স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটিতে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সভাপতি হতে পারবে না বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক ছাড়া অন্যকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে বা চেয়ারম্যান পদে থাকতে কোন বাধা নেই।
এ নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিনারুল ইসলাম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ফরিদ আহম্মদ নামের এক ব্যক্তি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন “রায়পুর পিজাহাতি দাখিল মাদ্রাসা” এর সহকারী শিক্ষক, নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলাধীন “খাগুরিয়া হাই স্কুল” এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনাকালে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড গত বছরের ১৭ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০০৯ এর ৭(২) ধারা [কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষক শ্রেণীর সদস্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হইবেন না।] অনুযায়ী উক্ত জনাব ফরিদ আহম্মদ-কে “খাগুরিয়া হাই স্কুল” এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করেন।
ফলে ফরিদ আহম্মদ উক্ত চেয়ারম্যান পদ বাতিলাদেশ চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর সমন্বয়ে গঠিত রীট বেঞ্চে একটি রীট পিটিশন-১১৮৬৯/২০১৯ দায়ের করেন যা প্রাথমিক শুনানী শেষে, কেন কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষক শ্রেণীর সদস্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে থাকতে পারেন না, জানতে চেয়ে আদালত ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের উপর একটি রুল জারী করেন।
পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর সমন্বয়ে গঠিত রীট বেঞ্চে রীট পিটিশন-১১৮৬৯/২০১৯ এর রুল শুনানীতে ফরিদ আহমেদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় ডেপুটি এটর্নী জেনারেল অ্যাডভোকেট অমিত তালুকদার এ্যামিক্যাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসাবে শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন এবং রুল শুনানী শেষে আদালত উক্ত চেয়ারম্যান পদ বাতিলাদেশ বেআইনী ঘোষণা করে রীট পিটিশনার জনাব ফরিদ আহম্মদ এর পক্ষে রুল এ্যাবসুলুট করেন।
পরবর্তীতে উপরোক্ত রায়ে স্বাক্ষর করার পূর্বেই একই বিষয় নিয়ে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক সমর্থনমূলক এক সাংঘর্ষিক রায়ের বিষয়ে হাইকোর্ট অবগত হয়ে উপরোক্ত অস্বাক্ষরিত রায়ের রুল রিকল করেন এবং রুলটি পুনরায় কার্যতালিকায় দেয়া হয়।
রিকল রুল শুনানিকালে ফরিদ আহমেদের পক্ষে এডভোকেট মোঃ মোজাম্মেল হোসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিগত ১৮/০৩/২০১২ ইং তারিখের ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রবিধান ৭(২) এর অস্পষ্টতা ও প্রয়োগে অসুবিধা দূরীকরণ বিষয়ে এক স্মারকপত্র আদালতে সাপ্লিমেন্টারী এফিডেভিট দাখিল করেন। স্মারক পত্রের চুম্বক অংশটি-“ম্যানেজিং কমিটিতে নিজ প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষককে সভাপতি করা যাবে না। তবে ভিন্ন কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সভাপতি হতে পারেন।”
পরবর্তীতে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর সমন্বয়ে গঠিত রীট বেঞ্চ রিকল রুল শুনানী শেষে সাংঘর্ষিক রায় ও উপরোক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারকপত্র বিবেচনায় পূর্বের রায়ই বহাল রাখায় এক যুগান্তকারী রায়ের উদ্ভভ হয়। এবং সেইসাথে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক ছাড়া অন্যকোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে কোন বাধা নেই।