ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিজ দেশে প্রয়োজনীয় টিকার যোগান দিতে পারছে না। কিছু সরকারি নিয়ম-নীতির জালে মন্থর হয়ে পড়ছে পুরো প্রক্রিয়া। বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট। একইসঙ্গে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন আদালত।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আদালত জানতে চেয়েছেন, টিকা উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহের এই প্রক্রিয়াটি কি দ্রুত করা যায় না? হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, টিকা না পেয়ে যখন ভারতে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, তখন এই দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী অফিসারদের ‘খুনি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। কারণ, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতাকে তারা কাজে লাগাচ্ছে না।
সরকারের ভ্যাকসিন নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত বলেছেন, ‘টিকা না পেয়ে প্রাণহানির ঘটনার কী ব্যাখ্যা দেবে কেন্দ্র?’ দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি মনমোহন এবং বিচারপতি নাজমি ওয়াজিরির ডিভিশন বেঞ্চে এ সংক্রান্ত শুনানি ছিল। কেন্দ্রকে তাদের পরামর্শ, ‘গোটা দেশে টিকার ঘাটতি রয়েছে। মানুষ চাইলেও ভ্যাকসিন নিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে আপনাদের টিকার উৎপাদন থেকে জোগানের প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করতেই হবে। যেভাবে হোক ভ্যাকসিনের যোগান বাড়াতে হবে।’
ভ্যাকসিনের যোগান বাড়াতে যদি কিছু নিয়ম-নীতি বদলাতে হয়, কেন্দ্রকে তা-ও বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন হাই কোর্ট। আদালত বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোকে কেন্দ্রের সহযোগিতা করা দরকার। কেননা, পুলিশি তদন্ত, অডিট প্রক্রিয়া এবং আরও নানা সরকারি বিধিনিষেধের বেড়ায় আটকে যাচ্ছে উৎপাদন সংস্থাগুলোর টিকার উৎপাদন থেকে সরবরাহের প্রক্রিয়া। অথচ এর দাম দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। জীবন দিয়ে এর দাম দিচ্ছেন তারা।
কেন্দ্রকে হাই কোর্ট বলেছে, ‘এখন তদন্ত, অডিট নিয়ে ভাবার সময় নয়। কারণ, টিকার যোগানের অভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আমাদের মতে, যাদের জন্য এটা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনে মামলা করা উচিত।’ ‘প্যানাসিয়া বায়োটেক’ নামের এক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতেই এমন মন্তব্য করেছেন আদালত। রাশিয়ার একটি বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভারতে ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা তৈরির কাজ করার কথা সংস্থাটির। আদালতে তারা জানিয়েছে, কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য একটি বড় অংকের তহবিল না পেলে টিকা তৈরি করতে পারবে না তারা।