সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় অবহেলার দায়ে অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট হোস্টেল সুপারকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
২ জুন (বুধবার) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক নববধূকে ছাত্রলীগের ৬ জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেটকার যোগে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। বিকেলে এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। তারা টিলাগড় কেন্দ্রীক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার গ্রুপের অনুসারী।
এ ঘটনায় শনিবার ভোর রাতে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরান থানায় এ মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত ওই নারীর স্বামী।
এছাড়া ঘটনার পর অভিযানে নেমে সাইফুরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন শাহপরান (র.) থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার। ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তিনি।
২৯ সেপ্টেম্বর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন। ওইদিন তিনি জানান, কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণ থেকে রক্ষায় অবহেলা ও কলেজ ক্যাম্পাসে অছাত্রদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কলেজ অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের নীরবতায় তাদের বিরুদ্ধে যথযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ওই ঘটনার দায় নিরূপণে অনুসন্ধান করতে হাইকোর্ট একটি কমিটি করে দিয়েছেন।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেস্ট এবং সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সাধারণ) সমন্বয়ে কমিটি করা হয়। এ কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে ঘটনার অনুসন্ধান করে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্টারের মাধ্যমে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে।
এ আদেশ অনুসারে কমিটি ঘটনা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠায়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
এ ঘটনায় করা দু’টি (চাঁদাবাজি ও ধর্ষণ) মামলা সিলেটের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।