সুপ্রিম কোর্টের সদ্যপ্রয়াত বিচারপতি রুথ বডার গিন্সবার্গের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে অ্যামি কোনি ব্যারেটকে মনোনয়ন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের আগেই এই পদে ব্যারেটকে নিয়োগ দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই তৎপরতার বিরুদ্ধে এবং প্রয়াত বিচারপতি রুথ বডার গিন্সবার্গের স্মরণে গত শনিবার (১৭ অক্টোবর) ওয়াশিংটনে সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যামি কোনি ব্যারেটের মনোনয়নের ওপর আগামী ২২ অক্টোবর ভোট হওয়ার কথা রয়েছে সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে। যদিও তাঁর এই মনোনয়নের বিরোধিতা করছেন ডেমোক্র্যাটরা। বিরোধিতার মূলে রয়েছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে নিয়োগের বিষয়টি নির্বাচনের পর করা উচিত। নির্বাচনের ঠিক আগে আগে এটা করলে, তার ফল নেতিবাচক হতে পারে।
বিষয়টি এখন বিক্ষোভে গড়িয়েছে। রিপাবলিকানদের ভাষ্য, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ বেশি দিন ফাঁকা রাখা ঠিক নয়। এখানে সরাসরি নির্বাচনের ফল নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হলে তা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ানোর প্রসঙ্গটি এসে যাচ্ছে। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জনতার বক্তব্য ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন এত দ্রুততার সঙ্গে এই নিয়োগ দিতে চাইছে কেন? এটা একটা অপতৎপরতা।
উইমেন’স মার্চ–এর বিক্ষোভকারীরা বলেন, ভোটের ঠিক আগে আগে রিপাবলিকানরা ব্যারেটের নিয়োগ নিশ্চিত করতে চাইছে। অথচ ২০১৬ সালে নির্বাচনের ছয় মাস আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে মেরিক গারল্যান্ডকে মনোনয়ন দিলেও, তারা তখন সে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীবাদী সংগঠন আল্ট্রাভায়োলেটের সোনজা স্পু রয়টার্সকে বলেন, ‘সত্যিটা হচ্ছে আমরা শক্তিশালী, আর তারা আমাদের ভয় পাচ্ছে। তারা জানে তারা সুতার ওপর দিয়ে হাঁটছে, আর আমাদের দিক থেকে প্রবল ঝাঁকুনি আসবে।’
উদারনৈতিক বিচারক হিসেবে পরিচিত গিন্সবার্গ ছিলেন নারীদের মধ্যে ভীষণভাবে জনপ্রিয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হলে সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরও দৃঢ় করতে সচেষ্ট হয় ট্রাম্প প্রশাসন। যেকোনো মূল্যে তারা ৩ নভেম্বরের আগেই গিন্সবার্গের শূন্য পদে বিচারপতি নিয়োগ দিতে চান। এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত অ্যামি কোনি ব্যারেটকে মনোনয়ন দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের অনেকেই সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। ইলিনয় থেকে যোগ দেন ৪৯ বছর বয়সী প্রুডেন্স সুলিভান। ফ্লোরিডা থেকে তাঁর ৪৭ বছর বয়সী বোন কেলি প্যাজেটও যোগ দেন। উভয়েই এই বিক্ষোভে যোগ দেওয়াটাকে কর্তব্য জ্ঞান করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘কোভিডের কারণে আমরা অনেক কিছুই হারিয়েছে। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন বা বর্ণবাদ নিয়ে এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও আমাদের ঝগড়া হয়েছে। ফলে এই একটি জায়গার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতেই হবে। কারণ এটি আমাদের বাক্স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর নিজের বিরক্তির কথা বলতে গিয়ে প্রুডেন্স সুলিভান রয়টার্সকে বলেন, তিনি ও তাঁর আইটি বিশেষজ্ঞ বর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ট্রাম্প যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসেন, তবে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ছাড়বেন।
ব্যারেটের মনোনয়নের পরও এতটা ক্ষোভ দেখা যায়নি। অথচ এখন তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার কিছুদিন আগে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ দেখতে হচ্ছে। এর কারণ রয়েছে সিনেটের শুনানিতে ব্যারেটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা, গর্ভপাত, জলবায়ু পরিবর্তন, ভোটাধিকার, ওবামাকেয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তিনি প্রকাশ করেননি। কারণ হিসেবে বলেছেন, এ সম্পর্কিত বিষয় আদালতে আসতে পারে। ফলে এ নিয়ে তিনি আগে থেকে মন্তব্য করতে চান না। তাঁর এই অবস্থানের কারণেই রক্ষণশীল হিসেবে আগে থেকেই পরিচিত ব্যারেটকে নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও বিশেষত নারীদের মধ্যে সংশয় বেড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, অ্যামি কোনি ব্যারেট শেষ পর্যন্ত নিয়োগ পেলে সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল–উদারনৈতিক অনুপাত হবে ৬–৩। নির্বাচনের ফল নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হলে, তার মীমাংসার জন্য শেষ ধাপ সুপ্রিম কোর্ট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার বলেছেন, এবারের নির্বাচনের ফল পেতে আদালত পর্যন্ত যেতে হতে পারে। এমনকি হেরে গেলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো নিশ্চয়তাও তিনি দেননি। ফলে সুপ্রিম কোর্টে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে আরও দৃঢ় করতে চাইছে রিপাবলিকানরা। সূত্র- প্রথম আলো