কে এম মাহ্ফুজুর রহমান মিশু:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
আপনাকে জানাই সালাম ও মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা। নিদারুণ অভিঘাতে নিরুপায় হয়ে ৭০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীর হৃদয় নিংড়ানো আকুতি আপনার কাছে তুলে ধরছি। সম্মান এবং বিনয়ের সাথে আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, চলমান শততম অহিংস আন্দোলনের পরেও বার কাউন্সিলের কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় প্রাথমিক ধাপে উত্তীর্ণ ১২,৫০০ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে গেছে। এদিকে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী প্রাথমিক পরীক্ষার প্রতীক্ষায় ব্যাকুল। বার কাউন্সিল আইন অনুযায়ী ৬ মাস পর পর পরীক্ষা গ্রহণ করার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে ২০১৭ সালের পর থেকে কোন লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের সময় নির্ধারিত হলেও কর্তৃপক্ষ কারণবশত সেই পরীক্ষাও গ্রহণ করতে পারেনি। পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রে পরীক্ষার এমন বিড়ম্বনা আছে বলে জানা নেই। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি অন্যান্য ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিক্যাল পেশায় কর্মজীবনে প্রবেশে এমন ধরাবাধা কোন আইন নেই। মানবিক ও বাস্তবিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সনদ প্রদান নতুবা অতিসত্তর লিখিত পরীক্ষার দীর্ঘদিনের সৃষ্ট সমস্যার সুরাহা হোক। একবিংশ শতাব্দীর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে প্রায় মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হওয়া মাতৃভূমিতে আমাদের হতাশার গ্লানিকর পরিস্থিতিতে থেকে রক্ষা করুন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা,
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আইনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি সহ দেশ সেবায় ব্রত গুরুত্বপূর্ণ অনেক কর্তাব্যক্তি এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত আছেন ছিলেন। সেই খাতে এমন নাজেহাল নাস্তানুবাদ অবস্থা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ব্যাপার। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে যুদ্ধ পরবর্তী আপদকালীন সময়ে মোক্তারদেরও অ্যাডভোকেট হিসেবে উন্নতি করেছিলেন। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা হাজার হাজার শিক্ষানবিশদের হৃদয় নিংড়ানো আকুতি মেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মতই ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবেন। The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972 অনুসারে তিনটি ধাপের যে কোন একটি পরীক্ষায় উত্তর্ণীদের ৪০(১) ও ৪০ (২) অনুযায়ী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা সনদ প্রদান করতে আইনি কোন বাধা-নিষেধ নেই। এটি আইন মন্ত্রনালয়ের রুটিন ওয়ার্কমাত্র। দ্রষ্টব্য: (শিক্ষানবিস আইনজীবীদের বাঁচান)
মানবতার মা,
শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের করুন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। আগের মতই পেটে ভাত দিতে হয়; বাবার ঔষুধ কিনতে হয়; পরনে কাপড় পড়তে হয়। সব কান্নার আওয়াজ শুনা যায় না। দ্রষ্টব্য: (আমি শিক্ষানবিশ আইনজীবী বলছি)। পরীক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন মহাদুর্যোগময় পরিস্থিতি বিবেচনায় অটোপাস দেওয়া হয়েছে। বিগত ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রাথমিক ধাপে উত্তীর্র্ণদের সনদ প্রদান অযৌক্তিক কিছু নয়। করোনাকালীন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বাঁচাতে পারে হাজার হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের পরিবার। আপনিতো মমতাময়ী মা। সন্তানের বেদনা নিশ্চয়ই আপনার হৃদয় কে বিগলিত করবে।
জননেত্রী শেখ হাসিনা,
বিগত ২০১৮ সালের মে মাসের বার কাউন্সিলের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুসারে আইনজীবীর সংখ্যা ৪৩,৮৮৪ জন। ২০১৮ সালের ২৩শে ডিসেম্বরে ৭,৭৩২ জন আইনজীবী তালিকাভুক্ত হয়। দুইটি সংখ্যা যোগ করলে হয় ৫১,৬১৬ জন। এর মধ্যে অনেক বিজ্ঞ জেষ্ঠ্য আইনজীবী মৃত্যুবরন করেছেন। ১৮ কোটি জনসংখ্যার এই দেশের তুলনায় আইনজীবী অপ্রতুল। আমাদের প্রতিবেশী দেশের আইনজীবী সংখ্যা ১২ লাখ। প্রতি বছর পরীক্ষায় পাশের হার ৭০ শতাংশ। দ্রষ্টব্য: (শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও বার কাউন্সিল)। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বার কাউন্সিল বেশ কঠিনভাবেই আইনজীবী যাচাই-বাছাই করেন।
গণতন্ত্রের মানসকন্যা,
২০১৪ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান মামলায় মাননীয় আপিলেড ডিভিশন ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ১২ টি নির্দেশনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ছিলো বার কাউন্সিলের প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে এনরোলমেন্ট পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। দ্রষ্টব্য: (শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও বার কাউন্সিল)। বার কাউন্সিল পরীক্ষা না নেওয়ার পিছনের ব্যর্থতার যে বীজ বপিত হয়েছে তা উপরে ফেলতে হবে। পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়া কে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসতে আকুল আবেদন জানাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
ব্যাঙের ছাতার মত গিজ গিজ করে গজে ওঠা আইন কলেজের হিড়িক, বিশ^বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ব্যাবসাধারীদের লাগাম টেনে ধরা সময়ের দাবি। নিচ তলায় মুড়ির দোকান উপর তলায় আইন কলেজ! এমন মান সম্মতহীন শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে মেধাবী এবং অকর্ম্মাদের পার্থক্যের পৃথকায়ন টানা অন্যায় কিছু নয়। দ্রষ্টব্য: (শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের আন্দোলন)।
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা,
ক্রান্তিকালীন মহা সংকটময় এই পরিস্থিতির উন্নতি কবে নাগাদ হতে পারে সেটি নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। গত ২০১৭ সালের প্রাথমিক ধাপ শেষে আড়াই মাসের লিখিত পরীক্ষা হয়েছিলো। এছাড়াও লিখিত খাতা নিরীক্ষার কাজ যেহেতু বিচারপতি মহোদয়বৃন্দ করে থাকেন সেটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এমনিতেই বিচারপতি মহোদয়দের ওপর লক্ষ লক্ষ মামলা ঝুলে আছে সুতরাং এটি অত্যন্ত কম সময়ে নিরীক্ষিত হবে ভেবে নেওয়া অমূলক ব্যাপার।
সামগ্রিক পরিস্থিতির ইতিহাস বিবেচনায় ৭০ হাজার শিক্ষানবীশ এখন আপনার মুখপানে। বড় প্রত্যাশা ও আবেগের জায়গা থেকে আপনাকে খোলা চিঠি দিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি এই জাতির আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। আপনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে প্রত্যাশা করি। আমাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনার জন্য দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
কে এম মাহ্ফুজুর রহমান মিশু: শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।