শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য র্যাগিং ও অ্যান্টি বুলিং নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়েছে।
গত সপ্তাহের বুধবার (২ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি সাহেদ নুর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সহপাঠীদের দ্বারা যদি কোনো শিক্ষার্থী বুলিং বা র্যাগিংয়ের স্বীকার হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা (বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ডিগ্রি কলেজ ও ডিগ্রি মাদরাসার প্রিন্সিপাল এবং মাধ্যমিকে প্রধান বা হেডমাস্টার) এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিন্তু এর আগে বুলিং বা র্যাগিংয়ের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে কোনো নির্দোষ শিক্ষার্থী মিথ্যা অভিযোগের স্বীকার না হয়। আবার এসব ঘটনা যেন অপ্রকাশিত না থাকে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বুলিং ও র্যাগিংয়ে শাস্তির বিষয়েও বলা আছে এ নীতিমালায়। এতে আরও বলা আছে কেউ বুলিং ও র্যাগিং করলে প্রচলিত আইনে সাজা হবে। কেউ অপরাধ করলে তার অপরাধের বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন। এটি তার দায়িত্ব। এই নীতিমালা নতুন শিক্ষা আইনে সংযুক্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি চৌধুরীর আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কমিটিতে একজন অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব, আইনজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও বিচারক থাকবেন। তারা অরিত্রি আত্মহত্যার ঘটনা ছাড়াও সারাদেশে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় জড়িত, কারা দায়ী, এ ধরনের ঘটনা রোধে করণীয় এবং এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলেন। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালা তৈরির পর আজ তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দেয়ার সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষার্থীর সামনে বাবা-মাকে অপমান করায় নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারী (১৫) আত্মহত্যা করে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত আত্মহত্যার এ ঘটনা আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী অনীক আর হকসহ সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী। অন্য আইনজীবীরা হলেন- জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনুন্নাহার সিদ্দিকা ও জেসমিন সুলতানা। অনিক আর হক জানিয়েছিলেন, এ ধরনের ঘটনা দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধিকালে তাদের কাউন্সিলিং এবং শিক্ষকদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন করে কাউন্সিলর নিয়োগের পদ তৈরি ও নিয়োগের বিষয়গুলো তুলে ধরে একটি নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনীয়তা ছিল।
এর আগেও একই বিষয় হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরে আদালত তাকে এ ঘটনায় রিট দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিলেন।