বগুড়ায় ৩০ আসামির জামিন জালিয়াতির ঘটনায় দুই আইনজীবীসহ চারজনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট দফতরে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
প্রতিবেদনে জালিয়াতির পুরো ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দুই আইনজীবীসহ চারজনের নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে একজন ঢাকা কোর্টের আইনজীবী রাজু আহমেদ রাজীব ও বগুড়া আদালতের আইনজীবী তানজীম আলম মিসবাহ। এছাড়াও এ ঘটনায় কম্পিউটার অপারেটর মাসুদ রানা ও আইনজীবীর সহকারী মো. সোহাগের দায় রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, জালিয়াতির ঘটনায় ইতোমধ্যে আইনজীবীর সহকারী সোহাগকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোহাগ এরইমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আগামী ২৩ জুন উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি পলাতক দুই আইনজীবীসহ অভিযুক্ত তিনজনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে গ্রেফতারেরও নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২৩ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।
৯ জুন (বুধবার) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
বগুড়ার ৩০ আসামির জামিনের বিষয়টি ধরা পড়লে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তাদের গ্রেফতার করতে নির্দেশ ও প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট। জড়িতদের গ্রেফতার করতে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া বিষয়টি তদন্ত করতে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকেও নির্দেশ দেয়া হয়।
একটি মামলায় ভুয়া আগাম জামিননামা তৈরির ঘটনায় বগুড়া সদর উপজেলার আমিনুর ইসলাম, আব্দুল আলিম, আনোয়ার মণ্ডলসহ ৩০ জনকে গ্রেফতার করতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। নির্দেশের সাত দিনের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করতে বগুড়া সদর থানার ওসিকে বলা হয়। এছাড়া বিষয়টি তদন্ত করতে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকেও নির্দেশ দেয়া হয়।
জানা যায়, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের নাম উল্লেখ করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জামিন পান আমিনুর ইসলামসহ ৩০ আসামি। কিন্তু ওই দিন এই কোর্ট থেকে এমন কোনো জামিনাদেশ হয়নি। এমনকি সেখানে আইনজীবীদের যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘটনা জানাজানির পর ১৬ মার্চ জালিয়াতি খুঁজে বের করতে এবং জামিন পাওয়া আসামিদের গ্রেফতার করতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। যদিও ওই ৩০ আসামি ১১ মে হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পেয়েছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় মোটরমালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০ ফেব্রুয়ারি প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। তার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের ছোট ভাই মশিউল আলম দীপন বাদী হয়ে আমিনুর ইসলামকে প্রধান করে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এ মামলায় জামিন জালিয়াতির ঘটনা ঘটে।