ঝিনাইদহের মহেশপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হামলার ঘটনায় মামলা করায় সাক্ষীর পরিবারসহ বাদী আইনজীবীকে একঘরে করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই আইনজীবীর নাম নুর-ই-আলম। মাসখানেক ধরে উপজেলার জলিলপুর গ্রামের দুটি পরিবারের ১০ জন সদস্য কারও সঙ্গে মেলামেশা করতে পারছেন না। গ্রামের দোকানিরাও তাঁদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন না। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থা তাঁদের।
আইনজীবী নূর-ই-আলমের ভাষ্য, তিনি ঢাকায় আইন পেশায় যুক্ত। তাঁর বাবা শামছুল আলম মহেশপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। তাঁর চার বোন। তাঁদের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়েছে। অপর তিনজন জলিলপুর গ্রামেই থাকেন।
গ্রামের মহিদুল ইসলাম, কিয়ামত আলী ও নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে জমি নিয়ে তাঁদের বিরোধ চলছে। এর জেরে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাত নয়টার দিকে তাঁরা তাঁর বাড়িতে হামলা চালান।
তাঁরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে গেলে তাঁর বোনরা তাঁকে রক্ষা করতে আসেন। তখন তাঁর এক বোনকে মারধর করা হয়। পরের দিন তিনি ঝিনাইদহ আদালতে এই তিনজনের নামে মামলা করেন।
এই মামলা দায়েরের পর গ্রামের কয়েকজন সমাজপতি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তাঁদের সঙ্গে অন্যদের মেলামেশা না করতে বলেন। এটা প্রকাশ্য কোনো ঘোষণা ছিল না বলে অনেকেই মিশতেন, আবার অনেকেই মিশতেন না।
নূর-ই-আলমের ভাষ্য, তাঁর করা মামলার তিনজন সাক্ষীর একজন গ্রামের দরিদ্র কৃষক সিরাজুল ইসলাম স্ত্রী সাবিনা খাতুন। গত ২২ নভেম্বর গ্রামের সমাজপতিরা সাবিনার বাড়িতে গিয়ে সাক্ষী হওয়ার কারণ জানতে চান এবং এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।
তখন সিরাজুলের পরিবারের সঙ্গে না মিশতে গ্রামের লোকজনকে বলে দেন সমাজপতিরা। সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর সমাজপতিরা গ্রামে সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি পরিবারকে একঘরে করে দেন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদ আলী। সভার সিদ্ধান্ত পরের দিন বাড়ি বাড়ি জানিয়ে দেওয়া হয়।
আইনজীবীর করা মামলার আসামি মহিদুল ইসলামের ভাষ্য, তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সমাজের সবাই এর প্রতিবাদ করেছেন। যাঁরা সমাজ মানেন না, তাঁদের সমাজের বাইরে রাখা হয়েছে। সমাজের লোকজন টাকা তুলে আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা লড়বেন বলে সমাজপতিদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইনজীবীর করা মামলার সাক্ষী সাবিনা খাতুনের ভাষ্য, সমাজের লোকজনের দায়ের করা মামলায় তাঁর স্বামী-সন্তানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। পরে তাঁরা জামিন পেয়েছেন। তাঁর স্বামী অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করেন, এখন তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া তিনি নিজে বাড়িতে ১২টি বাচ্চাকে পড়াতেন, তাদেরও আর পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকেরা। অর্থকষ্টে পড়েছেন তাঁরা।
যাঁর সভাপতিত্বে সমাজপতিদের সভা হয়, সেই চাঁদ আলী মুঠোফোনে একঘরে করার কারণ হিসেবে বলেন, ‘ওই দুই পরিবারের লোকজন অন্যদের সঙ্গে মিশতে চান না। তাই তাঁরা সমাজচ্যুত আছেন।’
সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর সমাজপতিরা গ্রামে সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি পরিবারকে একঘরে করে দেন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদ আলী। সভার সিদ্ধান্ত পরের দিন বাড়ি বাড়ি জানিয়ে দেওয়া হয়।
একই সভায় উপস্থিত আরেক সমাজপতি বলেন, ‘তাঁরা (নূর ও সিরাজুলের পরিবার) সমাজ মানতে চান না। যে কারণে লোকজন সভা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তাঁর দাবি, তিনি একঘরে করার পক্ষে ছিলেন না, তারপরও সবার ইচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে উভয় পক্ষ একসঙ্গে বসলে সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাশ্বতী শীল বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কেউ তাঁর কাছে এমন কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।