তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে ঘটা মারামারির একটি মামলায় সায়মা খাতুন নামে পাঁচ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা আসামি ও তার স্বামী জাকির হোসেনকে ব্যতিক্রমধর্মী সাজা দিয়েছেন রাজশাহীর একটি আদালত।
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম এই দম্পতিকে কারাগারে না পাঠিয়ে কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনের শর্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে প্রবেশনে থেকে সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছেন।
তাদের বাড়ি গোদাগাড়ী থানাধীন ছোট নারায়ণপুর গ্রামে। উভয়েই দিনমজুর এবং মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
চার বছর আগের একটি ঘটনায় গত ১২ নভেম্বর এ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায় ঘোষণাকালে আদালত বলেন, আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হলেও সায়মা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য অনাগত সন্তানের জন্ম পরিকল্পিত এবং নিরাপদ হওয়া আবশ্যক। বর্তমানে কারাগারে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ কয়েদির বদ্ধ পরিবেশে বসবাসের কারণে করোনাকালে সেখানে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত দুরূহ ব্যাপার।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারে মা ও অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ঝুকিপূর্ণ। তাই আসামিদের অপরাধের ধরন, বয়স, অনাগত সন্তান ও মায়ের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ প্রসব ইত্যাদি বিবেচনায় তাদের প্রবেশনের সুযোগ দেওয়া সমীচীন।
এই সুযোগের বিপরীতে আসামিদের আদালত আরোপিত শর্ত অবশ্যই মেনে চলতে হবে। না মানলে আসামিকে অবশ্যই ছয় মাসের সাজা ভোগের জন্য জেলে যেতে হবে।
আর শর্ত ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করবেন প্রবেশন অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম।
প্রবেশন কর্মকর্তা বলেন, আসামি সম্পর্কে আদালতে আমরা একটি প্রাক-প্রতিবেদন পাঠাই। প্রতিবেদনে এটি তার প্রথম অপরাধ কিনা, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা, প্রতিবেশীরা তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়। আদালতে প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত দেন।
প্রবেশনাধীন আসামি জাকির হোসেন বলেন, এই সুযোগ তিনি কাজে লাগাবেন। নিজেদের সংশোধনের জন্য প্রবেশন অফিসারের নির্দেশনা মতো চলাফেরা করবেন। স্ত্রীর যত্ন নিয়ে একটি ভালো পরিবেশে সন্তান জন্মদানের চেষ্টা করবেন।
এদিকে, রাজশাহী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে এমন সাজাপ্রাপ্ত অন্তত ২৬ আসামিকে অপরাধের জন্য কারাগারে যেতে হয়নি। ছোটখাটো অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে সংশোধনের মাধ্যমে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ‘প্রবেশন’ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাড়িতে থাকার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিছু শর্তসাপেক্ষে বাড়িতেই তারা সাজা খাটছেন।
‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০’ অনুযায়ী এমন সুবিধা পাচ্ছেন তারা। আইনে প্রবেশন হচ্ছে কোনো আসামির প্রাপ্ত দণ্ড বা শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বাসায় পারিবারিক পরিবেশে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া।
রাজশাহী আদালতের আইনজীবী শামীম আহমেদ বলেন, প্রথম ও লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন খুব ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে আসামিরা নিজেদের সংশোধনের চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন। আদালতের নির্ধারিত সময়ে তারা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকেন। এর ফলে একদিকে মামলার জট কমবে এবং কারাগারগুলোতেও আসামিদের চাপ কমবে।