রংপুর নগরীর আদর্শপাড়া এলাকায় ১২ বছরের এক গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে অধস্তন আদালতের এক বিচারকসহ চারজনের বিরুদ্ধে শিশু আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ওই মেয়ের মা (৪৫) বাদী হয়ে প্রথমে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত যুগ্ম দায়রা জজ রেজাউল বারী রিপন (৪৫) বর্তমানে নওগাঁ জেলায় কর্মরত রয়েছেন।
মামলায় বাসার মালিক বিচারক রেজাউল বারী রিপন ছাড়াও তার দন্ত চিকিৎসক স্ত্রী কার্ণিজ আফি কান্তা (৩৫), শাশুড়ি খালেদা বেগম (৫৫) এবং শ্যালিকা শাপলা বেগমকে (৪০) আসামি করা হয়েছে।
ওসি তদন্ত রাজিফুজ্জামান জানান, নির্যাতনের শিকার শিশুটি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছে।
মামলা ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার শিশুটি কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের এক নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। কিশোরগঞ্জের বগুলাগাড়ি (আদর্শপাড়া) এলাকার ডালিম চন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মাসিক একহাজার টাকা বেতনে তাকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজের জন্য রংপুর শহরের আদর্শপাড়া মহল্লার দন্তচিকিৎসক কান্তা বেগম এবং রেজাউল বারী দম্পতির বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রায় দুই বছর ধরে শিশুটি সেখানে কাজ করতো। গত ২১ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে ১২৫ টাকা চুরির সন্দেহে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে মারধরের পর শরীরের বিশেষ স্থানে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়।
পরে খবর পেয়ে ২৮ নভেম্বর বিকেলে ডালিম চন্দ্র রায়সহ শিশুটির মা রংপুরের ওই বাসায় যান। সেখানে গেলে বিচারকের পরিবার মেয়ের মাকে জানান, তার মেয়ে টাকা চুরি করেছে। তাই তারা তাকে আর বাসায় রাখবে না।
এ অবস্থায় কার্ণিজ আফি কান্তা ও তার স্বামী একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েকে তার মায়ের হাতে তুলে দেন। মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে গেলে সেখানে মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীকে বিস্তারিত মা।
একই গ্রামের বাসিন্দা নুরউদ্দিন বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিস্তারিত জানাই। এরপর পুলিশ এসে ৩০ নভেম্বর শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে পুরো ঘটনা জানিয়ে নির্যাতনের শিকার শিশুর মা কিশোরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ সদস্যের সহায়তায় শুক্রবার তাদের রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শনিবার রাতে যুগ্ম দায়রা জজসহ চারজনকে আসামি করে মামলা রেকর্ড করা হয়।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) শহিদুল্লাহ কাওছার মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মফিজুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। যেহেতু ঘটনাস্থল রংপুর নগরীর আদর্শপাড়া মহল্লায় এবং ওই এলাকাটি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীন, সে কারণে এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মামুনুর রশিদ পিপিএম জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটির জৈবিক পরীক্ষার কার্যক্রম চলছে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুর চিফ-জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ কার্যবিধিতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হচ্ছিল বলে তিনি জানান। সূত্র- ইত্তেফাক