দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য বিদায়ী সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দিয়েছেন তার একটি তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। গত পাঁচ মাসে দুদক কাকে কাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে তা ১১ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘সাধারণ বীমা করপোরেশনে ১০ বছর ধরে জালিয়াতি, ২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ’ প্রতিবেদন নজরে আনার পর সেটি আমলে নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দীন শামিমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে এমন আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি। অন্যদিকে, দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত পাঁচ মাসে দুদক কাকে কাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে তাদের নাম, ঠিকানাসহ তালিকা আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে দুদককে জানাতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবেদককে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।’
এর আগে গত ১৪ মার্চ ‘দুদকে অনুসন্ধান-বাণিজ্য’ শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সোর্স ও তথ্য-প্রমাণ দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিদায়ের আগে দুর্নীতির বহু রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ পাঁচ মাসে তিনি দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।’
প্রথম আলোতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আসার পর এ বিষয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছেও ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। এই প্রতিবেদকের কাছে থাকা তথ্য-প্রমাণও দাখিলের নির্দেশ দিয়ে এ বিষয়ে আগামী ১১ এপ্রিল পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আদালত।
২০১৬ সালের ১০ মার্চ ইকবাল মাহমুদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। চলতি বছরের ১০ মার্চ তিনি অবসর নেন।
এ দিকে আজ (১৬ মার্চ) দৈনিক প্রথম আলোতে ‘১০ বছর ধরে জালিয়াতি, ২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদন নজরে নিয়ে এ বিষয়ে সাধারণ বীমার অবস্থান কী, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ প্রতিবেদনের প্রতিবেদককেও প্রতিবেদন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদালতে ১১ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খুলে রাষ্ট্রীয় সংস্থা সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) আয় থেকে ২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। চক্রটির নেতৃত্ব দিয়েছেন এ সংস্থারই প্রধান কার্যালয়ে অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম। ১০ বছর ৬ মাস ধরে এ কাণ্ড ঘটে চললেও এসবিসি ছিল পুরোপুরি অন্ধকারে।
এসবিসির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খসরু দস্তগীর আলমের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।