শামসুদ্দিন ইলাহী:
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, এমপি-মন্ত্রীরা বাংলাদেশের হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের উপর ভরসা রাখেন না। তারা ভরসা রাখেন সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড,ইংল্যান্ড, আমেরিকার ডাক্তার এবং হাসপাতালের উপর। যদি আকস্মিক অসুস্থতাবোধ বা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে জরুরী ভিত্তিতে দেশীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় এবং শারীরিক অবস্থা উন্নত হলেই বিদেশে পাড়ি দেয়। বাংলাদেশের সব কয়টি সেক্টরে অত্যন্ত উঁচুমানের ডাক্তার আছেন, সংখ্যায় ও তারা কম নন। কিন্তু বাংলাদেশের সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। ওবায়দুল কাদেরের মতো এত গুরুতর অসুস্থ রোগীকে যেভাবে আমাদের দেশের ডাক্তাররা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন তা অনন্য এক নজির হয়ে থাকবে। এমনকি সিঙ্গাপুরের ডাক্তাররা এসে নিশ্চিত করলেন দেশের ডাক্তাররা সঠিক চিকিৎসাই দিয়েছেন। ভারতের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরকে বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে,যা ইউরোপ, আমেরিকাতে নিলেও সেইম হতো।
সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। মন্ত্রী, আমলারা উপর থেকে সিদ্ধান্ত নেন। বড় বড় সকল অনিয়ম এবং পুকুর চুরি হয় মেডিকেল সরঞ্জাম কেনাকাটায়। কোন হাসপাতালে কি যন্ত্রপাতি লাগবে তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেয়। কেনা হয় ঠিকাদারের ঠিক করে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী। প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটে। কেনাকাটার চাহিদাপত্রে ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর করে দেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার ঠিকাদারের তালিকায় স্বাক্ষর না করায় তাৎক্ষণিকভাবে বদলির শিকার হয়েছিলেন। কারণ ঠিকাদারের শক্তি মন্ত্রণালয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে মন্ত্রী ,আমলা। সরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সংগঠনের নেতারা এবং তারা সরাসরি দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন তখন তাদের পক্ষের সংগঠন হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করেন। মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতারা তাদের ক্ষমতার উৎস।
ডাক্তারদের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম দলীয় রাজনীতি। অন্য পেশাজীবিদের মতো ওরাও সরাসরি দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। অনেক ডাক্তার নেতা তার প্রভাব বিস্তার করার জন্য হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পক্ষে রাখার নীতি অনুসরণ করেন। দলীয় আনুগত্যের কারণে মন্ত্রনালয়ের কোন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনেক সময় অবস্থান নিতে পারেন না ডাক্তার নেতারা। বাংলাদেশে ভালো ডাক্তার আছেন, সংখ্যায় ও অনেক আছেন। ব্যবস্থাপনার সঠিক উন্নয়ন করা গেলে, দেশে উন্নত বিশ্বমানের হাসপাতাল গড়ে তোলা মোটেই কঠিন কাজ নয়। কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থার মূল উপাদান ডাক্তার যা বাংলাদেশে আছে।
স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও মানের সূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ পেছনে। যদিওবা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বেশ কয়েকটা দেশের উপরে বাংলাদেশ অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)এর বৈশ্বিক মূল্যায়নে ১৯৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯ তম।তালিকায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, আফগানিস্তানের চেয়ে ও ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও মান নিয়ে এই বৈশ্বিক মূল্যায়ন করা হয়েছে।
অর্থ বেশি থাকলে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বা মান ভালো হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু চিকিৎসার ব্যয় বছরে ৯ হাজার মার্কিন ডলার, যা পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। অথচ সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৩৬তম।সময় মতো ও কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে এড়ানো সম্ভব এমন ৩২টি মৃত্যুর কারণ এর উপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও মানের সূচক’ নির্ধারণ করেছেন আইএইচএমইর গবেষকরা।
বিশ্বের শীর্ষ মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট এর গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবায় পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে ঢের এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তাদের গবেষণায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩ তম। ভারত রয়েছে ১৪৫ তম স্থানে। তালিকার শীর্ষে অবস্থান করা পাঁচ দেশ হলো, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, ফিনল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে বাংলাদেশের ষাট শতাংশের বেশি মানুষ বছরে বেসরকারি খাতে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু সেখানেও বাণিজ্যিক মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ নেই। তাই সুযোগ সঠিকভাবে না মেলায় আর্থিক খরচে বেসরকারি চিকিৎসা সেবার দিকে ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ।
১৯৮৯ সালে মালয়েশিয়ার সাবেক সফল রাষ্ট্রনায়ক মাহাথির মোহাম্মদের বাইপাস অপারেশনের প্রয়োজন হয়। তখন মালয়েশিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত ছিল না। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আমলারা সবাই চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে চলে যেতেন। মাহাথিরকে ও দেশের বাইরে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে রাজি হয়নি বিধায় দেশের হাসপাতালেই তার সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সে বলেছিল তার দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা করবে। তিনি অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। মালয়েশিয়া এখন চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক এগিয়ে গিয়েছে এবং বিশ্বমানের চিকিৎসাও ঐ দেশে হচ্ছে।
তার সমপর্যায়ের না হলেও আমাদের বাংলাদেশে উদাহরণ দেওয়ার মতো লোক আছে। ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও এদেশে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য থাকার পরেও তিনি বিদেশে চিকিৎসা না করে বাংলাদেশে তার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে চোখের অপারেশন করেছিলেন। সম্প্রতি করোনা পজেটিভ ও তার হাসপাতলে ধরা পড়ে। কেবিন বরাদ্দ থাকার পরেও বাসায় থাকছেন। সে বুঝাতে চেয়েছে তার কেবিনে থাকার মত অবস্থা এখনো হয়নি এবং ঐ কেবিনে যাহাতে অন্য কেহ চিকিৎসা নিতে পারে।
১৯৪৮ সালে মাদার তেরেসা গরীব ও সাহায্যের আশায় থাকা মানুষদের নিয়ে নিজের মিশনারি কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি নিজ উদ্যোগে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার মতিঝিল এলাকায়। তিনি উদ্যোগ নেওয়ার পূর্বে কারোর জন্য অপেক্ষা করেননি। সে অনুভব করতে পেরেছিলেন উদ্যোগ কারোর না কারোর তো ঠিকই নিতে হবে। কারোর আদেশ-উপদেশ এর জন্য বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে নিজ প্রচেষ্টাতেই সফল কাজ শুরু করার জন্য মাদার তেরেসার জীবনী ছিল অন্যতম দৃষ্টান্ত।
এদেশের শিল্পপতিরা যখন নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসে ইউরোপ, আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের মতো বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি করতো, তাহলে এস আলম গ্রুপের পরিচালকের মতো ব্যক্তির চিকিৎসার অভাবে মরতে হতো না। ইতিমধ্যে আরো কয়েকজন শিল্পপতি মারা গেছেন এবং নতুন করে আক্রান্ত ও হয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম সাবেক এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এবং সমকাল ও চ্যানেল 24 এর কর্ণধার একে আজাদ।
এদেশে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে রিয়াজুল আলম লিটনের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না। শত শত রোগী হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যেত না।
দেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি হলে বিদেশ যাওয়া রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কমে আসবে। বছরে শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় ও হবে। ঐ শত শত কোটি টাকা দিয়ে দেশে বিশ্বমানের কয়েকটা হাসপাতাল তৈরি করা কোন ব্যাপারই না। আমাদের এখনই উচিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং দলাদলি বাদ দিয়ে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া।
দেশের চিকিৎসার মান এবং একটি স্থিতিশীল পরিকল্পনা বজায় রাখতে দরকার সুব্যবস্থা। যাতে করে হাসপাতাল বা ক্লিনিক ইচ্ছামত যা খুশি তা করতে না পারে। সঠিক নিয়মকানুন না থাকার কারণে দেশের বেসরকারি কিছু হাসপাতাল চিকিৎসার নামে দিনের পর দিন রোগীকে লাইফ সাপোর্টে রেখে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি অনেক মানুষকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতাল গুলোতে বাংলাদেশের রোগীরাই বেশি ভিড় জমায় এবং বাংলাদেশী রোগীরাই এখন তাদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে উঠে আসে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশত রোগী ভারতে চিকিৎসার জন্য আসেন। যাদের প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী কলকাতার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেন।বাংলাদেশ থেকে অনেক রোগী নির্দিষ্ট অংকের প্যাকেজে ভারতে চিকিৎসা নিতে যান।অথচ পরে দেখা যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে বিল বাড়িয়ে দেয়। আর সেই অতিরিক্ত অর্থ জোগাড় করতে রোগীর স্বজনরা নাকাল হয়ে যায়। এমনকি এসব রোগীরা কোথায় অভিযোগ দায়ের করতে হয় সেটাও জানেনা। মিথ্যা বিল করে অর্থ নেওয়া শুধু অনৈতিক নয়, বেআইনিও।
পশ্চিমবঙ্গের ঐসব অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হাসপাতালগুলোর লাগাম টানতে কড়া আইন তৈরি করা হয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার লক্ষ্য নিয়ে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট (রেজিস্ট্রেশন , রেগুলেশন অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি) বিল ২০১৭ পাশ হয়।তৎকালীন সময়ে পশ্চিমবঙ্গে দুই হাজার ৮৮ টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোম ছিল। তারমধ্যে কলকাতাতেই ছিল ৩৭০টি। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৯৪২ টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোম তদন্ত করে নানা গাফিলতির অভিযোগে ৩৭ টির লাইসেন্স বাতিল করেছিল এবং ৭০ টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। ঐ নতুন আইনে চিকিৎসায় গাফিলতি বা অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে হাসপাতাল ছয় মাসের মধ্যে রোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবে। চিকিৎসায় অনিয়ম বা গাফিলতির কারণে রোগীর সামান্য ক্ষতি হলে তিন লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা, বড় ক্ষতি হলে পাঁচ লাখ এবং রোগীর মৃত্যু হলে দশ লাখ রুপির জরিমানার বিধান রয়েছে। ঐ আইনে জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগী আটকে রাখা যাবে না। এমনকি বিল বকেয়া থাকলেও মৃতদেহ আটকে রাখা যাবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বেসরকারি হাসপাতাল উদ্বোধনকালে বলেছিলেন,বেশি লোভ বা দুঃসাহস কোনটাই ভালো নয়। তিনি আরো বলেন হাসপাতাল কসাইখানা নয়, সেবার জায়গা। ব্যবসা করেন কিন্তু লাভের লোভে লাগামছাড়া হবেন না। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ সময়োপযোগী ও সাহসী। অনেকদিন ধরে অনাচার চলছিল আমরা খুবই অসহায় বোধ করছিলাম।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে পাঁচটি বিষয়ের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে চিকিৎসা। কিন্তু আমরা কি সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছি? বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩০৪(ক)ধারা মতে যখন কোনো রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং চিকিৎসক ঐ রোগীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু সংঘটিত হলে ৩০৪ (ক) ধারার অপরাধ চিকিৎসক কোন ভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। কারণ চিকিৎসকও আইনের ঊর্ধ্বে নন।
চিকিৎসাসেবা রাষ্ট্রের নাগরিকের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হলেও চিকিৎসাসেবায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে চরম অরাজকতা এবং অমানবিকতা। বাংলাদেশ দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস্ এন্ড ল্যাবরেটরীজ(রেজিস্ট্রেশন) ১৯৮২ নামে একটি আইন আছে। এই আইনের চার ধারায় বলা হয়েছে কোন সরকারি চাকুরিতে নিযুক্ত আছেন এমন কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক অফিস চলাকালীন কোন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক বা নার্সিংহোমে প্র্যাকটিস করতে পারবেন না, এবং করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের বিধান লংঘন করা হলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও এর কোন প্রয়োগ নেই।
যেদিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান,মন্ত্রী এবং আমলারা নিজ দেশে থেকে চিকিৎসা করাবেন, সেদিনই এ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের দরজা উন্মোচন হবে। যথাযথ আইনের নীতি প্রয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে ব্যাপনশীলতার অভাব রয়েছে। নিয়মিত তদারকি না থাকায় সেবার অতিরিক্ত মূল্য,চিকিৎসার নামে সম্পূর্ণ মুনাফাভিত্তিক বাণিজ্য হচ্ছে। সময়োপযোগী আইন, চিকিৎসকদের সহযোগিতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগই পারে চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে।
চিকিৎসকরা উচ্চশিক্ষিত মেধাবী সন্তান এবং এই পেশা অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা। সুতরাং তাদের উচিৎ নীতি না হারিয়ে এবং অবহেলায় গা ভাসিয়ে না দিয়ে গণমানুষের সেবা করা।
শামসুদ্দিন ইলাহী: শিক্ষানবিস আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ কোর্ট