আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।
তারা বলেছেন, তিনি বিবেকের তাগিদে যেভাবে আইনের বিষয়ে, ন্যায়বিচারের বিষয়ে এবং মানবাধিকারের বিষয়ে তদন্তমূলক বিশ্লেষণমূলক কাজ করেছেন, বাংলাদেশে তার মতো আর কেউ করেনি।
মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আইনজীবীরা বলেন, তার মৃত্যুতে সাংবাদিকদের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বিশেষ করে আইন, আদালত ও বিচার বিভাগ নিয়ে তার লেখনীর শূন্যতা অনুভব করবে আইনজীবী সমাজ।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বলেন, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের এই চলে যাওয়াটা সাংবাদিকতায় বিশেষ করে আইন সাংবাদিকতায় বিরাট শূন্যতার তৈরি হলো। আইন বিষয়ে তার এতো স্বচ্ছ ধারণা ছিল, তা বলার অবকাশ রাখে না। সাহসী সাংবাদিকতা তথা আইন নিয়ে লেখায় উনি পথিকৃৎ। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে সাংবাদিকতা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হারালো। তিনি আইনের খুঁটিনাটি বিষয় অনুসন্ধান করতেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় বিশ্লেষণ করতেন। বিচার বিভাগ নিয়ে তথ্যবহুল কলাম লিখতেন। আমি মনে করি আইনজীবী সমাজ ও বিচার বিভাগ তার শূন্যতা অনুভব করবে। আমি গভীর শোকাহত।’
মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, গভীরে গিয়ে অনেক গবেষণা এবং লেখালেখির মতো অন্যতম সাংবাদিক মিজানুর রহমানের মতো আবার কবে পাব আমরা জানি না। তিনি এমন একজন সাংবাদিক, যার লেখা আইনজীবীদের জন্য অনেক কাজে লাগতো, করোনা আর কত ক্ষতি করবে জানি না।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আমি মনে করি আইন ও সংবিধান নিয়ে মিজানুর রহমান খানের মতো পাণ্ডিত্য সাংবাদিক সমাজে আরও কারো নেই। তিনি সংবিধান ও আইনকে সহজ ভাষায় লেখনীর মাধ্যমে জনগণের মাঝে তুলে ধরেছেন। তার মৃত্যুতে সত্যিই আইন ও বিচার বিভাগের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, সাংবাদিক মিজানুর রহমান আমাদের বন্ধু ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে পুরো জাতির একটি অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ উনি বিবেকের তাগিদে যেভাবে আইনের বিষয়ে, ন্যায় বিচারের বিষয়ে এবং মানবাধিকারের বিষয়ে তদন্তমূলক বিশ্লেষণমূলক কাজ করেছেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশ তার মতো আর কেউ করেনি। তার মৃত্যু আমাদের পুরো জাতির জন্য ক্ষতি।
উল্লেখ্য, গত ২৭ নভেম্বর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন মিজানুর রহমান খান। এরপর তিনি প্রথমে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে গত ১০ ডিসেম্বর তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসার একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার বিকেলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানেই সোমবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মারা গেছেন মিজানুর রহমান খান।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তিনি মা, স্ত্রী, তিন সন্তান, পাঁচ ভাই, তিন বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।