করোনা মহামারী নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য এবং অনলাইনে শতভাগ ক্লাস নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ দিয়েছেন এক আইনজীবী।
আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রেজিষ্টার্ড ডাকযোগে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তররের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
বিবাদীদের লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি আগামী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে যৌথ কমিটি গঠন করে অনলাইনে শতভাগ ক্লাস নেয়া তথা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ডিজিটাল শিক্ষা কনটেন্ট তৈরির পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য বলা হয়েছে।
অন্যথায় সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রীট দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, সরকারের মন্ত্রীসভার বৈঠক, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম, টেলিমেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা কার্যক্রম সরকার সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছে। করোনা মহামারী সময়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ, ই-কমার্সে কেনাকাটা বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৫০ লাখ। আর এসব কিছুর ব্যাকবোন ছিলো ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির প্রকাশিত জুন ২০২০ মাসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আগের চেয়ে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার।
লিগ্যাল নোটিশে আরও বলা হয়েছে, আধুনিক যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে প্রযুক্তি। শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০, জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯ ও ৭ম পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনায় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত।
সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা, কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা লাভ এবং তা আয়ত্ত ও প্রয়োগ করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’য় (এসডিজি) সকলের জন্য টেকসই গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের http://digitalcontent.ictd.gov.bd ওয়েবসাইটে ১ম-৫ম শ্রেনী পর্যন্ত সকল শিক্ষা উপকরনের ডাউনলোড সুবিধাযুক্ত ডিজিটাল শিক্ষা কনটেন্ট আছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের গৃহিত নানা পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের সকল জেলাতে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা থাকায় বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের যেকোন স্থানে থেকেই সহজে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও অংশগ্রহন করা সম্ভব।
মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে এমনকি পিএইচডি গবেষণা কার্যক্রমও অনলাইন মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে।
লিগ্যাল নোটিশে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার আরও বলেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগের ক্লাস রুমগুলো ছোট, পর্যাপ্ত পরিষ্কার টয়লেট নাই এবং স্থানের স্বল্পতাও আছে। ফলে করোনাকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা অসম্ভব।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হলে প্রতিটি শিক্ষাথীর সাথে অভিভাবকরাও যাবেন। ব্যাপক যানবাহনের সমাগম হবে। ফলে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ শিক্ষক শিক্ষিকার বয়স ৪০ এর উপরে হওয়ায় তাদেরও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ১ম-৫ম শ্রেনী পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ছোট হওয়ায় মুখে মাস্ক সব সময় পড়া, সামাজিক দূরত্ব মানা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে ব্যাপক আশংকা ও সংশয় আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলবে, ক্লাস রুমে একে অন্যের সাথে পূর্বের ন্যায় মেলামেশা করবে।
ফলে শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষিকাবৃন্দ, কর্মকর্তাবৃন্দ, কর্মচারীবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ এবং শিক্ষাথীদের মধ্যে ব্যাপক আকারে দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়ায় আশংকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে।
শিক্ষা গ্রহনের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সরকার প্রতিটি জনগণের জান মালের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। তাই করোনা মহামারী সময়ে যেহেতু অনলাইনে পাঠদানের সুযোগ আছে সেহেতু জীবন সংশয়ের আশংকা রেখে করোনা মহামারী নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সঠিক হবে না।