চাঁদার দাবিতে থানায় আটকে রেখে নির্যাতন, ওসিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা
পুলিশ (প্রতীকী ছবি)

পুলিশি হয়রানির প্রতিকার কি?

শ্রীকান্ত দেবনাথ:

যদি কোন ব্যক্তি কোন ফৌজদারী অপরাধ করে তবে সে যে পেশায় থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী আদালতে মামলা করা যায়। কিন্তু প্রত্যেক পেশার দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদি তার পেশাগত দায়িত্ব পালন না করে তবে তার বিরুদ্ধে প্রতিকার কি? সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি যদি পেশাগত দায়িত্ব পালন না করে বা অবহেলা করে বা হয়রানি করে তাহলে সাধারণ জনগণ হিসেবে সে বিষয়ে প্রতিকার জানা অত্যন্ত জরুরী। এতে করে সাধারণ জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে সফল হতে পারবে। আজ আমরা জানবো পুলিশের অপেশাদার ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে একজন সাধারণ মানুষের প্রতিকার।

বর্তমান করোনা সংকটের পূর্বে জনগণ আদালত বা থানায় মামলা করতে পারতো, কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ থাকায় মামলা করার এক মাত্র উপায় হলো থানা। কিন্তু এমন একটি অভিযোগ মাঝে মাঝে পাওয়া যায় তা হলো থানায় বিভিন্ন কারণে মামলা নিতে চায় না। পুলিশের পেশাগত দায়িত্ব হলো আমলযোগ্য অপরাধ সংক্রান্ত মামলা গ্রহণ করা, কিন্তু মামলা যদি গ্রহণ না করে তখন পুলিশের এমন অপেশাদারী আচরণের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের প্রতিকার কি?

দেশ ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশের রয়েছে গৌরবময় সাফল্য ও ইতিহাস। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ যে দায়িত্ব পালন করছে তা ব্যাপক প্রসংশনীয়। যত দিন যাচ্ছে পুলিশের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, আস্থা ও নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও কিছু কিছু পুলিশের অপেশাদার আচরণের কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় কিছু মুষ্টিমেয় পুলিশের বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়। পুলিশের ‍বিরুদ্ধে মামলায় দায়িত্বশীল আচরণ না করা, মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়া, ঘুষ নেওয়া, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন নির্যাতন, চাঁদা আদায় করা, মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি, প্রাণনাশের হুমকিসহ নানা ধরণের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশের এহেন অপেশাদারী ও অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে কি করা উচিত বা কোথায় অভিযোগ করবেন তা অনেকেই জানেন না। এক সময় মনে করা হতো পুলিশের অপেশাদারী আচরণ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই। অনেকে অভিযোগে কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে না মনে করে অভিযোগে আগ্রহ দেখান না। কিন্তু পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ৪২ হাজার ৬৩২ জন পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার ৪২ হাজার ৪৭৬ জন, ইনপেক্টর পদমর্যাদার ১৪৫ জন এবং এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার ১১ জন রয়েছেন।

আগে থেকেই পুলিশের অপেশাদার আচরণ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুযোগ থাকলেও অভিযোগ প্রক্রিয়া আরো সহজ করার লক্ষ্য ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বরে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে “আইজিপি কমপ্লেইন সেল” চালু করা হয়েছে। তখন থেকে জনগণ পুলিশের কোনো অপেশাদার ও অনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে সরাসরি, কুরিয়ার সার্ভিসে, ডাকযোগে, মোবাইলে বা ই-মেইলে অভিযোগ করতে পারবে। এই কমপ্লেইন সেল দিন-রাত ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। মোবাইলে অভিযোগের নম্বর– ০১৭৬৯৬৯৩৫৩৫ ও ০১৭৬৯৬৯৩৫৩৬। ই-মেইলে অভিযোগের ঠিকানা– complain@police.gov.bd

এই সেল চালুর পর থেকে উক্ত সেল-এ ২০১৭ সালে ৬১৯টি ও ২০১৮ সালে ১৩৭১টি ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৫০৩ টি অভিযোগ এসেছে।

লেখক: প্রতিবেদক; ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম