মোহাম্মদ ইয়াসিন আরফাত সাজ্জাদ, এডভোকেট

ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আইনজীবীদের দায় : প্রেক্ষিত সাফাই সাক্ষী

মোহাম্মদ ইয়াসিন আরফাত সাজ্জাদ :

বাংলাদেশের বিদ্যমান ফৌজদারী আইন ও বিচার ব্যবস্থা ১০০ বছর আগের বাস্তবতায় যুগোপযোগী ও সঠিক থাকলেও, বর্তমানে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পরেছে। আমরা প্রায়শঃ একাডেমি কাজে, গবেষণায় ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিদ্যমান ফৌজদারী আইন ও বিচার ব্যবস্হার সমালোচনা করে শুধু হা-হুতাশ করে থাকি।

বাংলাদেশের বিদ্যমান ফৌজদারী আদালত ও বিচার ব্যবস্হা পুরোপুরি পুলিশ নির্ভর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় এদেশ প্রকৃতার্থে পুলিশী রাষ্ট্র। মামলা নেওয়া, তদন্ত করা, রিমান্ড নামক ধোলাই, আসামি গ্রেফতার, চার্জশিট দাখিল, কারো বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন করা, জব্দতালিকা, সাক্ষী যোগাড় করা, কোর্টে সাক্ষী দেওয়া, কোর্টে সাক্ষী হাজির করা থেকে শুরু করে সব বিষয় পুলিশ নির্ভর। পুলিশ যেভাবে বলে, কোর্টও সেভাবে চলে। আইনের স্পিরিটও তাই। ব্যতিক্রম নগন্য। পুলিশ, আইনজীবী, আমজনতা বিচারক, কিংবা বিচার সংশ্লিষ্ট কাউকে ভাল বা খারাপ বলা আমার উদ্দেশ্য নহে। এদেশে কে কতটুকু ভাল বা খারাপ, কে কতটুকু দায়িত্বশীল তা সবাই জানে। আমরা আইনজীবীরা কি করতে পারি তাই মূল উদ্দেশ্য।

এটা সঠিক যে, আমরা আইনজীবীরা চাইলেই কোন আইন সংশোধন কিংবা যুগোপযোগী করতে পারব না। খালি চোখে মনে হয়, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী থেকে শুরু করে বহু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা আইনজীবী/আইনের ছাত্ররা দখল করে আছে।

এক্ষেত্রে Million Dollar question হলো- আইন, বিচার ও ভূমি ব্যবস্হাপনায় ও প্রশাসনে বেহাল দশা কেন? আইনের শাসন, সুশাসন ও গণতন্ত্রের অভাব কেন? ফৌজদারী বিচার ব্যবস্হা পুলিশ নির্ভর কেন? মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় বেশী লাগে কেন? সাক্ষী- ভিকটিম- বাদীর নিরাপত্তা নাই কেন? নিরাপরাধ ব্যক্তি কেন নির্যাতন- হয়রানির- শাস্তির মুখোমুখি হয়, প্রকৃত অপরাধী কেন পার পায়? দেশে দ্বৈত ম্যাজিস্ট্রেসির বিধান কেন? এক যাত্রায় বা একই অপরাধে একাধিক ফল কেন? সবসময় ক্ষমতাসীনরা আইনের আওতা বহির্ভূত কেন? ইত্যাদি বহু প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে থাকলেও, ক্ষমতা কেন্দ্রে গেলে যাদের পক্ষে আইন সংশোধন ও যুগোপযোগী করা নিয়ে কাজ করা সম্ভব তারা এসব ভুলে যান। শুধু নিজের গদি বাঁচানোর চিন্তা। আর বড়নেতাকে তেলানো। তাদেরকে আইনজীবি কিংবা আইনের ছাত্র বলতে আমাদের খানিকটা আপত্তি আছে। তারা সবাই রাজনৈতিক ব্যক্তি বৈ কিছুই নয়।

কিন্তু এবিষয়ে সাধারণ প্র্যাক্টিসিং আইনজীবীদের তেমন কিছুই করার থাকে না। কারণ, এসব বিষয় আইনজীবীদের এখতেয়ার ও আওতাবহির্ভূত। তবে মামলা পরিচালনায় ও মক্কেলকে পরামর্শ দানে একটু পরিবর্তন আনলে, বিদ্যমান ব্যবস্হায়ও কিছু রিলিফ সাধারণ মানুষ পেতে পারেন, যারা ভিকটিম কিংবা হয়রানি শিকার। আমরা আজকে সে বিষয়ে আলোকপাত করব।

আমাদের একটা মৌলিক সমস্যা হলো আমরা আইনজীবীরা আইন পড়ি না। আইন অনুযায়ী আইন চর্চা করি না। অন্তত তিনটা আইন ১) সাক্ষ্য আইন, ২) দন্ডবিধি ও ৩) ফৌজদারী কার্যবিধি বছরে পুরোটা একবার পড়েন। নচেৎ মামলা সংশ্লিষ্ট অংশটুকু সময়ে সময়ে পড়লেও চলে। সবাই অন্যদেরকে দেখে দেখে, শুনে শুনে আইন চর্চা করি। পড়ি না। কোর্টে প্রথা হচ্ছে আইন। কিতাবে কি আছে কেউ জানি না বা অনুসরণ করি না।

আর এনজিও ও দাতাদের কুবুদ্ধি মোতাবেক সরকার খালি নতুন নতুন বিশেষ আইন ও ট্র্যাইবুন্যাল বানাচ্ছে। দন্ডবিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধি আপডেট করলে সমস্যা কি? সে বিষয়ে অন্যদিন লিখব।

দুঃখজনকভাবে আইনজীবীদের কোন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্হা নাই। সবার ধারণা এমন, ওরা তো সরকারি কর্মচারী নয়, সরকারী খরচে প্রশিক্ষণ কেন? উন্নত দেশের দিকে একবার চোখ খুলে দেখুন, সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। কিভাবে তারা উন্নত ও সভ্য হলো। বার কাউন্সিল ও এর নেতারা দায় এড়াতে পারেন না। অনেকে যুক্তি দেন, আইনজীবী সমিতি চাইলে তো আয়োজন করতে পারে। আরে বাবা, সমিতিতে প্রশিক্ষক ও ফান্ড কোথায়? বিচারক ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণে হাজারো কোটি টাকা খরচ করতে পারেন, যারা জনগণকে প্রাথমিক পরামর্শ দিবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে আপত্তি কেন? তারা কি নাগরিক নন? আল্টিমেট উপকারভোগী কারা? আইনজীবীরা কিভাবে কোর্টের সময় নষ্ট না করে, যথাযথভাবে সহায়তা করবে?

আমাদের এখানে সনদ/লাইসেন্স একবার পেলে কেল্লাফতে। পড়াশোনা আর নাই। উন্নত সব দেশে প্রতি বছর continuous professional development course করে লাইসেন্স রিনিউ করতে হয়। আইনজীবীদের আপডেট থাকতে হয়। আদালত অঙ্গনে একপাখী দুই ডানা নামক একটা কথা প্রচলিত আছে। পুরোটায় ভাঁওতাবাজি। যারা বলেন, শুধুই আত্মতৃপ্তির জন্য। কেউ বিশ্বাস করে না। সমাজে ও রাষ্ট্রযন্ত্রে উকিলদের জন্য কারো কোন মায়া নাই। উকিলদের মায়াও সে জন্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

যাইহোক মূলকথায় আসি। আমাদের বর্তমান আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিদ্যমান আইনগত ও পদ্ধতিগত অসংগতির মধ্যেও ফৌজদারী মামলায় নিরীহ হয়রানি শিকার মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে পারি সহজ তিনটি পদ্ধতির মাধ্যমেঃ
১) কোর্টে ট্রায়ালে লিখিত বর্ণনা (ডিফেন্স স্টেটসমেন্ট) ও সাফাই সাক্ষী প্রদান। (সিভিল মামলার মত)।
২) মিথ্যামামলাকারীর কিংবা হয়রানিকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের। ও
৩) মিথ্যামামলাকারী কিংবা হয়রানিকারী সরকারী কর্মচারী হলে কিংবা পুলিশ হলে যথাযথ কতৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়ের।

প্রথমোক্ত বিষয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ঝ ধারায় আলোকপাত করতে পারি।

PART VI: PROCEEDINGS IN PROSECUTIONS. CHAPTER XXIII: OF TRIALS BEFORE COURTS OF SESSION.

Entering upon defence.section-265-I of CrPC.

(1) Where the accused is not acquitted under section 265H, he shall be called upon to enter on his defence and adduce any evidence he may have in support thereof.

(2) If the accused puts in any written statement, the Court shall file it with the record.

(3) If the accused applies for the issue of any process for compelling the attendance of any witness or the production of any document or thing, the Court shall issue such process unless he considers for reasons to be recorded, that such application should be refused on the ground that it is made for the purpose of vexation or delay or for defeating the ends of justice.

অত্র ধারা ভালকরে খেয়াল করলে দেখা যাবে, উপধারা (১) এ আসামী পক্ষকে সাফাই সাক্ষী প্রদানের জন্য আহবান করা হয়। আমাদের দেশেও শুধু ফর্মালিটি মেন্টেইনকরার জন্য তা জিজ্ঞেস করা হয়। উৎসাহিত কিংবা জোর করা হয় না। আদালত এক্ষেত্রে খানিকটা জোর প্রয়োগ করলে কিংবা পজিটিভলি উৎসাহিত করলে ৫০% কাজ হয়ে যায়। তথাপি এবিষয়ে আইনজীবীরা নিজেদের দায় এড়াতে পারেন না। মাদক, ইয়ারা, চেক, লেনদেন সংক্রান্ত বহু মামলায় আসামীর সাজা হয় যথাযথভাবে ডিফেন্স তুলে না ধরার কারণে। পুলিশ উদ্ধার দেখালেই কি সাজা হবে? মোটেও তা না। অভিযোগকারী/বাদী কিংবা বাদী পক্ষের সাক্ষীকে জেরা করার সময় এবং আসামীর সাফাই সাক্ষী প্রদানের সময় একই বিষয়ে যুগপৎভাবে আসামীর ডিফেন্স নিতে হবে (যদি থাকে)। মামলার ঘটনা যে মিথ্যা কিংবা আপনার আসামী যে অপরাধ করেন নি, তা কোর্টকে বুঝানোর চেষ্টাটা অন্তত করেন। না শুনতে চাইলে উপরে যান। আইনগত ও যুক্তিসঙ্গত কথা বললে ১০০বার শুনবে। নিরহ মানুষকে রক্ষা করার শেষ চেষ্টাটা করেন। দুনিয়া – আখেরাত দুইটাই পাবেন। আমরা এ কাজ না করে, শুধু জামিনের সময় ও যুক্তিতর্কের সময় মৌখিকভাবে বিভিন্ন কাহিনী বললে হবে না। এসব কাহিনী ট্রায়ালে বলেন। জামিন মানে মামলা শেষ না। বাদীকে জেরায় সব বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে আনেন। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জেরা করেন। বিচারে Defence Written Statement দেন। সাফাই সাক্ষী দেন বেশি বেশি। সময়ক্ষেপণের জন্য নয়। আসামীকে রক্ষা করার জন্য। দেখবেন বিচারিক আদালতে অনেক সময় প্রতিকার না পেলেও, আপীলে-রিভিশনে মক্কেল প্রতিকার পাবে। আপনার ট্রায়াল লইয়ার হিসাবে সুনাম বাড়বে ইনশাআল্লাহ।

উপধারা (২) এ দেওয়ানি মোকদ্দমার মত আসামীর লিখিত বর্ণনা দেওয়ার বিধান আছে। এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞান ও চর্চা দুইটারই অভাব। আপনার ব্যক্তব্য লিখিত হওয়ায় বাঞ্ছনীয়। এর ভিত্তিতে সাফাই সাক্ষী দেন। কাজ হবে ইনশাআল্লাহ। মনে করেন এটাও দেওয়ানী মামলা। যা জানেন বা কোর্টে দেখেছেন, মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, UK (ইংল্যান্ডে) তে ফৌজদারী মামলায় মামলা শুরু হওয়ার পর বিবাদী/আসামীর পক্ষে লিখিত ডিফেন্স স্টেটসমেন্ট ও সাফাই সাক্ষী (বিবাদী নিজে সহ) প্রদান করা খুব কমন একটা কাজ। ক্রাউন কোর্ট (আমাদের সেশন কোর্ট) এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট উভয়ে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ডিফেন্স স্টেটসমেন্ট দেওয়া ঐচ্ছিক। তবে ক্রাউন কোর্টে অনেকটা বাধ্যতামূলক। যদি বিবাদী তা না করে, court may presume otherwise. যা আমাদের দেশে নাই। আমাদের দেশে বিষয়গুলো প্র্যাক্টিকালি উৎসাহিত করা হয় না। কোর্টে নতুন নতুন কোন শিক্ষানবিশ বা জুনিয়র আইনজীবী গেলে বলা হয়, যা শিখেছেন ভুলে যান, বাস্তবতার সাথে বইয়ের মিল নাই! ডাহা মিথ্যা কথা। আইন না মানা, না শেখা, আইনের ব্যাত্যয় ঘটানো এদেশে প্রধান কাজ। না জজ, না আইনজীবী, না পুলিশ, না আমজনতা। কোর্ট সংশ্লিষ্ট কেউ পুরোপুরি CrPC এবং CPC অনুসরণ করে না। সবাই ডিসক্রেশন কিংবা দয়া নিয়ে আছে।

উপধারা (৩) এ সাফাই সাক্ষী হাজির করার কিংবা ডকুমেন্টস উপস্থাপন করার সুযোগ প্রদানের নিমিত্তে আদালতের সমন দেওয়ার বিষয় আছে। এটা সঠিক কোর্ট আসামী পক্ষকে সাফাই সাক্ষী দিতে বেশি সময় দিতে চান না। কারণ, আমরা মামলায় সময় ক্ষেপণ করতে চাই, প্রমাণ করতে নয়। তথাপি, এক্ষেত্রে আদালত দায় এড়াতে পারেন না যখন আসামী পক্ষ সত্যি সত্যি ডিফেন্স উপস্হাপন করতে চায়। আমাদের ফৌজদারী আদালতের এবিষয়ে আসামীর প্রতি বিরূপ মনোভাব লক্ষনীয়, যা বেআইনি ও জুডিসিয়াল মাইন্ডের সাথে যায় না। রাষ্ট্র পক্ষ সাক্ষ্য উপস্থাপনে ২০বছর সময় পেলেও, আসামী পক্ষ ২/৩ তারিখও পায় না, কোনমতে মামলা শেষ করতে পারলে বাঁচে । তবে আইনজীবী যদি মনে প্রাণে চান, কোর্টকে বুঝাতে সক্ষম হন যে কি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে চাচ্ছেন, কি কি সাক্ষী-প্রমাণ আছে, আশা করা যায় কোর্ট সুযোগ দিবেন। প্রসেস ইস্যু করবেন। যদি বিচারিক আদালতে হতে সহায়তা না পান, তবে দ্রুত উপরে যান। আপনার মক্কেলের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কোন বিচারককে খুশি করা আপনার কাজ না। কেউ মাইন্ড করলেও, আপনার কিছু করার নাই। আপনার আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। আপীল- রিভিশন ফাইল করতে, শুনানি করতে বেশি ফি নেয় এমন সিনিয়র দরকার নাই। একদিন ভাল করে সংশ্লিষ্ট আইন পড়ুন, ২/৩টা রুলিং যোগাড় করেন। সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে কথা বলুন। অতিরিক্ত লিখবেনও না, বলবেনও না। ইনশাআল্লাহ এডমিশন সাকসেসফুল হবে। আমার ব্যক্তিজীবনে অভিজ্ঞতায় দেখা। মক্কেলকে কম খরচে রিলিফ দিতে পারবেন।

ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারাধীন মামলাও, আপনি একি নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন। যদিও আমাদের ফৌজদারী কার্যবিধিতে বহু প্রশ্নের উত্তর নাই। (ধারা ২৪৪ দৃষ্টব্য)

PART VI: PROCEEDINGS IN PROSECUTIONS. CHAPTER XX:OF THE TRIAL OF CASES BY MAGISTRATES

Procedure when no such admission is made. Section 244 of CrPC

(1) If the Magistrate does not convict the accused under the preceding section or if the accused does not make such admission, the Magistrate shall proceed to hear the complainant (if any), and take all such evidence as may be produced in support of the prosecution, and also to hear the accused and take all such evidence as he produces in his defence:

Provided that the Magistrate shall not be bound to hear any person as complainant in any case in which the complaint has been made by a Court.

(2) The Magistrate may, if he thinks fit, on the application of the complainant or accused, issue a summons to any witness directed him to attend or to produce any document or other thing.

(3) The Magistrate may, before summoning any witness on such application, require that his reasonable expenses, incurred in attending for the purposes of the trial, be deposited in Court.

এখানে লক্ষনীয়, evidence এর ক্ষেত্রে মামলায় আসামী পক্ষের প্রমাণের দায়িত্ব ও ভার নিয়ে অনেকে ধারণা ভুল। রাষ্ট্র/বাদী পক্ষে প্রমাণে স্ট্যান্ডার্ড হবে beyond reasonable doubt. আর আসামী পক্ষে balance of probabilities. আপনি আদালতে মনে সন্দেহ ঢুকাত পারলেও প্রতিকার পাবেন আশা করা যায়। তথাপি legal burden এবং evidential burden এর মধ্যে পার্থক্য আছে। আসামীর পক্ষে সাথে সাধারণত legal burden থাকে না; যদি না আইন সুনির্দিষ্টভাবে বলে। যেমন স্বামীর হেফাজতে বউয়ের মৃত্যু। আসামীর বয়স ১০এর কম, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, ইত্যাদি। অন্যক্ষেত্রে আসামীর legal burden নাই। এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত পড়াশোনা করা যেতে পারে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব মুনির এবং সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের আইনজীবী জনাব জিয়াউল হকের সাক্ষ্য আইনের বই দুইটি পড়েন কিংবা গুগলে সার্চ করেন। সব পরিস্কার হয়ে যাবে। নতুন নতুন আইন চর্চা করবেন। আনন্দ পাবেন। মক্কেলও প্রতিকার পাবেন।

এবার আসি দ্বিতীয়োক্ত বিষয়ে। মিথ্যামামলাকারীর কিংবা হয়রানিকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের। নারীশিশু নির্যাতন দমন এর ১৭ ধারা, দণ্ডবিধির ২১১ধারার মত বহু আইন অনুরূপ বিধান আছে। এর যথাযথ অনুসরণ করা। (এক্ষেত্রে দন্ডবিধি ২১১ধারা দৃষ্টব্য)

False charge of offence made with intent to injure.

Section 211 of Penal Code- Whoever, with intent to cause injury to any person, institutes or causes to be instituted any criminal proceeding against that person, or falsely charges any person with having committed an offence, knowing that there is no just or lawful ground for such proceeding or charge against that person, shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both;

and if such criminal proceeding be instituted on a false charge of an offence punishable with death, 69[imprisonment] for life, or imprisonment for seven years or upwards, shall be punishable with imprisonment of either description for a term which may extend to seven years, and shall also be liable to fine.

সবচেয়ে ভাল হয়, আপনার মক্কেল হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার সাথে সাথে পাল্টা মামলা করা। নচেৎ, মিথ্যা মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার সময় আদালতে দরখাস্ত দেন ২১১ধারার অনুরূপ ধারায় বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেওয়ার জন্য। সাময়িকভাবে কিছু মামলা বাড়বে, ভবিষ্যতের বহু মামলা কমবে। মক্কেলরা একাজে অবশ্য আগ্রহ দেখায় না। খালাস পেয়ে শান্তি। কোর্টে আর আসতে চায় না। কিন্তু উৎসাহিত করুন, চেষ্টা করুন। জালেমদের শাস্তি জরুরি। আপনাকে মিথ্যা মামলায় জড়ালো এটাও অপরাধ। এর ক্ষমা করবেন না। বারংবার যাতে এমন অপরাধ না হয়।

তৃতীয়ত- মিথ্যামামলাকারী, নির্যাতনকারী কিংবা হয়রানিকারী সরকারী কর্মচারী হলে কিংবা পুলিশ হলে যথাযথ কতৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়ের। এটা খুব সহজ কাজ। উদাহরণসরূপ- যদি পুলিশ হয়, তবে জেলা পুলিশ সুপার, ক্ষেত্রবিশেষে, মহানগর পুলিশ কমিশনার এবং রাজধানীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে সিকিউরিটি সেলে প্রমাণ সহ অভিযোগ করেন। মন্দের ভাল আইন নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন আইনের বিধান মোতাবেক অভিযোগ করেন। দেখবেন ইনশাআল্লাহ কাজ হবে। মক্কেলকে অনুরূপ পরামর্শ দেন। অভিযোগের রিসিভিং কপি সাফাই সাক্ষীর সাথে কোর্টে দেন। সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলে, সাক্ষী দেন। অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টা করেন। তবে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ করবেন না। আপনি করো জন্য গর্ত খুঁড়লে, নিজেও পড়ে যাবেন।

একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মিডিয়া রিপোর্টিং। উচ্চ আদালতে ও সরকারী অফিসে এর বেশ গুরুত্ব আছে। কোন ঘটনা ঘটলে কিংবা কোন ব্যক্তি ভিকটিম হলে, হয়রানির শিকার হলে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গেলে, তবে দ্রুত কয়েকটি জাতীয়, স্হানীয় পত্রিকায় কিংবা অন্তত অনলাইনে নিউজ করান। সংবাদ সম্মেলন করেন। এর নানাবিধ উপকারিতা আছে। আপনার মক্কেলকে নরক থেকে মুক্তি দিবে। সাময়িক সমস্যা হতে পারে। মক্কেলকে এধরণের সুপরামর্শ দেন। Do or Die. হিসেব খুব সহজ।

এই সামান্য কয়টা বিষয় অনুসরণ করলে, নিরীহ হয়রানি শিকার মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব। বহু নিরাপদ ব্যাক্তি সাজা থেকে রক্ষা পাবে। আইন-আদালত তো অন্ধ। নিজেদের জ্ঞান ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আসামী প্রতিকার দেওয়ার সুযোগ নাই। আইনজীবীকে এগিয়ে আসতে হবে।

মোহাম্মদ ইয়াসিন আরফাত সাজ্জাদ : এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

sajjadd215@gmail.com