মৌলভীবাজার জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত কনফারেন্সে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ জিয়াউর রহমান; অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোঃ বাহাউদ্দিন কাজী; সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ; বিজ্ঞ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতি, বিজ্ঞ অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর; আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল; সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি মেডিকেল অফিসার; বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ; বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন বিভাগ, সিলেট-এর প্রতিনিধি; কোম্পানি কমান্ডার, র্যাব-৯, শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প-এর প্রতিনিধি ডিএডি, জেল সুপারের প্রতিনিধি জেলার; প্রবেশন কর্মকর্তা; জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (ওজঝঙচ); কোর্ট ইন্সপেক্টর; ইন্সপেক্টর, সিআইডি; ইন্সপেক্টর, পিবিআই, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এবং জেলার বিভিন্ন থানার ও জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জগণ উপস্থিত ছিলেন।
কনফারেন্সের শুরুতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান ১৯৭১ সনের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া বীরদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন এবং মুজিব বর্ষের, বিজয়ের মাসের ও ইংরেজি নববর্ষের অগ্রীম শুভেচ্ছা জানান।
অত:পর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান স্বাগত বক্তব্যে মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মামলার বিবরণ ও বিভিন্ন থানার মূলতবী পরোয়ানার বিবরণ তুলে ধরেন এবং জেলার বিভিন্ন থানায় তদন্তাধীন থাকা মামলার তদন্ত কার্য দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করত: তাদের নিরাপত্তা বিধান, গ্রেফতারের পর আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করার, পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার এবং মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বিচারক ও থানার অফিসার ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান তার বক্তব্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তাধীন মামলার পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট সরবরাহ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধির এবং মাদকের মামলায় আইনানুযায়ী জব্দ তালিকা প্রস্তুতের বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অপরদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আহমদ ফয়সাল জামান দ্রুত সময়ের মধ্যে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট সরবরাহে পুলিশ বিভাগকে সার্বিক সহায়তা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত ও আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর ক্ষেত্রে শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী যথাযথভাবে যার যার দায়িত্ব প্রতিপালনের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট, প্রবেশন কর্মকর্তা ও অফিসার ইনচার্জগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এছাড়াও, বক্তাগণ দ্রুত গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া, ক্রোকী পরোয়ানা তামিল ও সমন জারির ব্যবস্থা গ্রহণ, তদন্ত কার্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, হয়রানী বন্ধ, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন, নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা করা, মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রুত রেকর্ডরুমে প্রেরণ, আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ কনফারেন্সে তুলে ধরেন।
বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনি সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করত: সমাপনী বক্তব্যে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান বলেন যে, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক।
মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন ওই বিচারক।
এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয় মন্তব্য করে সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে আগত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান।