১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কেউ জানতো না কী ঘটে গেছে ২৫ মার্চ কালরাতে। এরপর অল্প সময়ের জন্য কারফিউ তুলে পরিস্থিতি দেখছিল পাকিস্তানি সেনারা। ২৯ মার্চ সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ তুলে নেওয়া হয়।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় বিছিন্নভাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলি হতে থাকে। এদিন রাত দেড়টার দিকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে কুমিল্লার বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা তুলে নিয়ে যায়। পাকিস্তান আইনসভায় সর্বপ্রথম বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ঐতিহাসিক প্রস্তাব উত্থাপনকারী ছিলেন এই ধীরেন্দ্রনাথ। তাঁকে ও তার বড় ছেলে দীলিপ দত্তকে পরে আর পাওয়া যায়নি।
শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ার চেষ্টারত মানুষের ঢল তখনও থামেনি। শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথে সেনাবাহিনী চেকপোস্ট বসায়। পথচারীদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতেও তৎপরতা দেখা যায়। অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ তার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বলেন, ‘তখন সবার মনে হচ্ছিল ঢাকা থেকে বের হতে পারলেই নিরাপদ।’ তারাও সপরিবারে ঢাকার পাশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মার্চের শেষে ঢাকার আশেপাশেও আক্রমণ হয়। হত্যা করা হয় শয়ে শয়ে বাঙালিকে।
এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-আরিচা সড়কে কল্যাণপুর ব্রিজের কাছে অবাঙালিদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এ পথে যাতায়াতকারীদের আটক ও তল্লাশি করা হয়। কাউকে সন্দেহ হলে ব্রিজের নিচে নিয়ে হত্যা করা হয়।
২৯ মার্চ সকালে ঈশ্বরদীতে খবর আসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া বহর পাবনা থেকে বিতাড়িত হয়ে পাবনা শহরের পশ্চিম প্রান্তের মাধপুর কাঁচারাস্তা ধরে ঈশ্বরদীর দিকে এগিয়ে আসছে। কেননা পাবনা রোডে আগেই বড়বড় গাছ কেটে ও মাটি খুঁড়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যান চলাচলের অযোগ্য করে ফেলা হয়েছিল।
খবর ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে রাখা বন্দুক, এয়ারগান, দেশীয় অস্ত্র, ঢাল, লাঠি-সোটা এমনকি ইট-পাথর নিয়ে একযোগে মাধপুর রাস্তার বটগাছের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এইদিন সকালে ময়মনসিংহের রাবেয়া মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ে ইপিআর বাহিনী ও হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন