নারায়ণগঞ্জে মৃত স্কুলছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানির তারিখ পিছিয়েছে। এ বিষয়ে আরও বেশি শুনানির জন্য আগামী ৩ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার (২০ জানুয়ারি) শুনানির নির্ধারিত দিনে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নতুন এই দিন নির্ধারণ করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন। অন্যদিকে, আবেদনকারী পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ শিশির মনির। সাবেক তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন মনসুরুল হক চৌধুরী।
পরে বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের ছয় সপ্তাহ সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির তারিখ পিছিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। নারায়ণগঞ্জে মৃত কিশোরীর ফিরে আসার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য আগামী ৩ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত সদর থানার কার্যক্রমের বিষয়ে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন গত ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সিলগালা করে দাখিল করা হয়।
আইনজীবীরা জানান, নারায়ণগঞ্জের দিশামনি হত্যা (পরবর্তীতে জীবিত) মামলার বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা হওয়ার পরদিন ৫ জানুয়ারি মামলাটি ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছিলেন আদালত। সেই নির্ধারিত দিনে সেটির ওপর শুনানি শেষে আজকের জন্য পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছিলেন আদালত।
এর আগে নারায়ণগঞ্জে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ শিকার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনার সার্বিক বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই ঘটনার এফআইআর, জবানবন্দি, ভুক্তভোগী, আসামি সবার বক্তব্য দিয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলা এবং মামলা পরবর্তী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা, বৈধতা এবং যৌক্তিকতা, মামলার নথি তলব চেয়ে গত বছরের ২৫ আগস্ট পাঁচ আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন করেন।
২৭ আগস্ট শুনানি শেষে ছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় সাবেক তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। মামলার নথিসহ বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। সে অনুসারে তারা হাজির হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ব্যাখ্যা দেন। এরপর আদালত ২৪ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখেন। ওই দিন আদালত তদন্তের আদেশ দেন।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ‘ধর্ষণের পর নদীতে মরদেহ ফেলে দেয়া স্কুলছাত্রীর ৪৯ দিন পর জীবিত প্রত্যাবর্তনের’ খবর প্রকাশিত হয়।
ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে শিশির মনির জানান, গত ৪ জুলাই পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী নিখোঁজ হয়। ৬ আগস্ট নিখোঁজ ছাত্রীর বাবা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ আব্দুল্লাহ, রকিব এবং খলিল নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, তারা ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন।
জবানবন্দি নেয়ার পর আসামিদের জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু ২৩ আগস্ট ওই ছাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আসামিরা কীভাবে ধর্ষণ ও হত্যা সম্পর্কিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, যেখানে ওই ছাত্রী অক্ষত অবস্থায় ফেরত এসেছে?
আবেদনে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, বাদী এবং আসামিদের বিবাদী করা হয়।