প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য ইন্টারপোলের সদর দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
রেড অ্যালার্ট জারির অগ্রগতির বিষয়ে শুনানিতে আজ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এমন তথ্য জানানো হয়।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির বিষয়ে হাইকোর্টে আজ শুনানি হয়। পরে আগামী ২০ জানুয়ারি মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সঙ্গে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবীন রব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। এছাড়াও ছিলেন আইনজীবী মো. মোশাররফ হোসেন।
প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা পি কে হালদারের কানাডার হোল্ডিংয়ের ঠিকানা ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে কানাডা সরকার।
এরপর সেদিন জানানো হয়, যেকোনো দিন পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারে ইন্টারপোল। সেটা দুয়েকদিনের মধ্যেই হতে পারে। চাইলে আজও রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
তারই আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো চিঠি ইন্টারপোলের সদর দফতরে পৌঁছেছে।
এদিকে পি কে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের পরিবারসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীদের এ মামলায় পক্ষভুক্ত করে আদেশ দেন আদালত। এ সময় তাদের আত্মসাৎকৃত টাকা ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা।
পরে আদালত তাদের আইনজীবী ছাড়াই মামলা পরিচালনা করার জন্য বলেছেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলমকে বলেছেন তাদের (ওই চারজনের) বক্তব্য এফিডেভিট আকারে আদালতে জমা দেয়ার জন্য। আজ সেটি জমা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
ওই দিন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নেন পিকে হালদারের পিপলস লিজিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চার বিনিয়োগকারী। যাদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের বড় মেয়ে ড. নাশিদ কামাল, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা শওকত-উর রহমান ও ক্যান্সারে আক্রান্ত সামিয়া বিনতে মাহবুব।
তারা জীবনের শেষ সম্বলটুকু ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানান। এ সময় তারা পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও অর্থপাচারের ঘটনায় অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধেও।
পরে ৫ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলেও ঠিক করেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটির শুনানি হয়েছে।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান হাইকোর্ট। ৩ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে বলা হয়।
এদিকে, গতকাল সোমবার (৪ জানুয়ারি) সকালে পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠজন শঙ্খ বেপারীকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। পি কে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় শঙ্খ বেপারীকে ওইদিন সকালে দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, তার নামে রয়েছে পি কে হালদারের একটি ফ্ল্যাট। আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেন তদন্ত কর্মকর্তা।
দুদক সচিব জানান, পিকে হালদারের ফ্ল্যাটটি কিভাবে ও কেন শঙ্খ বেপারীর নামে- তা নিয়েই ছিল জিজ্ঞাসাবাদ। তবে জিজ্ঞাসাবাদের বক্তব্যে পি কে হালদারের এমন আরো সম্পদ গচ্ছিত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর পিকে হালদারের ২টি ফ্ল্যাট ও প্রায় ৬ একর জমি জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। সুবিধাজনক সময়ে কোটি টাকার এসব সম্পদ জব্দ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আদেশ দিয়েছেন বিচারিক আদালত।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সবমিলিয়ে প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি অর্থপাচার মামলায় পিকে হালদার ও তার পরিবারের ৮ সদস্যসহ পিপলস লিজিংয়ের ১২ জনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ রাখার আদেশ আপিল বিভাগে বহাল থাকে।
বিদেশে পলাতক পিকে হালদারের একাধিক বান্ধবীর নামে ৭০-৮০ টি অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাও করা হয়েছে।