দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে জামিন দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে তার অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে।
আজ রোববার (৩ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের মীর নাছিরের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
গত ১৬ নভেম্বর মীর নাসিরের জামিনের বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ।
দুদকের করা মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ গত ৮ নভেম্বর মীর নাছির বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ওই দিন তার পক্ষে করা জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
আত্মসমর্পণের পর মীর নাছির আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) দায়ের করেন। একইসঙ্গে জামিনও চান।
উল্লেখ্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (জরুরি অবস্থার ১/১১ এর সময়) অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে করা মামলায় মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলাল উদ্দিনের সাজা বহাল রেখে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু তা না করে তারা আপিল আবেদন করায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ গত ১৫ অক্টোবর তাদের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন।
এরপর গত ৮ অক্টোবর ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মীর নাছির। সেদিন বিচারক এ এস এম রুহুল ইমরান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করার পাশাপাশি জামিন চেয়ে আবেদন করেন মীর নাছির। ওই দিন তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হলে আদেশের জন্য রাখেন আপিল বিভাগ।
এদিকে একই মামলায় দণ্ডিত মীর নাছিরের ছেলে মীর হেলাল উদ্দিন গত ২৭ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন মীর হেলাল। সঙ্গে জামিনও চান। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বারজজ আদালতের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান গত ১ নভেম্বর মীর হেলালকে এ বছরের ৩১ মে পর্যন্ত তাকে জামিন দেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মীর নাসির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর গুলশান থানায় দুদক মামলা করে। এ মামলায় বিশেষ জজ আদালত একই বছরের ৪ জুলাই রায়ে মীর নাসির উদ্দিনকে ১৩ বছর ও মীর হেলালকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন।
বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মীর নাসির ও মীর হেলাল হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। ২০১০ সালের ১০ আগস্টে হাইকোর্ট মীর নাসির ও মীর হেলালের সাজা বাতিল করে রায় দেন। হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল চেয়ে আপিল আবেদন করেন দুদক।
শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করেন। একইসঙ্গে বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবা-ছেলের করা পৃথক আপিল হাইকোর্টে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের ১৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। হাইকোর্টের এই রায়ের অনুলিপি আসামিদের হাতে পাওয়ার এবং বিচারিক আদালতে পৌঁছার তিন মাসের মধ্যে তাদের বিচারিক (নিম্ন) আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। ওই আদেশ মোতাবেক আসামি মীর হেলাল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।