মুজিবুর রহমান:
ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমে বিতর্কের বিষয় ‘অধস্তন’ নাকি ‘নিম্ন’ আদালত শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সংবিধানের স্পিরিট অনুযায়ী অধস্তন শব্দের পরিবর্তে নিম্ন ব্যবহার করা যাবে না। ল’ইয়ার্স ক্লাব একটি গণমাধ্যম, এখানে আমজনতার মত কোন বিষয় নয়। এজন্য শব্দচয়নে অবশ্যই সুচিন্তিত হওয়া উচিৎ বলে মনে করি।
প্রথমত, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট উচ্চ আদালত বলতে বাধা নেই। কারন সেটার জন্য উক্ত শব্দই উপযুক্ত।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যেকটি অধস্তন আদালত স্বাধীন। কোন আদালত হাইকোর্টের নিম্নের বা নিচের আদালত নয়। আদালত বা ট্রাইব্যুনাল সমূহ হাইকোর্টের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অধীন। এই ক্ষমতা অনুযায়ী হাইকোর্ট অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালসমূহকে তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করে। হাইকোর্ট যতটুকু স্বাধীন, প্রত্যেকটি আদালত ততটুকু স্বাধীন। তাই, শব্দটি ‘নিম্ন’ নয়, এটা অধস্তন আদালত।
তৃতীয়ত, সংবিধানে রুচির জন্য অধস্তন শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। এটা সুচিন্তিতভাবে নিম্নের পরিবর্তে অধস্তন শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
আমি জানিনা লেখক আইনের ছাত্র কিনা। উনি সংবিধানের স্পিরিটটাই বুঝতে অক্ষম, সেখানে আইনের শাব্দিক বিশ্লেষণ নিয়ে কিভাবে বুঝবে?
চতুর্থত, লেখক অধস্তন শব্দের প্রতিশব্দের কথা বলছেন। উনি বাংলা শব্দ ও আইনি শব্দের পার্থক্য করতে পারেন নি। আইনে শব্দ ব্যবহার করা সুচিন্তিত ও সুক্ষ্মভাবে। সংবিধানে ‘অধস্তন’ শব্দটি আইনি শাব্দিক ব্যবহার। যেমন- ‘Public Servant’ শব্দের অর্থ সরকারি কর্মচারী বুঝায়, এই শব্দ দিয়ে সরকারি চাকর বললে কী শুদ্ধ?
পঞ্চমত, লেখক বললেন- শব্দ হয় ব্যাকরণ সম্মত, আইন সম্মত হয় না। সম্পূর্ণ একটি ভুল ব্যখ্যা। আইনে শব্দের ব্যবহার করা হয় আইনগত দিক বিবেচনা করে। আইনের শব্দের ব্যবহার অভিধান বা আইন শব্দকোষ তাহলে ব্যবহার হতো না। এসবের প্রয়োজন কী? আমরা আসামি আর অভিযুক্ত শব্দগুলো যখন ব্যবহার করি, তখন সেটা আইনগত দিক বিবেচনা করে ব্যবহার করি, ব্যাকরণগত বিবেচনা করে নয়।
আইনে শব্দের ব্যবহার অবশ্যই আইনগত ও আইনসম্মত কিনা সেটা বিবেচনায় নিয়ে করতে হবে। যা লেখক সেটা বুঝতে অক্ষম ও ব্যর্থ হয়েছেন।
ষষ্ঠত, সংবিধান ও আইন যে শব্দ নির্ধারণ করেছে, সেটার বাইরে গিয়ে যেমন ইচ্ছে তেমন শব্দ ব্যবহার করার সুযোগ নেই। যেমন- আইনজীবী শব্দের সমার্থক মুক্তার, উকিল এসব ব্যবহারেরও যেমন সুযোগ নেই। ঠিক একইভাবে আদালতের ক্ষেত্রে অধস্তন শব্দের পরিবর্তে নিম্ন ব্যবহার করা যাবে না।
মুজিবুর রহমান: বিচারক; বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস।