ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) বিদেশে পালাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বলেন, বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চিঠি ১৩ ঘণ্টা পর ইমিগ্রেশনে পাঠিয়ে পি কে হালদারকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে দুদক।
অপর এক রিট শুনানিতে পি কে হালদারের প্রসঙ্গ উঠলে গত বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আজ আদালতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিল না। তাই আগামী সপ্তাহে শুনানি করা হবে বলে আদেশ দেন আদালত।
আদালতে আজ দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সরোয়ার হোসেন বাপ্পী।
হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, পি কে হালদারের দেশ ছাড়ার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিষেধাজ্ঞার নোটিশ ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে পৌঁছানোর আগেই, তিনি দেশ ত্যাগ করেন। কেউ না কেউ তাকে পালাতে সাহায্য করেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সরোয়ার হোসেন বাপ্পী গণমাধ্যমকে জানান, অপর একটি রিট মামলায় শুনানি চলছিল। এছাড়া পি কে হালদার সংক্রান্ত বিষয়টিও শুনানির জন্য ছিল। তখন পি কে হালদারের বিষয়ে সময় চান দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান।
তিনি আদালতকে বলেন, ‘পি কে হালদারের বিষয়টি শুনানিতে উঠলে সেখানে আমাকে শুনানি করতে হবে। আমাকে না শুনে পিকে হালদারের মামলায় আদেশ না দেয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। কারণ পি কে হালদারের ব্যাপারটা অনেক টাকার ম্যাটার, তার মামলা নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’ এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘১৩ ঘণ্টা পর চিঠি পাঠিয়ে পি কে হালদারকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর এখন বলছেন হিমশিম খাচ্ছেন।’
এর আগে গত ১ মার্চ ইমিগ্রেশন পুলিশ হাইকোর্টকে জানান, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সড়ক পথে দেশত্যাগ করেছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।
ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর দুদক ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানানোর জন্য বিশেষ শাখার (এসবি) সদর দফতরকে চিঠি দেয় যেন পি কে হালদার দেশত্যাগ করতে না পারেন। এসবি সদর দফতর দুদকের ওই চিঠি হাতে পায় ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায়। ওই দিন বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে ইমিগ্রেশন পুলিশের সব শাখায় ওই চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়। তবে চিঠি পাওয়ার দুই ঘণ্টা ৯ মিনিট আগেই (বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে) পি কে হালদার বেনাপোল দিয়ে দেশত্যাগ করেন।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পি কে হালদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কীভাবে দেশত্যাগ করলেন তা জানতে চান হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে পিকে হালদার যেদিন দেশত্যাগ করেছিলেন, সেদিন বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরতদের এবং দুদকের দায়িত্বে কে কে ছিলেন তার তালিকা দাখিল করতে বলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি বিভাগে ২০০৮ সাল থেকে কর্মরতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকার বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।
২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করে কানাডায় পাড়ি দেন পি কে হালদার। দেশত্যাগের সময় পি কে হালদার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন।