১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ। প্রথম দফা কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ ওঠানোর পর আবারও কারফিউ দেওয়া হয়। আর তাই এই দিনও ধ্বংস আর তাণ্ডবের চিহ্ন নিয়ে ভুতুড়ে নগরী হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঢাকা। এদিন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার প্রতিবাদে এবং স্বাধীনতার প্রত্যয়ে বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে বিপুল প্রবাসী বাঙালি। লন্ডনের এ সমাবেশে অংশ নেন বিদেশিরাও। কালরাতের পর এদিন দুপুরের দিকে ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও বেশিরভাগ জায়গা ছিল জনশূন্য ও ধ্বংসস্তুপ। দিশেহারা মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে এখানে সেখানে। কেউ স্বজনের সন্ধানে, কেউ খাবারের।
দুদিন খবরের কাগজ বন্ধ থাকার পর এদিন পাকিস্তান অবজারভার প্রকাশ হয়। পাকিস্তানি সরকারের বিভিন্ন প্রেসনোটের বরাত দিয়ে তাদের খবরেই ভরা ছিল চার পৃষ্ঠা। এখানেই ছোট পরিসরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের খবর প্রকাশ হয়।
এই দিন চট্টগ্রামের দক্ষিণ থেকে বেলুচ রেজিমেন্ট, উত্তর থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে অগ্রসরমান পাকসেনাদের হামলায় বাঙালি সেনা, ইপিআর, পুলিশ ও জনতার প্রতিরোধ ব্যূহ টিকতে পারে না। তাই তাদের পিছিয়ে আসার কৌশল নিতে হয়।
সারাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা শহরের পুলিশ, ইপিআর, ছাত্র-শিক্ষক, জনতা যার কাছে যা ছিল তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। এইসময়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার কাজ শুরু করে তরুণরা। ঢাকার রাজনৈতিক তরুণ ব্যক্তিরা স্বউদ্যোগে সম্মিলিত হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি বিষয়ে বৈঠক শুরু করে।
এই দিন রংপুরের মানুষের জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন। লাঠিসোটা, তীর-ধনুক নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে তারা জন্ম দিয়েছিল এক অনন্য ইতিহাসের। ক্যান্টনমেন্ট থেকে একটানা মেশিনগানের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে চারদিকে ঝরে পড়ে তাজা প্রাণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে ওটা হার মানিয়েছিল মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও। পুরো এলাকার বাতাস মুমূর্ষু মানুষের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে। কয়েক হাজার লাশ এক জায়গায় জড়ো করে পুড়িয়ে ফেলে পাকিস্তানি সেনারা।
ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও অভিযানে আত্মত্যাগী মানুষের স্মৃতি ধরে রাখতে ২০০৩ সালে সেই ঐতিহাসিক নজিরের হাটে ‘রক্ত গৌরব’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন