নিয়মনীতি ও কোনোনরকম কাঠামো ছাড়াই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
আজ সোমবার (১১ জানুয়ারি) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পিএইচডি গবেষণা থিসিসের ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নেওয়ার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এসময় আদালতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন।
পরে বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী মনিরুজ্জামান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, প্রতিবেদন দাখিলের পর আদালত আরও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে পিএইচডি গবেষণা কী প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয় এবং এজন্য কোনো সফটওয়্যার আছে কি না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
নির্দেশনায় পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের ক্ষেত্রে (প্ল্যাগারিজম চেক করতে) আধুনিক কি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এবং এসব থিসিস কোথায়, কিভাবে সংরক্ষণ করা হয় তা জানতে চেয়েছেন বলেও জানান রিটকারী আইনজীবী।
অ্যাডভোকেট লিংকন জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত। আগামী দুই মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলেছেন আদালত।
এর আগে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি পিএইচডি ডিগ্রী প্রদানে অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংক ন। রিটে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।
একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও নীতিমালার আলোকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করছে তা তদন্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ইউজিসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। একইসঙ্গে ঢাবির শিক্ষকের পিএইডি জালিয়াতির ঘটনায় তদন্ত করে ঢাবির উপাচার্যইকে প্রতিবেদন দাখিল করতেও নির্দেশ দেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) মাধ্যমে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর।
২০১৪ সালের দিকে ‘টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথ’ শীর্ষক ওই নিবন্ধের কাজ শুরু করেন আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। কাজ শুরু করার এক থেকে দেড় বছরের মাথায় ২০১৫ সালে অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করে ফেলেন লুৎফুল কবীর।
একটি পিএইচডি অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করার জন্য সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন বছর লাগে। কিন্তু দ্রুত কাজ শেষ করে প্রথমে সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর ছাড়াই ডিগ্রির জন্য অভিসন্দর্ভটি জমা দেন লুৎফুল কবীর। সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
পরে লুৎফুল কবীর গবেষণার সহতত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ফারুককে ‘অনেক অনুনয়-বিনয়’ করে তাঁর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে এলে ২০১৫ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে তা অনুমোদিত হয়।