বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে এক শিক্ষানবিশ আইনজীবী আটক হবার পরে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রীয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশী নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বজনরা।
এঘটনায় এলাকাবাশী বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধও করেছে। ডিবি পুলিশ আটকের পরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হলেও বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শেবাচিম হাসপাতালের প্রিজন সেলে নেয়া হলে মধ্য রাতের পরে রেজাউল করিমের মৃত্যু হয়।
গত মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টায় নগরীর সাগরদী আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন হামিদ খান সড়ক থেকে রেজাউলকে আটক করেছিল বরিশাল নগর ডিবি পুলিশের এস আই মহিউদ্দিন মাহি। ওই রাতেই তাকে ৪ পিস নেশা জাতীয় ইনজেকশন ও ১৩৮ গ্রাম গাঁজা সহ গ্রেফতার দেখিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরদিন বুধবার রেজাউল করীমকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
রেজাউলের মৃত্যুতে পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা হাসপাতালে ছুটে যান। তাদের কান্নাকাটিতে হাসপাতালে বেদনা বিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তার স্ত্রী মারুফা আক্তার হাসপাতালের বারান্দায় বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন।
হাসপাতালে উপস্থিত পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেজাউল নেশা করত। তবে মাদক বিক্রি করতনা। এসআই মহিউদ্দিন তাকে ফাঁসিয়েছে বলে পরিবারে অভিযোগ।
স্ত্রী মারুফা সাংবাদিকদের বলেছেন, এসআই মহিউদ্দিন নির্যাতন করে তার স্বামীকে হত্যা করেছে। ৬ বছর আগে মারুফা আক্তারের বিয়ে হলেও তাদের কোন সন্তান ছিলনা।
রেজাউলের বাবা মো. ইউনুস সাগদরী বাজারে গোসত বিক্রেতা। তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট আজিজুল করীম ওষুধ প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিনে প্রকৌশলী পদে চাকুরী করেন। বড় রেজাউল মাষ্টার্স ও বরিশাল ল কলেজ থেকে আইন পাশ করার পর বার কাউন্সিলের সনদের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহ সাজুর জুনিয়র হিসাবে কাজ করতেন বলে জানান বন্ধু আতিকুল ইসলাম।
রেজাউলের বাবা মো. ইউনুস জানান, মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রেজাউল বাসা সংলগ্ন হামিদ খান সড়কের মুখে একটি চায়ের দোকানে বসা ছিলেন। এসময় ডিবির এসআই মহিউদ্দিন একটি মাইক্রোতে এসে রেজাউলের জামার কলার ধরে অদুরে অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে যায়।
এসআই মহিউদ্দিন রেজাউলকে বলেন, আমাকে দুটি ছেলে ধরিয়ে দে, আমার দুটি মামলা লাগবে। রেজাউল অস্বীকার করলে বলে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে, না হলে তোকেই ফাঁসিয়ে দেব।
ইউনুস জানান, তিনি সহ অন্যরা ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে জটলার সৃষ্টি হয়। এসময় এসআই মহিউদ্দিন দুটি সিরিঞ্জ ও দুটি অ্যাম্পুুল দেখিয়ে বলেন, নেশা জাতীয় এ ইনজেকশন রেজাউলের সঙ্গে পাওয়া গেছে। পরে তাকে তরিঘরি করে গাড়িতে তুলে নিয়ে ডিবির ঐ এসআই। রাতে তারা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রেজাউলের সাথে দেখা করতে চাইলেও অনুমতি দেননি এসআই মহিউদ্দিন।
মৃত রেজাউলের ভাই আজিজুল বলেন, এসআই মহিউদ্দিন মাহি তার ভাইকে আটক করে নিয়ে আসার পর তাকে কোথায় রাখা হয়েছে, কখন থানা থেকে আদালতে পাঠিয়ে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে কিছুই তাদেরকে জানানো হয়নি। পরিবার থেকে বারবার যোগাযোগ করা হলে এসআই মহিউদ্দিন মাহি বলেছেন, রেজাউলকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
পিতা মো. ইউনুস বলেন, শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বরিশাল কারাগার থেকে ফেনে জানানো হয়, আপনার ছেলে বাথরুমে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ খবর পেয়ে ছোট ছেলে আজিজুল হাসপাতালে এসে রেজাউলকে মুমুর্ষ অবস্থায় দেখতে পান।
রেজাউলের বন্ধু আতিকুল ইসলামও শনিবার সর্বক্ষণিক হাসপাতলে ছিলেন। তিনি বলেন, রেজাউলের কোমরের নিচে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। রেজাউল তাকে বারবার বলেছে সে বাঁচবে না। তাকে শনিবার ৩ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।
এ মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন। তবে জানা গেছে, রক্তক্ষরণে রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে বলে মৃত্যু প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেছেন, মাদক মামলার আসামী রেজাউল অসুস্থ হয়ে শেবাচিম হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা গেছে। কিভাবে সে অসুস্থ হলো তা ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যাবে।
তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, রক্তক্ষরণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সে মাদকাসক্ত ছিল। ইনজেকশনের ক্ষতও রয়েছে তার শরীরে। স্বজনরা আবেগে পুলিশী নির্যাতনের অভিযোগ আনতে পারেন বরে জানিয়ে এসব অভিযোগ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশ কমিশনাার। সূত্র- ইনকিলাব