সিরাজ প্রামাণিক:
আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, মায়ের সম্পত্তিতে মেয়েরা বেশী পাবে। অর্থাৎ মায়ের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসাবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশী পরিমাণ সম্পত্তির অংশীদার হবে। প্রকৃত আইনটি হচ্ছে, মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি পুরুষ অথবা নারী যিনিই হোন না কেন, তার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ে একইভাবে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন। মৃত ব্যক্তির যদি সন্তান থাকে তবে স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ আর মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বা পুত্রের সন্তান সন্ততি বা তার নিম্নে কেউ না থাকে, তবে স্বামী পবে ১/২ অংশ।
এই সম্পত্তি স্বামীকে দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ২:১ হারে বাটোয়ারা হবে। অথাৎ ছেলেরা পাবে ডাবল আর মেয়েরা ছেলের অর্ধেক পরিমাণ পাবে। যদি মেয়ে না থাকে তবে বাঁকী সম্পূর্ণ অংশ ছেলে পাবে। আরও স্পষ্ট করে বলি, একজন মেয়ে ৩ নিয়মে মৃত ব্যক্তির সম্পদ পেয়ে থাকে।
১। যদি একজন মেয়ে হয় তবে দুইভাগের একভাগ (১/২) অংশ পাবে অর্থাৎ বাকী সম্পত্তির অর্ধেক মেয়ে পাবে। ২। যদি একাধিক মেয়ে হয় তবে সকলে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) আংশ পাবে। ৩। যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে মেয়ে উভয়েই থাকে তবে ছেলে যে পরিমাণ পাবে মেয়ে তাঁর অর্ধেক পাবে। কাজেই ‘মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা বেশী পাবে’ এই ধারণাটি ভুল।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোন পুরুষ মারা গেলে তার সম্পত্তির উপর প্রথমে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র এবং বিধবার অগ্রাধিকার। এদের অনুপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে কন্যা, দৌহিত্র, পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্রগন সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন। কিন্তু কোন হিন্দু মহিলা মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের দুটি নিয়ম রয়েছে। ১) কোন মহিলা যদি উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে যার নিকট হতে পেয়েছিলেন তার নিকট আত্মীয়দের নিকট ফিরে যাবে। ২) উত্তরাধিকার ব্যতিত অন্য কোনভাবে যদি কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে সেই সম্পত্তি মালিকানার ধরন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারদের মধ্য বণ্টিত হবে। ১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন অনুযায়ী মেয়েরা কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়। তবে বিধবা হওয়ার পর সন্তান নাবালক থাকা অবস্থায় শুধু বসতি বাড়ির অধিকারী হয়। দীর্ঘ ৮৩ বছরেও হিন্দু আইনে আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে রায় ঘোষণা করেছে যে, হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে, তবে প্রাপ্ত সম্পত্তি কোন প্রকার বিক্রি, হস্তান্তরযোগ্য নয়। শুধু ভোগদখলকৃত বলে গণ্য হবে।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক।