বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ব্রিটিশদের প্রণীত বিভিন্ন আইনের ওপর নির্ভরশীল। নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও জনগণের চাহিদা বিবেচনায় আনা হয়।
শত বছর আগে তৎকালীন সমাজের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। অথচ বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও পুরোনো আইনগুলো সংস্কার করা হয়নি।
ফলে দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা ও জনগণের কল্যাণে বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (০৯ জানুয়ারি) ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগ আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন।
‘আইনি গবেষণার মাধ্যমে তারতম্যমূলক আইন ও নীতি চিহ্নিতকরণ পূর্বক সংস্কার প্রকল্প (প্যাকেজ ১)’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ মীর শফিকুল আলম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ ওএইচএম ইলিয়াস হোসাইন, নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমদাদুল হক, রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল বাহার, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হাসান।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম আহসান কবির।
সভাপতিত্ব করেন গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ও আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (ড্রাফটিং) ড. মো. মহিউদ্দীন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে প্রচলিত অনেক আইনের মিল নেই। প্রতিটি আইন পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনও পরিবর্তন হয়। ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন আইনের সংস্কার দরকার। আর কাজে লাগে না, এমন আইনগুলো বাতিল করা প্রয়োজন। ২০০ বছর আগের আইন দিয়ে দ্রুত ন্যায় বিচার করা সম্ভব নয়।
বক্তারা গবেষণাকর্ম সম্পর্কে বলেন, দেশের বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করতে গবেষণাটি ভালো পদক্ষেপ। এ গবেষণায় সুনির্দিষ্ট এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিদ্যমান আইনের ত্রুটিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকরা আইনের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও তারতম্য সামনে নিয়ে এসেছেন। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিলে এ সব ত্রুটি দূর করা সম্ভব।
গবেষক দলের সদস্যরা হলেন- রাবির আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম আহসান কবির, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল হান্নান, অধ্যাপক মো. আব্দুর রহিম মিয়া ও অধ্যাপক মো. মোর্শেদুল ইসলাম।
এতে গবেষণা সহকারী হিসেবে ছিলেন- রাবির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালমা আখতার খানম, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রভাষক রেজাউল করিম, গ্রিন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের জেষ্ঠ্য প্রভাষক ড. মো. আরিফুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আয়াজ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা খান মো. আরমান শোভন ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মো. মোবারক হোসেন।
গবেষকরা জানান, ১৭৯৯ সালের ৫ নম্বর আইন থেকে ১৯৫৯ সালের ১২ নম্বর আইন পর্যন্ত মোট ৩০৬টি আইনের ওপর এ গবেষণা করা হয়। এতে ৬০টি আইন বাতিল, ১০২টি আইন অপরিবর্তিত, ৭১টি আইনের সামান্য সংস্কার ও ৬৫টি আইনের অধিকতর সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।