদন্ড বহালরাখা (Retentionist) দেশের অবস্থান। ২০১৯ সনে এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশী মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে চীন। এ বিষয়ে চীনের তথ্য State Secret গণ্য করা হয় বলে এ্যমনেস্টি সংখ্যা বলেনি, তবে সারা বিশ্বের সব দেশ মিলে যত মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়, এককভাবে চীনে তার চেয়ে বেশী কার্যকর করে। চীনে মৃত্যুদন্ড পাওয়া বেশীর ভাগ আসামী হত্যা এবং ড্রাগ এর জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়। চায়নাতে শাস্তির হার কমকরে ৯৯.৫%, মাঝেমধ্যে ভুল বিচারের (wrongful conviction) ঘটনাও প্রকাশ পায়। গতবছর কানাডিয়ান এক নাগরিককে পুনঃবিচারে মৃত্যুদন্ড দেওয়ায় এবং উইঘুর এর Xinjiang University এর President কে Separatism চার্জে Suspended Death Sentence দেওয়ায় চায়নার বিরুদ্ধে বিচারকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যবহারের অভিযোগ আছে। চায়নার পর এ অঞ্চলে পাকিস্তানের অবস্থান। তারা ২০১৯ সনে কম করে ১৪+ টি মৃত্যদন্ড কার্যকর করেছে, নতুন মৃত্যুদন্ড আরোপ হয়েছে ৬৩২+ জনের, আর সবমিলে কারাগারে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় (Death Row Convict) আছে ৪০০০+ জন। এ অঞ্চলে চীনের পর জনসংখ্যা ও আয়তনে বড় হলেও ২০১৯ সনে ইন্ডিয়াতে কোন মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়নি। নতুন করে ফাঁসির দন্ড পেয়েছে ১০২ জন যার ২৮ জন হত্যার জন্য এবং ৫৪ জন্য Murder Involving Sexual Offences এর জন্য। ইন্ডিয়া ২০১৯ সনে শিশু যৌন অপরাধ আইনে (Protection of Children from Sexual Offences – POCSO) সংশোধন এনে শিশুদের উপর মারাত্মক যৌন নির্যাতন (Aggravated Sexual Assault) কে মৃত্যুদন্ডযোগ্য (Death Eligible Offense) করেছে। সর্বশেষ, ইন্ডিয়া নির্ভয়া রেপ (২০১২) কেসে ২০ মার্চ, ২০২০ মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ৪ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছে। বাংলাদেশ ২০১৯ সনে ২ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে, আর ২২০ জন নতুন করে মৃত্যুদন্ড লাভ করে, যার মধ্যে ১৪ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (ICT) কর্তৃক এ দন্ডাদেশ পায়।
গ. ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া: এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ২০১৯ সনে শুধুমাত্র বেলারুশ ২ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে।
ঘ. মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা: এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ইরান, সৌদি আরব Top Executors। রাজনৈতিক অস্থিরতা মূল কারণ বলছে এ্যমনেস্টি। গত ১৯ সনে ইরান মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে ২৫১+ জনের, যাদের ১৯৬ জনকে হত্যার জন্য, ৩০ জনকে মাদকের জন্য, ১২ জন ধর্ষনের জন্য, ১ জন কে ধর্ষণসহ হত্যার জন্য, ৮ জন সৃষ্টিকর্তার বিরোধীর জন্য [Mohareveh-Enmity Against God], ৬ জন ডাকাতির জন্য, ২ জন রাজনৈতিক অপরাধে, ২ জন দুর্নীতির জন্য, ১ জন কিডনাপ ও রেপ এর জন্য দোষী সাব্যস্ত ছিল। ইরানে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়াদের মধ্যে ১৫ জন নারী ছিলেন। ১৩ টি মৃত্যুদন্ড প্রকাশ্য জনসম্মুখে কার্যকর করা হয়েছে ইরানে । ২০১৯ সনে সৌদি আরবে ১৮৪ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে যার মধ্যে ৬ জন মহিলা। ৮৪ জন মাদকের অপরাধে, ৫৫ জন হত্যার অপরাধে, ৩৭ জন সন্ত্রাসবাদের অপরাধে, ৭ জন ধর্ষণের অপরাধে, ১ জন ডাকাতিসহ রেপের অপরাধে দোষী ছিল। মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া ১৮৪ জনের মধ্যে ৮৮ জন সৌদি নাগরিক, বাঁকিরা বিদেশী।
ঙ. সাব–সাহারান আফ্রিকা: এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সোমালিয়া ও সাউথ সুদান তুলনামূলক বেশী মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে।
৩.১ গত বছর (২০১৯) সবচেয়ে বেশী মৃত্যুদন্ড কার্যকারী দেশ: ২০১৯ সনে ২০ টি দেশে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সবচেয়ে বেশী নিঃসন্দেহে ১. চায়না, তারপরেই ২. ইরান ২৫১+, ৩. সৌদিআরব ১৮৪, ৪. ইরাক 100+, ৫. ইজিপ্ট (মিশর) ৩২+, ৬. USA (যুক্তরাষ্ট্র) ২২, ৭. পাকিস্তান ১৪+, ৮. সোমালিয়া ১২+, ৯. সাউথ সুদান ১১+, ১০. ইয়েমেন ৭ জন। এই শীর্ষ ১০ টি Execution করা দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই। গত ২০১৯ সনে বাংলাদেশে ২ টি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। একটি সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফি হত্যাকান্ডের জন্য।
৩.২ গত বছর সবচেয়ে বেশী মৃত্যুদন্ড ঘোষণাকারী দেশ: ২০১৯ সনে ৫৬ টি দেশে সর্বমোট ২৩০৭টি মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হয়েছে। চীন ও ইরানের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। সেসব দেশের তথ্য পাওয়া যায় তার মধ্যে পাকিস্তান ৬৩২+, ইজিপ্ট (মিশর) ৪৩৫+, বাংলাদেশ ২২০+, ইন্ডিয়া ১০২, জাম্বিয়া ১০১।
৪. মৃত্যুদন্ড বিলোপকারী (Abolitionist) দেশ সমূহ: সারা বিশ্বে কোন ধরনের অপরাধে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখে নেই এমন দেশ ১০৬টি, আর সাধারণ অপরাধে (সেনা আইনে বা বড় অপরাধে বিলোপ করেনি) মৃত্যুদন্ড বিলোপকারী দেশ ৮টি, বিলোপ চর্চারত দেশ (আইনে মৃত্যুদন্ড এখনো আছে, কিন্তু কমপক্ষে গত ১০ বছর কোন মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেনি) ২৮টি।সবমিলে বিলোপকারী ১০৬+৮+২৮= ১৪২টি দেশ৷ বাকি ৫৬টি রাষ্ট্র Retentionist.
৪.১ সম্পূর্ণ বিলোপকারী (Abolitionist for all crime): ১. আলবেনিয়া, ২. এন্ডোরা, ৩. এঙ্গোলা, ৪. আর্জেনটিনা, ৫. আরমেনিয়া, ৬. অস্ট্রেলিয়া, ৭. অস্ট্রিয়া, ৮. আজারবাইজান৯. বেলজিয়াম, ১০. বেনিন, ১১. ভুটান, ১২. বলিভিয়া, ১৩. বসনিয়াএন্ডহার্জেগোভিনা, ১৪. বুলগেরিয়া, ১৫. বুরুন্ডি, ১৬. কেপভারডি, ১৭. কমবোডিয়া, ১৮. কানাডা, ১৯. কলম্বিয়া, ২০. কঙ্গো, ২১. কুকআইল্যান্ডস, ২২. কোস্টারিকা, ২৩. কোতদিভোয়ার (আইভরিকোষ্ট), ২৪. ক্রোয়েশিয়া, ২৫. সাইপ্রাস, ২৬. চেকরিপাবলিক, ২৭. ডেনমার্ক, ২৮. জিবুতি, ২৯. ডমিনিকানরিপাবলিক, ৩০. ইকুয়েডর, ৩১. এস্তোনিয়া, ৩২. ফিজি, ৩৩. ফিনল্যান্ড, ৩৪. ফ্রান্স, ৩৫. গ্যাবন, ৩৬. জর্জিয়া, ৩৭. জার্মানী, ৩৮. গ্রিস, ৩৯. গিনি, ৪০. গিনিবিসাউ, ৪১. হাইতি, ৪২. হলিসি (ভ্যাটিকানসিটি), ৪৩. হন্ডুরাস, ৪৪. হাঙ্গেরী, ৪৫. আইসল্যান্ড, ৪৬. আয়ারল্যান্ড, ৪৭. ইতালি, ৪৮. কিরিবাতি, ৪৯. কিরগিস্থান, ৫০. লাটভিয়া, ৫১. লিসটেনসটেইন, ৫২. লিথুনিয়া, ৫৩. লুক্সেমবার্গ, ৫৪. উত্তরমেসিডোনিয়া, ৫৫. মাদাগাস্কার, ৫৬. মাল্টা, ৫৭. মার্শালআইল্যান্ড, ৫৮. মৌরিসাস, ৫৯. মাক্সিকো, ৬০. মাইক্রোনেশিয়া, ৬১. মলদোভা, ৬২. মোনাকো, ৬৩. মঙ্গোলীয়া, ৬৪. মন্টিনেগ্রো, ৬৫. মোজাম্বিক, ৬৬. নামিবিয়া, ৬৭. নাউরু, ৬৮. নেপাল, ৬৯. নেদারল্যান্ডস, ৭০. নিউজিল্যান্ড, ৭১. নিকারাগুয়া, ৭২. নাইয়ু, ৭৩. নরওয়ে, ৭৪. পালাউ, ৭৫. পানামা, ৭৬. প্যারাগুয়ে, ৭৭. ফিলিপাইন, ৭৮. পোলান্ড, ৭৯. পর্তুগাল, ৮০. রুমানিয়া, ৮১. রুয়ান্ডা, ৮২. সামোয়া, ৮৩. সানমারিনো, ৮৪. সাওটোমে, ৮৫. সেনেগাল, ৮৬. সার্বিয়া, ৮৭. সিসিলিস, ৮৮. স্লোভাকিয়া, ৮৯. স্লোভেনিয়া, ৯০. সলোমনআইল্যান্ড, ৯১. সাউথআফ্রিকা, ৯২. স্পেন, ৯৩. সুরিনাম, ৯৪. সুইডেন, ৯৫. সুইজারল্যান্ড, ৯৬. পূর্বতিমুর, ৯৭. তোগো, ৯৮. তার্কি (তুরস্ক), ৯৯. তুর্কমেনিস্থান, ১০০. টুভালু, ১০১. ইউকে (যুক্তরাজ্য), ১০২. ইউক্রেন, ১০৩. উরুগুয়ে, ১০৪. উজবেকিস্তান, ১০৫. ভানুয়াতুএবং১০৬. ভেনিজুয়েলা।
৪.২ সাধারণ অপরাধে মৃত্যুদন্ড বিলোপকারী দেশসমূহ (Abolitionist for ordinary crime): এ দেশগুলো সাধারণ কোন অপরাধে মৃত্যুদন্ড রাখেনি। শুধুমাত্র সেনা আইনে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন অপরাধে মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। এমন দেশ আছে ৮ টিঃ ১. ব্রাজিল, ২. বুরকিনা ফাসো, ৩. চিলি, ৪. এল সালদাভোর, ৫. গুয়েতেমালা, ৬. ইসরায়েল, ৭. কাজাকিস্তান এবং ৮. পেরু।
৪.৩ বিলোপ চর্চাকারী দেশ (Abolitionist in practice): এসব দেশে মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকলেও গত ১০ বছর কোন মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেনি এবং মনে করা হয়, দেশগুলো মৃত্যুদন্ড বিলোপে একটা অবস্থান (stand) নিয়েছে। এমন দেশ আছে ২৮ টি। ১. আলজেরিয়া, ২. ব্রুনেই দারুসসালাম ৩. ক্যামেরুন, ৪. সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ৫. ইরিত্রিয়া, ৬. সোয়াজিল্যান্ড, ৭. ঘানা, ৮. গ্রানাডা, ৯. কেনিয়া, ১০. লাউস, ১১. লাইবেরিয়া, ১২. মালাওয়ি, ১৩. মালদ্বীপ, ১৪. মালি, ১৫. মৌরিতানিয়া, ১৬. মরোক্কো (Western Sahara), ১৭. মায়ানমার, ১৮. নাইজার, ১৯. পাপুয়ানিউগিনি, ২০. রাশিয়া, ২১. সিয়েরালিয়ন, ২২. দক্ষিণ কোরিয়া, ২৩. শ্রীলংকা, ২৪. তাজিকিস্তান, ২৫. তানজানিয়া, ২৬. টঙ্গা, ২৭. তিউনিসিয়া এবং জাম্বিয়া।
৪.৪. মৃত্যুদন্ড বহালরাখার সপক্ষের (Retentionist) রাষ্ট্রসমূহঃ পৃথিবীতে ৫৬ টি রাষ্ট্র (এক তৃতীয়াংশ) মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছে। বাংলাদেশ Retentionist দেশ। দেশগুলো ১. আফগানিস্তান, ২. এন্টিগুয়া ও বারবুডা, ৩. বাহামাস, ৪. বাহরাইন, ৫. বাংলাদেশ, ৬. বেলারুশ, ৭. বারবাডোজ, ৮. বেলিজ, ৯. বতসয়ানা, ১০. চাদ, ১১. চায়না (পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী মৃত্যুদন্ড কার্যকারকারী দেশ), ১২. কমোরোস, ১৩. কিউবা, ১৪. ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, ১৫. ডোমেনিকা, ১৬. ইজিপ্ট (মিশর), ১৭. ইকুয়াটোরিয়াল গিনি, ১৮. ইথুওপিয়া, ১৯. গাম্বিয়া, ২০. গায়ানা, ২১. ইন্ডিয়া, ২২. ইন্দোনেশিয়া, ২৩. ইরান, ২৪. ইরাক, ২৫. জামেইকা, ২৬. জাপান, ২৭. জর্দান, ২৮. কুয়েত, ২৯. লেবানন, ৩০. লিসোথো, ৩১. লিবিয়া, ৩২. মালয়েশিয়া, ৩৩. নাইজেরিয়া, ৩৪. উত্তর কোরিয়া, ৩৫. ওমান, ৩৬. পাকিস্তান, ৩৭. প্যালেস্টাইন, ৩৮. কাতার, ৩৯. সেইন্ট কিটস এন্ড ভেনিস, ৪০. সেইন্ট লুসিয়া, ৪১. সেইন্ট ভিনসেন্ট এন্ড গ্রিনাডাইনস, ৪২. সৌদি আরাবিয়া, ৪৩. সিঙ্গাপুর, ৪৪. সোমালিয়া, ৪৫. সাউথ সুদান, ৪৬. সুদান, ৪৭. সিরিয়া, ৪৮. তাইওয়ান, ৪৯. তাইওয়ান, ৫০. ত্রিনিদাদ ও টোবাকা, ৫১. উগান্ডা, ৫২. আরব আমিরাত, ৫৩. যুক্তরাষ্ট্র, ৫৪. ভিয়েতনাম, ৫৫. ইয়েমেন, ৫৬. জিম্বাবুয়ে।
৫. মৃত্যুদন্ড কার্যকর পদ্ধতিঃ একেক দেশ একেক ভাবে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে থাকে। কিছু দেশে একাধিক পদ্ধতি বিদ্যমান। যেমন USA- তাদের ২৯ টি স্টেটস মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছে। তার মধ্যে কোন কোন স্টেট Electrocution এবং কোন কোন স্টেটস lethal Injection ব্যবহার করে। চায়নাতে গুলি ও ইনজেকশন- দুটোই চললেও সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যায়, তাদের সর্বোচ্চ আদালত People’s Supreme Court ‘lethal Injection’ কে বেশী মানবিক পন্থা মনে করছে। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোন কোন রাষ্ট্র জনসম্মুখে ফাঁসি কার্যকর করে- যেমন সৌদি আরব, ইরান।
ক. কতল (Beheading): সৌদি আরব
খ. বৈদ্যুতিক চেয়ার (Electrocution): USA
গ. ফাঁসি (Hanging): বাংলাদেশ, বোতসোয়ানা, ইজিপ্ট, ইরান, ইরাক, জাপান, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, সাউথ সুদান, সুদান, সিরিয়া।
ঘ. বিষাক্ত ইনজেকশন (lethal Injection): চায়না, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম।
ঙ. গুলি (Shooting): বাহরাইন, বেলারুস, চায়না, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেন।
৬. মৃত্যুদন্ড বিলোপে আন্তর্জাতিক দলিল সমূহঃ মৃত্যুদন্ড বিলোপে ৪ টি দলিল আছে যার একটি বৈশ্বিক এবং ৩ টি আঞ্চলিক জুরিসডিকসন নিয়ে কাজ করে।
ক. Second Optional Protocol to the International Covenant on Civil and Political Rights, Aiming at the Abolition of the Death Penalty. মৃত্যুদন্ড বিলোপে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৮৯ সনে এই দলিলটি গ্রহন করে। ICCPR এর সদস্য রাষ্ট্র এই দলিলের পার্টি হতে পারবে। এটা মৃত্যুদন্ড সম্পূর্ণ ভাবে বাতিলের আন্তর্জাতিক প্রয়াস। তবে কোন রাষ্ট্র চুক্তি Ratify করার সময় ইচ্ছে করলে যুদ্ধের সময় কার্যকর হবে না মর্মে Reservation রাখতে পারবে। এখন পর্যন্ত ৮৮ টি দেশ এই Optional Protocol এ স্বাক্ষর ও অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশ এখনো এই দলিলের স্টেটপার্টি হয়নি।
খ. Protocol to the American Convention on Human Rights to Abolish the Death Penalty. আমেরিকার দেশগুলোর Organisation of American Penalty. (OAS) ১৯৯০ সনে এই দলিলটি গ্রহণ করে। এটাও বাধ্যতামূলক মৃত্যুদন্ড বিলোপের চুক্তি তবে যুদ্ধের সময় প্রযোজ্য হবে না মর্মে কোন রাষ্ট্র Reservation রাখতে পারে। American Convention on Human Rights এর যে কোন পক্ষ রাষ্ট্র এই দলিলের স্বাক্ষরকারী স্টেটপার্টি হতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ১৩ টি রাষ্ট্র এই প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছে।
গ. Protocol No.6 to the European Convention on Human Rights, Concerning the Abolition of the Death Penalty. কাউন্সিল অফ ইউরোপ ১৯৮৩ সনে এই দলিলটি গ্রহণ করে। এটা শান্তিকালিন সময়ে মৃত্যুদন্ড বিলোপের চুক্তি তবে যুদ্ধ বা আসন্ন যুদ্ধ সময়ে প্রযোজ্য হবে না মর্মে কোন রাষ্ট্র Reservation রাখতে পারে। European Convention on Human Rights এর যে কোন পক্ষ রাষ্ট্র এই দলিলের স্বাক্ষরকারী স্টেটপার্টি হতে পারে। ইউরোপের ৪৬ টি রাষ্ট্র এই প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছে।
ঘ. Protocol No.13 to the European Convention on Human Rights, Concerning the Abolition of the Death Penalty. পূর্বের প্রটোকল ৬ এর ধারাবাহিকতায় কাউন্সিল অফ ইউরোপ ২০০২ সনে এই দলিলটি গ্রহণ করে। যুদ্ধ হোক বা শান্তিকালিন সময় হোক, যে কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যুদন্ড বিলোপের চুক্তি, এখানে কোন Reservation রাখার সুযোগ রাখা হয়নি। European Convention on Human Rights এর যে কোন পক্ষ রাষ্ট্র এই দলিলের স্বাক্ষরকারী স্টেটপার্টি হতে পারে। ইউরোপের ৪৪ টি রাষ্ট্র এই প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছে।
উপসংহার: সারা পৃথিবীতে ১৪২ টি রাষ্ট্রে মৃত্যুদন্ড নেই, মাত্র ৫৬ টি রাষ্ট্র মৃত্যুদন্ডের বিধান বলবৎ রেখেছে। অর্থাৎ ৩ ভাগের ২ রাষ্ট্র মৃত্যুদন্ড উঠিয়ে দিয়েছে। ধীরে হলেও মৃত্যুদন্ড কার্যকরের হারও কমছে। প্রতি ২ বছর পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ Moratorium Resolution নিচ্ছে (২০০৭, ২০০৮, ২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৮)। ২০১৮ সনে ব্রাজিলের প্রস্তাবে সপ্তম বারের মত এমন রেজুলেসন গৃহীত হয়েছে। ২০০৭ সনে ইতালির উদ্যোগে প্রথম রেজুলেসন এ ১০৭ টি রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, আর ২০১৮ সনে ১৭ ডিসেম্বর ১২০ টি রাষ্ট্র পক্ষে ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবারই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। লক্ষণীয় প্রতিবার মৃত্যদন্ড বন্ধের উদ্যোগে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের গৃহীত এই রেজুলেশন এর Persuasive Value অনেক বেশী। সবমিলিয়ে বলা যায়, এখনই হয়তো সারা পৃথিবীতে মৃত্যুদন্ড রহিত হবে না, তবে Trend বলছে, বিলম্ব হলেও মৃত্যুদন্ডহীন পৃথিবীর দিকেই আমরা হাঁটছি।
লেখক– চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মাগুরা।
judgezia@gmail.com