বগুড়া অ্যাডভোকেটস্ বার সমিতির ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বারের সাবেক তিনজন আইনজীবী নেতাকে সমিতির নির্বাচনে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আত্মসাৎ ও আর্থিক ক্ষতির টাকা পরিশোধের নির্দেশ ও এক সপ্তাহের জন্য তাদের সদস্য পদও স্থগিত করা হয়েছে।
ওই তিন আইনজীবী হলেন- সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফে গালিব আল জাহিদ ও সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক।
বগুড়া বারের গওহর আলী ভবনে এক জরুরী সভায় বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়া বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম।
এসময় বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট পিপি আব্দুল মতিন, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু, অ্যাডভোকেট লুৎফে গালিব, অ্যাডভোকেট আশেকুর রহমান সুজন, অ্যাডভোকেট নরেশ মূখার্জ্জী, অ্যাডভোকেট মেশকাতুল আলম চিশতী। উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম সুরমা, অ্যাডভোকেট আল মামুন, অ্যাডভোকেট জয় প্রমুখ।
সভায় সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সম্মতিতে সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলামকে তিন লাখ টাকা জরিমানা, সাতদিনের জন্য সদস্য পদ স্থগিত ও নির্বাচনে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফে গালিব আল জাহিদ মৃদুল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হককে যৌথভাবে এক লাখ তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাদের সদস্য পদও সাতদিন স্থগিত ও সমিতির নির্বাচনে তাদের আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। আগামী সাতদিনের মধ্যে তাদের জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়াও বিগত সময়ে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম টুকু, অ্যাডভোকেট শাজাহান আলী এবং অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তাদের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে কথা উঠলে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান ও অ্যাডভোকেট জিএম খায়রুজ্জামানকে প্রধান করে আলাদা আলাদা তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী সাধারণ সভায় তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। উক্ত তদন্তে অভিযুক্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবে বর্তমান কমিটি।
অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট লুৎফে গালিব আল জাহিদ মৃদুল ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক জানান, তাদের বিরুদ্ধে আইনবহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা শিগগিরই আপিল করবেন।
সমিতির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক একেএম সাইফুল ইসলাম ২০১৮ সালে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি বার ভবনের সামনে প্রবেশ পথে টিনের ছাউনি নির্মাণ, ড্রেনের স্লাব, লাইব্রেরিতে বিদ্যুতের কাজ, সিমেন্ট ক্রয়, বৈদ্যুতিক ডাবল লাইনের সংযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেন। তবে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ক্রয় দেখানো হলেও নেসকো এর বিনিময়ে কোনও টাকা নেয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে বিল করায় তখন তার বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৫২২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।
অন্যদিকে, ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের লুৎফে গালিব আল জাহিদ মৃদুল সভাপতি ও জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের মোজাম্মেল হক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তারা ওই সময় সমিতির বিপুল অংকের টাকা সমিতির সিদ্ধান্তের বাইরে নিজেদের পছন্দে ব্যাংক এশিয়াতে সঞ্চয় করেন। সেখানে কম সুদে টাকা জমা রাখায় সমিতির এক লাখ তিন হাজার টাকার ক্ষতি হয়।