বিচারকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করতে না হয়।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস, ২০২০ উপলক্ষে শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। তিনি বঙ্গভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সবাই তাঁদের মেধা ও মনন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন।
এ সময় তিনি বলেন, বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করতে না হয়।
তিনি বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।” তাই মনে রাখতে হবে, একজন বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার পাওয়া তাঁর অধিকার। আর নাগরিকের সে অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে দয়া বা অনুকূল্যের কোনো বিষয় নেই।’
সুপ্রিম কোর্ট পবিত্র সংবিধানের অভিভাবক। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। নানা বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন সুসংহত করতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
জাতির ক্রান্তিকালে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, তখনই সুপ্রিম কোর্ট মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও সংবিধানকে রক্ষা করেছে এবং করে যাচ্ছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আইনজীবীগণ বিচারব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ। আইনজীবীদের সহায়তা ছাড়া বিচারের কাজ কিছুতেই অগ্রসর হতে পারে না।’
জ্ঞানের চর্চায় আইনজীবীরা আগের চেয়ে আরও এগিয়ে যাবেন এবং তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা, সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি নিজে একজন আইনজীবী হিসেবে জানি, বিচারকাজ কত কঠিন ও জটিল। বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় একজন বিচারককে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং বিচারকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম হলো শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ তৈরি করা। আবদুল হামিদ বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, বিরোধের মীমাংসা যথাযথভাবে না হলে আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। এ প্রক্রিয়া বারবার চলতে থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
দেশের আদালতে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও দুর্গত বিচারপ্রার্থীরা মামলার শুরু থেকে নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত সব আইনগত সহায়তা পাবে বলে আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই সময়েও মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য তিনি এ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।’
আদালতের সব কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু “কোর্ট অব রেকর্ড”, সেহেতু এর সব নথি এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সব কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।’
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, আইনজীবী ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এ সময় বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাস নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।