আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী: আইনের ছাত্র না হয়ে আইনের জগতকে জয় করার, এই অঙ্গনের একজন হয়ে উঠার দুঃসাহস কেউ দেখাতে চায়না, চাইলেও অনেকে পারেনা। তিনি দেখিয়েছেন, জয় করেছেন। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বিশেষায়িত শিক্ষার ডামাডোলে এটা বিরল, সমগ্র পৃথিবীতে এটা একটা অনন্য উদাহরণ।
তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। ভদ্র, বিনয়ী একজন। অগাধ পান্ডিত্যে মুগ্ধ হয়েছি বারবার। আইন সম্পাদকীয় দিয়ে, আইনের কলাম লিখে আইন অঙ্গনের বাইরের পাঠককে মুগ্ধ করার কৌশলটি তাঁর আবিষ্কার। আইন নিয়ে ভিন্নধর্মী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ তিনি। আইন অঙ্গনের কেউ না হওয়া সত্ত্বেও এই জগতের মানুষের ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা বা ক্ষমতা সবার থাকেনা। তিনি এটা পেরেছেন। সেই দূর্লভ প্রতিভাবান সাহসী সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান চলে গেলেন পরপারে। আমরা শোকাহত। মহান আল্লাহর নিকট তাঁর জন্য প্রার্থনা করছি।
কোভিড (করোনা ভাইরাস) সময়গুলোতে বেশ কিছুদিন ধরে দূর্ভাগ্য আমাদের তাড়া করে ফিরছে। কিছুদিন আগে আরেক দিকপাল আইন কমিশনের সাবেক সদস্য ডঃ মোঃ শাহ আলম স্যারের মৃত্যুতে তিনি লিখেছিলেন- “তিনি (শাহ আলম স্যার) দূর আকাশের তারা হলেন। তাঁর চলে যাওয়া একটি সত্যিকারের শূন্যতা। তিনি জ্ঞানী ছিলেন। কিন্তু নীতি–নৈতিকতাবিবর্জিত জ্ঞানী ছিলেন না। তাঁর বুদ্ধি তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থকে গভীরতর করার কাজে ব্যবহৃত হয়নি। সত্য প্রকাশে তিনি যথাসম্ভব অকপট ছিলেন। একজন বিনয়ী, নিরহংকার, মিতভাষী ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের প্রতিচ্ছবি ছিলেন তিনি। আমরা একটা প্রচণ্ড বৈরী ও ক্ষয়ানুকূল সময় অতিক্রম করছি, যেখানে আদর্শবাদী মানুষের বড় আকাল। তাঁর প্রস্থানে বাংলাদেশ একজন আলোকিত মানুষ হারাল। একজন সাদা মনের মানুষ হারাল।” মিজানুর রহমান খান নিজের আয়নায় হয়তোবা স্যারকে দেখেছেন। ঠিক কিছুদিন অতিক্রান্তে তিনি আজকে আলোচনা ও শোকের বিষয়বস্তু হয়ে গেলেন। এটিই জীবনের গতি ও গন্তব্যের সুনির্দিষ্টতা।
মানুষ মারা যায়। সবাই হা হুতাশ করে, তারপর ভুলে যায়। ক্ষমতা, প্রতিপত্তিকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের নিয়ে অনেককেই মায়াকান্না করতে দেখি। মিজানুর রহমান খানের ক্ষেত্রে তার বিপরীতটাই সত্য। তারঁ কাছ থেকে পার্থিব প্রাপ্তির কোন সুযোগ ছিলনা, বর্তমানে তার সম্ভাবনাও নাই। অথচ কোন এক শূন্যতার অনুভবে পুরো আইন অঙ্গন যেন কাঁদছে।
এদেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে যুক্তি ও তথ্যনির্ভর লিখা কম দেখা যায়। মায়া ও হৃদয়ের ভালবাসা দিয়ে অনেকেই সঠিক ও সত্য কথা বলতে চায়না। ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে লিখে সবাই। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। তাই এমন ব্যক্তিত্বের এরুপ অসময়ের অনাকাঙ্ক্ষিত বিদায়ে তাঁর মত করেই আমরা বলতে চাই- “সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান, আপনি চলে গেলেন খুব তাড়াতাড়ি। আপনি দূর আকাশের তারা হয়ে গেলেন। আপনার চলে যাওয়া একটি সত্যিকারের শূন্যতা। আপনি জ্ঞানী ছিলেন। কিন্তু নীতি–নৈতিকতাবিবর্জিত জ্ঞানী ছিলেন না। আপনাকে আমাদের খুব প্রয়োজন ছিল। আপনার মত এত দরদ দিয়ে আইন জগতের কথা লিখার লোক আর হয়তো আসবেনা”….
আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী: অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, নোয়াখালী