স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে থানা ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হেফাজত ইসলাম কর্মীদের হামলার পর সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে পুলিশ।
হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম থেকে শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় বেলা সোয়া ২টার দিকে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার হেফাজতকর্মী মিছিল নিয়ে বের হয়। এসময় তারা হাটহাজারী থানা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ডাক বাংলোতে হামলা চালায়।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মছিউদ্দৌল্লাহ রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, “মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে বিনা উসকানিতে হেফাজত কর্মীরা থানায় হামলা চালায়। তারা থানা কম্পাউন্ডে ব্যাপক ভাঙচুর করে।”
হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, “হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ডাক বাংলোতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পাশাপাশি তারা ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগও করে। সহকারী কমিশনারের (ভূমির) গাড়িতেও তারা আগুন দেয়।
“আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এলে হেফাজতের কর্মীরা ভূমি অফিসে প্রবেশে তাদের বাধা দেয়।”
পরে পুলিশের ধাওয়ার খেয়ে হেফাজত কর্মীরা মাদ্রাসা গেইটে অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে। বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সড়কে তাদের অবরোধ অব্যাহত ছিল বলে ইউএনও জানান।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শীলব্রত বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, “হাটহাজারীর সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে চারজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”
হতাহতরা সবাই গুলিবিদ্ধ বলে জানালেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী গণমাধ্যমকে বলেন, “পুলিশের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এরা সকলেই হেফাজতে ইসলামের কর্মী।”
আজিজুল হক ইসলামাবাদীর ভাষ্য, নিহতদের নাম রবিউল, মেহরাজ, আবদুল্লাহ ও জামিল। তাদের মধ্যে তিনজন হাটহাজারি বড় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, একজন দর্জির কাজ করতেন।
২০১০ সালে দেশের কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আত্মপ্রকাশ হয়। নারী নীতি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশে ২০১৩ সালে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধীতা করে দেশে ব্যাপক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান করে ব্যাপক অরাজকতা চালায় সংগঠনটি। এই সংগঠনটি মূলত হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম থেকে পরিচালিত হয়।
সূত্র : বিডিনিউজ