নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে, সে বিষয়ে তদারকির ব্যবস্থা করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা (৮ নম্বর) দিয়েছিলেন, তা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ জুন) ভার্চ্যুয়াল চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান এ আদেশ দেন।
পৃথক পাঁচটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার হাইকোর্ট স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে ১১ দফা অভিমতসহ নির্দেশনা দিয়ে আদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আবেদন করে, যা আজ শুনানির জন্য ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া তিনটি নির্দেশনা বহাল রেখে বাকিগুলো স্থগিত করা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, মনজিল মোরসেদ, অনীক আর হক, মাহফুজুর রহমান মিলন, ইয়াদিয়া জামান, এ এম জামিউল হক, এ কে এম এহসানুর রহমান প্রমুখ।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনাগুলোর মধ্যে তিনটি (১, ৮ ও ৯ নম্বর) বহাল রাখা হয়েছে। বাকিগুলো স্থগিত করা হয়েছে। লকডাউন বিষয়ে হাইকোর্ট কোনো আদেশ দেননি, সুপ্রিম কোর্টও কোনো আদেশ দেননি।
হাইকোর্টের নির্দেশনার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা (গত ১১ মে দুটি এবং ২৪ মে জারি করা একটি) যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে ৩০ জুনের আগে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে যে নির্দেশনা (১ নম্বর) দেওয়া হয়েছিল, তা বহাল রয়েছে।
হাইকোর্টের নবম নির্দেশনায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান বা দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও রোগীর পরিচয়পত্র ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে।
অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয়ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
পাঁচটি রিটের মধ্যে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন একটি রিট করেছিলেন। আদেশের পর মাহফুজুর রহমান মিলন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহার কারণে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে তা ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’, অর্থাৎ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা স্থগিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চেম্বার আদালত বলেছেন, যেহেতু দণ্ডবিধির ৩০৪ ক ধারা অনুসারে অবহেলাজনিত কারণে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেহেতু আদালত থেকে পুনরায় কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন নেই।
করোনাভাইরাসে সংক্রমণে উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে সাধারণ রোগীসহ আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা বিষয়ে পৃথক পাঁচটি রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ১১ দফা নির্দেশনা, অভিমতসহ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন- অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হলে ‘ফৌজদারি অপরাধ’: হাইকোর্ট