মুহম্মদ আলী আহসান: বাংলাদেশে ১৬ কোটির বেশি মানুষের বাস। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ৪০% অর্থাৎ ৬ কোটিরও বেশি শিশু। বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণের জন্য সাংবিধানিক বিধানসহ অনেক আইন রয়েছে।
বাংলাদেশের শিশু অধিকার প্রসঙ্গটির একটি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আছে। ১৯২৪ সালে লীগ অব নেশনস-এর ৫ম অধিবেশনে গৃহীত শিশু অধিকার ঘোষণায় শিশু অধিকারসমূহ প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক দলিলে স্থান পায়। ১৯৫৯ সালের শিশু অধিকার ঘোষণায় শিশুদের বহুবিধ সুবিধা, তাদের নিরাপত্তা ও অগ্রাধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। নতুন ঘোষণাপত্রের অধিকারসমূহ পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিনামায় পুন:সমর্থিত এবং ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ১৯৫৯ সালের ঘোষণার ৩০ বছর পর ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার কনভেনশন গৃহীত হয়। বাংলাদেশ এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করে।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় নীতির মৌলাদর্শ বর্ণনায় শিশু অধিকারের প্রাসঙ্গিক বিধান [অনুচ্ছেদ ১৫, ১৭ এবং ২৫(১)], মৌলিক অধিকারসমূহ [অনুচ্ছেদ ২৭, ২৮(১)(২)(৩)(৪), ৩১, ৩২ এবং ৩৯(১)(২)] এবং বিচার বিচার বিভাগীয় পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা [অনুচ্ছেদ ২৬(১)(২)] রয়েছে। সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১ অনুচ্ছেদে সব ধরনের বৈষম্য থেকে শিশুর নিরাপত্তা বিধানের সাধারণ নীতিমালার উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের এসব অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান ও অভিন্ন নিরাপত্তা লাভের অধিকারী বিধায় পক্ষপাতহীনভাবে তাদের আইনের সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে।
শিশু অধিকার কনভেনশনের অভিপ্রেত বৈষম্যহীনতার নীতি বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারসমূহের অন্তর্ভূক্ত হলেও সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের বিস্তৃত পরিমন্ডলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে যে তাতে প্রায়শই বৈষম্য এড়ানো যায় না। শিশুরা দু’ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়, একটি বয়সভিত্তিক আর অন্যটি লিঙ্গভিত্তিক। সে জন্য দি চিলড্রেন অ্যাক্ট, ১৯৭৪ (The Children Act, 1974) রহিতক্রমে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক শিশু আইন, ২০১৩ প্রণীত হয়।
শিশু আইন, ২০১৩ এর অধীনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, প্রবেশন কর্মকর্তা ও শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে উক্ত মহতী আইনটি প্রয়োগে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে, উক্ত আইনটির সুফল পুরোপুরি শিশুরা ভোগ করতে পারছে না। সে জন্য উক্ত আইনের অধীনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, প্রবেশন কর্মকর্তা ও শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো।
শিশু বিষয়ক ডেস্ক: শিশু আইন, ২০১৩ এর ১৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের প্রত্যেক থানায় ১টি শিশু বিষয়ক ডেস্ক গঠন করবে। যার দায়িত্বে থাকবেন সাব-ইন্সপেক্টর-এর নিম্নে নয় এমন পুলিশ কর্মকর্তা। তবে শর্ত থাকে কোন থানায় মহিলা সাব-ইন্সপেক্টর কর্মরত থাকলে উক্ত ডেস্কের দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিশু বিষয়ক ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে অভিহিত হবেন।
শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কার্যাবলী: শিশু আইন, ২০১৩ এর ১৪ ধারায় শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কার্যাবলী বর্ণিত হয়েছে। উক্ত ধারা অনুযায়ী তিনি শিশু বিষয়ক মামলার জন্য পৃথক নথি ও রেজিস্টার সংরক্ষণ করবেন। কোন শিশু থানায় আসলে বা শিশুকে থানায় আনয়ন করা হলে প্রবেশন কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। শিশুর মাতা-পিতা বা তাদের অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা বর্ধিত পরিবারের সদস্যকে বিস্তারিত তথ্যসহ আদালতে হাজির করার তারিখ জানাবেন। তিনি তাৎক্ষণিক মানসিক সেবা প্রদান করবেন। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং প্রয়োজনে ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রেরণ করবেন। শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জন্ম নিবন্ধন সনদ বা বিশ্বাসযোগ্য দলিলাদি পর্যালোচনা করে শিশুর বয়স সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কি না তাও তিনি লক্ষ্য রাখবেন। তিনি প্রবেশন কর্মকর্তার সাথে যৌথভাবে শিশুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মূল্যায়নপূর্বক বিকল্প পন্থা অবলম্বন বা জামিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বিকল্প পন্থা অবলম্বন বা জামিনে মুক্তি প্রদান করতে সম্ভব না হলে আদালতে প্রথম হাজিরার পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিশুকে নিরাপদ স্থানে প্রেরণ করবেন। তিনি প্রতি মাসে শিশুর মামলার সকল তথ্য প্রতিবেদন আকারে নির্ধারিত ছকে থানা হতে প্রবেশন কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা আইনগত সহায়তা কমিটির নিকট প্রেরণ করবেন। উপরিউক্ত কার্যাবলী সম্পাদনের প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একজন শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা বিধি ধারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্বও পালন করবেন।
প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ: শিশু আইন, ২০১৩ এর ৫ ধারায় প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান দেয়া হয়েছে। উক্ত ধারা অনুযায়ী সরকার প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য এক বা একাধিক প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন। তবে এ আইন কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিদ্যমান অন্য আইনানুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত প্রবেশন কর্মকর্তা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ আইনের অধীন প্রবেশন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়া, কোন এলাকায় প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ না করা পর্যন্ত সরকার প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সমাজসেবা কর্মকর্তা বা সমমানের অন্য কোন কর্মকর্তাকে প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব অর্পণ করতে পারবেন।
প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য: শিশু আইন, ২০১৩ এর ৬ ধারায় প্রবেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য দেয়া হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে একজন প্রবেশন কর্মকর্তা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুকে থানায় আনয়ন করা হলে বা অন্য কোনভাবে আসলে তিনি আনয়ন ও আগমণের কারণ অবগত হবেন। সংশ্লিষ্ট শিশুর সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদানের জন্য আশ্বস্ত করবেন। শিশুর সংশ্লিষ্ট অভিযোগ বা মামলা চিহ্নিত করতে পুলিশের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করবেন। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট শিশুর মাতা-পিতার সন্ধান করবেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পুলিশকে সহায়তা করবেন। তিনি শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে জামিনের সম্ভাবতা যাচাই করবেন এবং সংশ্লিষ্ট মামলার প্রেক্ষাপট মূল্যায়নপূর্বক বিকল্প পন্থা অবলম্বন করবেন। বিকল্প পন্থা অবলম্বন বা জামিনে মুক্তি প্রদান করা সম্ভব না হলে আদালতে প্রথম হাজিরার পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিশুকে শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অন্যদিকে, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু বা আনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুকে শিশু আদালতে হাজির করা হলে উক্ত আদালতে উপস্থিত থাকবেন এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট শিশুকে সঙ্গ প্রদান করবেন। তিনি সরেজমিনে অনুসন্ধানপূর্বক শিশু ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনাক্রমে সামাজিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং আদালতে দাখিল করবেন। এছাড়া, শিশুকে প্রয়োজনে জেলা আইনগত সহায়তা কমিটির মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রদানসহ শিশুর পক্ষে আইনগত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবেন। তবে তিনি প্রয়োজনে ন্যায় বিচারের স্বার্থে বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ এবং শিশুর পক্ষে আইনগত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবেন।
পাশাপাশি, আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা কোন প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হলে প্রত্যেক শিশুর জন্য পৃথক নথি প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করবেন। শিশু আইন, ২০১৩ এর ৮৪ ধারায় বর্ণিত পদ্ধতি (বিকল্প পরিচর্যা) অনুসরণ ও যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত করবেন। তিনি নিয়মিত বিরতিতে শিশুর সাথে সাক্ষাৎ করবেন বা শিশুর ইচ্ছা অনুযায়ী সময়ে সময়ে দেখা সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া, শিশুর মাতা-পিতা, বর্ধিত পরিবার বা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক শিশুর তত্ত¡াবধানে শর্তাবলী সঠিকভাবে পালন করছেন কি না তা পর্যাবেক্ষণ করবেন। শিশুর আনুষ্ঠানিক ও কারিগরী শিক্ষা সঠিকভাবে প্রদান করা হচ্ছে কি না তা তিনি সরেজমিনে তদারকি করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়মিত বিরতিতে শিশুর আচরণ ও শিশুর জন্য গৃহীত ব্যবস্থার যথার্থতা সম্পর্কে আদালতকে জানাবেন এবং আদালত কর্তৃক তলবকৃত প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন। তিনি শিশুকে সৎ উপদেশ প্রদান করবেন। শিশুর সাথে যথা সম্ভব বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী করে তাকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করবেন। তিনি বিকল্প পন্থা (Diversion) বা বিকল্প পরিচর্যা (Alternative care) সঠিকভাবে শর্তানুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবেন। একজন প্রবেশন কর্মকর্তা উপরিউক্ত দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিধি ধারা নির্ধারিত তার উপর অর্পিত যেকোন দায়িত্ব পালন করবেন।
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দায়িত্ব ও কর্তব্য: শিশু আইন, ২০১৩ এর অধীনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের করণীয় বিষয়ে মাননীয় বিচারপতি জনাব এম. ইনায়েতুর রহিম ও মাননীয় বিচারপতি জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ফৌজদারী আপীল নং-৭৫৩৩/২০১৯ এর গত ০১ আগস্ট, ২০২০ খ্রিঃ তারিখে প্রচারিত রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, সরকার কর্তৃক আইনের যথাযথ সংশোধন বা স্পষ্টীকরণ সম্পর্কে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত শিশুর সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহকে নিম্নলিখিত কার্য পদ্ধতি/প্রণালী (Procedure) অনুসরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে-
সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কেবলমাত্র মামলার তদন্ত কার্যক্রম তদারকি করবেন এবং এ সংক্রান্তে নিত্যনৈমিত্তিক (routine work) প্রয়োজনীয় আদেশ এবং নির্দেশনা প্রদান করবেন। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু (ভিকটিম এবং সাক্ষী) বা আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুর জবানবন্দি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করতে পারবেন। তদন্ত চলাকালীন সময়ে আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুকে মামলার ধার্য তারিখে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা হতে অব্যাহতি দেয়া যেতে পারে। তবে, তদন্ত চলাকালে আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুর রিমান্ড, জামিন, বয়স নির্ধারণসহ অন্তবর্তী যেকোন বিষয় শিশু আদালত নিষ্পত্তি করবে এবং এ সংক্রান্ত যেকোন দরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল হলে সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে প্রেরণ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট শিশু আদালত ঐ বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করবে। নালিশী মামলার ক্ষেত্রে শিশু কর্তৃক বিশেষ আইনসমূহের অধীনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিশেষ আদালত বা ক্ষেত্রমত, ট্রাইব্যুনাল শিশু আইনের বিধান ও অত্র রায়ের পর্যবেক্ষণের আলোকে অভিযোগ (complaint) গ্রহণের পর প্রয়োজনীয় আইনি কার্যক্রম গ্রহণের পরে অপরাধ আমলে গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কাগজাদি (নথি) সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করবে; অত:পর ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধ আমলে গ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান এবং অপরাধ আমলে গ্রহণ করলে পরবর্তীতে কাগজাদি বিচারের জন্য শিশু আদালতে প্রেরণ করবেন। শিশু আইনের প্রাধান্যতার কারণে বিশেষ আইনসমূহের অধীনে জি.আর মামলার ক্ষেত্রে শিশু কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের জন্য পৃথক পুলিশ রিপোর্ট দেয়ার বিধান থাকায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে অপরাধ আমলে গ্রহণ করবেন।
উপরন্তু জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দায়িত্ব সম্পর্কে মাননীয় বিচারপতি জনাব মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও মাননীয় বিচারপতি জনাব মহি উদ্দিন শামীম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত রুল নং-১৬/২০২০ এর গত ০৮ অক্টোবর, ২০২০ খ্রিঃ তারিখের আদেশে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে,
“We also find to have no jurisdiction by the Senior Judicial Magistrate either to entertain the case or allow police to produce the children before it let alone send them to children development centre. Jashore which is the absolute jurisdiction of the children court who can only determine the detention of children……………..”
মাননীয় আদালতের উক্ত রায় অনুযায়ী শিশুকে গ্রেফতারের পর তাকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করার এবং শিশুকে উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর কোন এখতিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাই। শিশু আইন, ২০১৩ এর ৫২(৪) ধারা অনুযায়ী শিশুকে গ্রেফতারের পর প্রয়োজনীয় ভ্রমণ সময় ব্যতীত ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ শিশু আদালতে হাজির করতে হবে।
শিশু আদালত, ২০১৩ এর অধীনে শিশু আদালত, জুুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, প্রবেশন কর্মকর্তা ও শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা একে অপরের পরিপূরক। তাই, তাদেরকে সমন্বিতভাবে পরস্পর সহযোগিতা করে শিশু আইন, ২০১৩ এর উদ্দেশ্যে পূরণে একযোগে কাজ করতে হবে।
কৃতজ্ঞতা ও তথ্যসূত্র :
১। বিচারপতি জনাব এম. ইনায়েতুর রহিম
এবং
বিচারপতি জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
ফৌজদারী আপীল নং-৭৫৩৩/২০১৯
২। বিচারপতি জনাব মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া
এবং
বিচারপতি জনাব মহি উদ্দিন শামীম
সো মোটু রুল নং-১৬/২০২০
৩। শিশু আইন, ২০১৩
৪। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি
কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাপিডিয়া
মুহম্মদ আলী আহসান: চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মৌলভীবাজার।