ব্যারিস্টার সৌমিত্র সরদার:
এ্যাডভোকেট, পিউপিল ও ক্লার্ক এই তিনজন ব্যক্তিই আইন পেশার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই ত্রয়ী একটি টিম হিসেবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাই তাদের সঠিক ও আইন নির্দিষ্ট পরিচয়টাই কাম্য। কিন্তু সমসাময়িককালে উপরে উল্লেখিত শব্দত্রয়ের বহুমাত্রিক ও ভুল ব্যবহার আইন পেশার জন্য মোটেই সুখকর নয়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। আমরা প্রায়ই “এ্যাডভোকেট” শব্দটা বিভিন্ন ভাবে লিখে থাকি যা সর্ব সাধারনের কাছে ঠিক বোধগম্য নয়। প্রশ্ন জাগতে পারে সঠিক বানানের শব্দ কোনটি? এডভোকেট, অ্যাডভোকেট না এ্যাডভোকেট। বিভিন্ন জায়গায় একই শব্দ বিভিন্ন বানানে উপস্থাপিত হচ্ছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (২)(ক) অনুচ্ছেদে এ্যাডভোকেট’কে “এ্যাডভোকেট” হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। একইভাবে সংবিধানের ১০২ (৪)(খ) অনুচ্ছেদেও এ্যাডভোকেটকে “এ্যাডভোকেট” হিসেবেই লেখা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা ইংরেজি অভিধানে এডভোকেট /অ্যাডভোকেট শব্দদ্বয় সন্নিবেশিত হয়েছে। বাংলাদেশের আইনজীবী সমাজকে নিয়ন্ত্রিত করে যে অর্ডিন্যান্স তার নাম হচ্ছে ” The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order 1972( PO 46 Of 1972) “. কিন্তু এই অর্ডিন্যান্সের কোন অফিসিয়াল বাংলা ভার্সন নেই। সেখানে এ্যাডভোকেট এর সংজ্ঞা ইংরেজিতে দেয়া হয়েছে। পরিশেষে আমার অভিমত হলো যেহেতু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান, তাই পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী বিজ্ঞ আইনজীবীসহ সকলের “এ্যাডভোকেট” লেখাটাই সমীচীন। তাই সবাই যাতে একই বানানে লিখেন এতদবিষয়ে বার কাউন্সিলের আশু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
বিজ্ঞ আইনজীবীগন অনেকেই নিজের পেশাগত কাজের সুবিদার্থে বা আইন পেশায় ইচ্ছুকদের তাদের নিজ নিজ চেম্বারে প্রায়শই কাজ করার সুযোগ প্রদান করেন। এটা একটি চিরাচরিত পদ্ধতি। কিন্তু ইদানীং প্রায়ই একটি ব্যাপার আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন যে এখনো সনদ প্রাপ্ত হননি বা এনরোল্ড হননি এমন ব্যক্তিগণ নিজেদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে “শিক্ষানবিস আইনজীবী ” বা ” Apprentice lawyer/Advocate ” হিসেবে অনবরত পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টা মোটেই সুখকর নয় বরঞ্চ বে-আইনী। The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order 1972 এর ৪০ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বার কাউন্সিল সময়ে সময়ে সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে রুল ( Rule) প্রণয়ন করে গ্যাজেট নোটিফিকেসন দিতে পারে।
The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order 1972 এর অনুচ্ছেদ ২(বি) অনুযায়ী এ্যাডভোকেট হচ্ছে ” Advocate means an advocate entered in the roll under provisions of this order”. সুতরাং বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সনদ প্রাপ্তি ও ” Roll” এ অন্তর্ভুক্তির পূর্বে কেউ নিজেকে এ্যাডভোকেট পরিচয় প্রদান করা বে-আইনী। তাহলে সদ্য আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রিধারী যে সমস্ত তরূন তরুনীগন বিভিন্ন চেম্বারে কর্মরত আছেন তাদের সঠিক পরিচয় কি হবে? “The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Rules 1972″ এর ৬০(১) রুলে বলা আছে ” Every person shall before being admitted as an Advocate take training regularly for a continuous period of six monthly as a pupil….” মানে ” Enrolment ” হওয়ার পূর্বে একজন ব্যক্তিকে নিজেকে ” Pupil” হিসেবে পরিচয় দিতে হবে। প্রচলিত আইনের বাইরে তার অন্য কোন পরিচয়ের সুযোগ নেই। আর এই ৬ মাসের ট্রেনিংকালীন সময়কে বলে “Pupilage “. এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে নতুবা পেশায় প্রবেশের পূর্বে অনেকেই নিজেকে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে “PUPIL” এর পরির্বতে “শিক্ষানবিস আইনজীবী ” হিসেবে ভুল পরিচয় দিবে। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।
শেষ বিষয়টা হচ্ছে ক্লার্ক বা মুহুরী। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রনীত ” Rules for registration of Advocates clerks” ( Rule 1) তে রেজিস্টার্ড ক্লার্ক বলতে বোঝায় ” The expression registered clerk means a clerk who is employed by an Advocate in connection with his legal business and who is registered under these rules”. ইদানীং ক্লার্কদের বিভিন্ন নোটিশে (সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে অনেকে খেয়াল করবেন) তাদের নিজেদেরকে “আইনজীবী সহকারী” হিসেবে পরিচয় দিতে দেখা যাচ্ছে প্রকাশ্যে। এটা সম্পূর্ন বে-আইনী ও প্রতারনামূলক আচরন। আইনত তার পরিচয় ক্লার্ক, এর বাইরে কিছু নয়। ক্লার্কদের এ ধরনের আচরন থেকে বিরত রাখতে সারাদেশব্যাপী বারগুলোর কঠোর উদ্দ্যেগ গ্রহন করা আশু প্রয়োজন। আইনজীবী সহকারী পরিচয়ে সাধারন মানুষ তাকে জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে ভেবে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হতে পারেন যা পবিত্র আইন পেশার জন্য কোনোভাবেই মংগলকর নয়।
উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে আমি শুধুমাত্র বিদ্যমান অর্ডিন্যান্স, রুল ও বাংলাদেশের সংবিধানের কতিপয় অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা করেছি। আইন এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তাই আমার মতে অন্যকিছু অনুল্লেখযোগ্য। আমার এই আলোচনায় বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ বিন্দুমাত্র উপকৃত হলে আমার শ্রম সার্থক বলে গন্য হবে। ধন্যবাদ।
ব্যারিস্টার সৌমিত্র সরদার : এ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট