হত্যা মামলায় আসামির অব্যাহতি চেয়ে বাদীর আবেদনে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট বাদীর বিরুদ্ধেই মামলা করার নির্দেশ দিলেন।
জানা গেছে, মেয়েকে হত্যার দায়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন জলিল দুয়ারী। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বলেন, তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তাই জামাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিলে তার কোনো আপত্তি নেই।
এমন ঘটনায় মামলার আসামিকে জামিন দিয়ে বাদী তথা মেয়ের বাবার বিরুদ্ধেই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মেয়ের বাবার বক্তব্য সম্বলিত এফিডেভিট দেখে জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে মামলায় বাদী তথা মেয়ের বাবা জলিল দুয়ারীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মামলা করতে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার আসামি মোহাম্মদ কাউসার গাজীকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদ মিয়া। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঝালকাঠির মেয়ে সাথী আক্তারকে তার স্বামী পটুয়াখালীর মোহাম্মদ কাউসার গাজী হত্যা করেছেন বলে মামলা করেন সাথীর বাবা জলিল দুয়ারী। এরপর আসামি কাউসার গাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে কাউসারকে কারাগারে পাঠান আদালত। পরে এই মামলায় সাথীর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে ফারিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বলে, ‘আম্মুকে আব্বু লাঠি দিয়ে মাথায় এবং দাদা শরীরে আঘাত করে মেরে ছাগলের রশি দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে।’
অন্যদিকে, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আঘাতের ফলে সাথীর মৃত্যুর বিষয়টি উঠে আসে।
এই ঘটনার একপর্যায়ে মামলায় জামিন আবেদন করেন আসামি মোহাম্মদ কাউসার গাজী। সেই সঙ্গে জামিন আবেদনে মামলার বাদী তথা সাথীর বাবার বক্তব্য সম্বলিত একটি এফিডেভিট সংযুক্ত করা হয়।
সে এফিডেভিটে সাথীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে সাথী আক্তারের দুটি সন্তান রয়েছে। আমার মেয়ে তার জামাইকে ভুল বুঝে তার সাথে রাগান্বিত হয়ে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অন্যের দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। ওই আত্মহত্যায় আমার মেয়ের জামাই ও তার বাবা-মা জড়িত নয়। কিন্তু কিছু কুচক্রি লোকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে জামাই দুটি নাবালক সন্তানের পিতা। ওদের ভবিষ্যতের জন্য এই মামলাটি পরিচালনা করার আবিশ্যকতা নেই। তাই এই মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতি দিলে আমার কোনো আপত্তি নেই।’
সাথীর বাবার বক্তব্য সম্বলিত এফিডেভিট দেখে জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামি মোহাম্মদ কাউসার গাজীকে জামিন দেন। তবে, এমন কাজ করার কারণে মামলার বাদী তথা মেয়ের বাবা জলিল দুয়ারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পটুয়াখালী সদর থানার ওসির প্রতি নির্দেশ দেন আদালত।