ফরিদুন্নাহার লাইলী: বেগম রোকেয়া নারীজাগরণের অগ্রদূত, নারীশিক্ষার পথপ্রদর্শক এবং সমাজসংস্কারক। মহীয়সী বেগম রোকেয়া রচিত ‘সুলতানার স্বপ্ন’ একটি গল্পকাহিনী। সে কাহিনী হচ্ছে এরকম- সুলতানা একরাতে তার শয়নকক্ষে বসে ছিল; অচেনা এক নারী তার কাছে এসে ভ্রমণের আহ্বান জানালে সে সাড়া দিয়ে বাইরে আসে এবং বিস্ময়ের সাথে সে আবিষ্কার করে সে আর তার পরিচিত জায়গায় নেই বরং নারীস্থানে অবস্থান করছে। এখানে নারীরা মুক্ত স্বাধীন, পুরুষরাই আবদ্ধ। একসময় স্বপ্ন ভাঙ্গে, সে নিজেকে শয্যাকক্ষে আবিষ্কার করে। সে বুঝতে পারে যে এতক্ষণ যা কিছু সে দেখছিল সবই কেবল স্বপ্ন। বাস্তবে সে এখনও অন্তঃপুরের বাসিন্দা।
গল্পটি বলছি এ জন্য যে, বেগম রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্ন না হোক একটি সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে ধীরে ধীরে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হয়তো বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গল্পকাহিনী নারী ক্ষমতায়নে তার পথচলার অনুপ্রেরণা।
আজ নারী যোগ্য হয়ে উঠছে নিজ প্রতিভায়। পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষিত হয়ে উঠছে নারী। ফলাফলেও বেশ ভালো করছে নারী। কর্মক্ষেত্রেও দৃঢ় প্রত্যয়ী নারী। যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছেন সচ্ছতার সাথে। বর্তমানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যেসব নারী অধিষ্ঠিত তারা কারও অনুকম্পায় নয় নিজ যোগ্যতা বলেই দায়িত্ব পালন করছেন। অবশ্য একটি সময় নারীদেরকে সব জায়গায় সব পদে দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন না আমাদের তথাকথিত পুরুষ শাসিত সমাজ। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যোগ নিয়েছেন, পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, দায়িত্ব দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণে সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের বাদ দিয়ে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ কারণে শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত উদ্যোগে নারীর অগ্রগতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। দেশে মাধ্যমিক থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেল পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রকার মেধাবৃত্তি প্রদানের আওতায় আনা হয়েছে। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টিফিন প্রদান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে ঝরে পড়া কমেছে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, শিশু শ্রেণীতে পড়ুয়া বাচ্চাদের মায়েদেরও উপবৃত্তি কর্মসূচী উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এবং মোবাইলের মাধ্যমে সে টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে বাচ্চার মায়েরা আরও অধিক সময় বাচ্চার পেছনে দিতে পারে এবং সরকারের বিশ্বাস এতে নারী ক্ষমতায়ন আরও বাড়বে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক দ্বারা পূরণ করা হচ্ছে। শিক্ষার পাশাপাশি সরকার মাতৃস্বাস্থ্য এবং পুষ্টির দিকেও নজর দিচ্ছে। সারা দেশে হাসপাতাল স্থাপনের অংশ হিসেবে প্রায় ১৬ হাজার ৫শ কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে নারীদের প্রসূতি সেবাও নিশ্চিত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার উদ্যোগে ‘মেটার্নাল হেলথ ভাউচার স্কিম’ চালু করা হয়েছে। যার মাধ্যমে গর্ভধারিণী মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে নিরাপদ সন্তান প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও সরকার ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশই বিশ্বে সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে সংসদ নেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী। আগে যেখানে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণকে সামাজিকভাবে ভালো চোখে দেখা হতো না, শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন পরিবারের অন্য সদস্যরাও নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করে।
দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী, তাই সামগ্রিক উন্নয়ন তথা প্রতিনিধিত্বশীল উন্নয়নের জন্য নারীর অংশগ্রহণ অবশ্যম্ভাবী। সহশ্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ ভাবে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বার্থে প্রত্যেকটি উন্নয়নশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণকে আরো জোরালো এবং সক্রিয় করে তুলতে হবে। তাই এদেশে দরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো এমন নারীবান্ধব দল ও সরকার।
লেখকঃ কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সাবেক সংসদ সদস্য।