মোঃ কামাল হোসেন:
আমাদের দেশে কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আসে যা মূলত একটি ফৌজদারি অপরাধ । এছাড়াও একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক সময় বিভিন্ন ধরণের ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে পারেন। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হলে এবং অপরাধ প্রমাণ হলে তার সাধারণত জেল জরিমানা বা সবোর্চ্চ ফাঁসির আদেশ হতে পারে। একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি কোন ধরণের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয় এবং তার কোন ধরণের সাজা হয় তাহলে তার চাকরি থাকবে কি না তা সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪২ অনুসারে নির্ধারিত হয়।
এক বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে–
ধারা ৪২ অনুসারে কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা ১ (এক) বৎসর মেয়াদের অধিক মেয়াদের কারাদন্ডে দণ্ডিত হইলে, উক্ত দণ্ড আরোপের রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে চাকরি হইতে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত হইবেন।
অর্থাৎ কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোন ফৌজদারি অপরাধে একবছরের বেশি কারাদণ্ড বা ফাঁসির আদেশ হলে তিনি তার চাকরি হারাবেন।
এক বছরের কম কারাদণ্ড হলে–
কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর মেয়াদের কোনো কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইলে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাহাকে নিম্নবর্ণিত যে কোনো দণ্ড আরোপ করিতে পারিবে, যথা:-
(ক) তিরস্কার;
(খ) নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ;
(গ) নিম্ন পদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনমিতকরণ; অথবা
(ঘ) কোনো আইন বা সরকারি আদেশ অমান্যকরণ অথবা কর্তব্যে ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে সরকারি অর্থ বা সম্পত্তির ক্ষতি সংঘটিত হইলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়।
অর্থাৎ কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর যদি কোন ফৌজদারি অপরাধের জন্য এক বছরের কম সময়ের জন্য কারাদণ্ড হয় তবে নিয়োগকারী বা সরকার তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত না করে অন্য কোন ধরণের শাস্তি প্রদান করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাজা মওকুফ–
ধারা ৪২ অনুসারে রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দণ্ডিত ও চাকরি হইতে বরখাস্তকৃত কোনো ব্যক্তিকে অনুরূপ বরখাস্ত হইতে অব্যাহতি প্রদানের বিশেষ কারণ বা পরিস্থিতি রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবেন, এবং অনুরূপ আদেশ প্রদান করা হইলে উক্ত কর্মচারী চাকরিতে পুনর্বহাল হইবেন।
অর্থাৎ ফৌজদারি মামলায় কারাদণ্ড প্রাপ্ত কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর শাস্তি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইচ্ছে করলে মওকুফ করতে পারেন এবং তাকে চাকরিতে পূনর্বহাল করতে পারেন।
আপিল আদালতের রায়ে খালাস হলে প্রতিকার–
ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক আরোপিত দণ্ডাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে- বরখাস্তকৃত সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী, পরবর্তীতে আপিল আদালত কর্তৃক খালাসপ্রাপ্ত হইলে তাহাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করিতে হইবে ।ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক আরোপিত দণ্ডাদেশের (এক বছরের কম)পরিপ্রেক্ষিতে অফিস কর্তৃক দণ্ডিত ব্যক্তি, পরবর্তীতে আপিল আদালত কর্তৃক খালাসপ্রাপ্ত হইলে, তাহার উপর আরোপিত দণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করিতে হইবে। সহজ অর্থে দন্ড প্রাপ্ত কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি আপিল আদালতের রায়ে খালাস পান তাহলে পূনরায় তিনি চাকরিতে পূনর্বহাল হবে। তবে খালাসপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী, অবসরে গমনের বয়সে উপনীত হইলে অথবা সংশ্লিষ্ট পদ বা চাকরির বিলুপ্তি ঘটিলে, তাহাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা যাইবে না, তবে তিনি সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্ধারিত আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হইবেন।
লেখক- সহকারী ব্যবস্থাপক (আইন), বিজিডিসিএল ,কুমিল্লা।
Email: kamallawru@gmail.com