বিদ্যমান ভূমি ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে জমির মালিকের সংখ্যা জানার সুযোগ নেই। কার নামে কোন কোন স্থানে কত পরিমাণ জমি আছে- এই তথ্য সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য সারাদেশের ভূমি মালিকদের ডাটা ব্যাংক তৈরি করতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এই কাজটি শেষ হলে পরবর্তী সময়ে যারা জমির নতুন মালিক হবেন, তাদের নামও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডাটা ব্যাংকে যুক্ত হবে। ভূমি নিয়ে বিরোধ, দ্বন্দ্ব, সংঘাত দূর করতেও ভূমিকা রাখবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ডাটা ব্যাংক হলে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দূর হবে। ভূমির ৯০ শতাংশ মামলা-মোকদ্দমা দূর হবে। ছোট্ট এক টুকরো জমির মালিকের নামও ডাটা ব্যাংকে থাকবে। জবরদখল, জাল দলিল করে অন্যের জমি আত্মসাৎ করার সুযোগ থাকবে না।
জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয় আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পাঁচটি প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নির্মিত ভূমি ভবন কমপ্লেক্স, ৯৯৫টি পাকা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ১২৯টি পাকা উপজেলা ভূমি অফিস, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ ও সরকারি ভূমি ডাটা ব্যাংক উদ্বোধন করবেন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সমকালকে বলেন, এক সময় ভূমির প্রতিটি কার্যক্রম ডিজিটাইজেশনের আওতায় আসবে। সেদিন বেশি দূরে নয়। ইতোমধ্যে ই-নামজারিসহ নানা কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। তাতে জনগণকে সশরীরে ভূমি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এর ফলে মানুষের সময়ের অপচয় হচ্ছে না। বাড়তি অর্থ খরচ থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।
ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে সরকারি জমির ডাটা ব্যাংকের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এই কাজটি শেষ করে সারাদেশের বেসরকারি মালিকানাধীন জমির ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারি মালিকানাধীন জমির ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। এই ডাটা ব্যাংকে খাস, পরিত্যক্ত, অর্পিত সম্পত্তি, জলমহাল, লবণ মহাল, চিংড়ি মহালসহ সরকারি মালিকানাধীন সব জমির তথ্য থাকবে। এই ডাটা ব্যাংকটি তৈরির কাজ চলছে। এটি হলে সরকারি জমি, সম্পত্তি জালজালিয়াতির মাধ্যমে বেহাত, বেদখলের সুযোগ থাকবে না। এই ডাটা ব্যাংকের কাজ শেষ করে বেসরকারি মালিকানাধীন জমির ডাটাবেজ তৈরি শুরু করা হবে। এটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপকভিত্তিক একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
বেসরকারি মালিকানাধীন জমির বিরোধ সম্পর্কে ভূমি সচিব বলেন, বর্তমানে যে খতিয়ানগুলো তৈরি হয়, তার মধ্যে ধরা যাক- একটি খতিয়ানে পাঁচটি দাগ উল্লেখ থাকে। সেখানে পাঁচজন মালিকের নাম উল্লেখ থাকে, তাতে প্রত্যেকের চারআনা, আটআনা মালিকানার কথাও বলা থাকে। এটা কি বাস্তবসম্মত যে, পাঁচটি দাগের প্রতিটি দাগ থেকে চারআনা-চারআনা করে নিয়ে ভোগ করা যাবে? এটা অসম্ভব। বাস্তবে তারা এক জায়গা থেকে ভোগ করে অথচ কাগজ থাকে পাঁচ দাগের। এর ফলে যখনই মামলা-মোকদ্দমার ঘটনা ঘটে, তখন সংশ্নিষ্টরা বিপদে পড়েন।
সচিব জানান, আগামীতে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে নামে সর্বশেষ একটি সার্ভে কার্যক্রম শুরু করা হবে। বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় পরীক্ষামূলক জরিপ হবে। এটি হবে পরিপূর্ণ ডিজিটাল জরিপ। ড্রোনের মাধ্যমে করা হবে এই জরিপ। এই কাজে বেসরকারি খাতকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই জরিপের পলিসি হবে- কোনো প্লট একজনের সঙ্গে অন্যজনের শেয়ারিং থাকবে না। কোনো দাগেরও শেয়ারিং থাকবে না। ধরা যাক, একটি স্থানের সামান্য, ছোট্ট একটি দোকানঘর আছে, সেটির আলাদা দাগ নম্বর সৃজন করা হবে। ওই জমিটুকুর আলাদা মালিক হবেন তিনি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, যে পৈতৃক সম্পত্তি ভোগ করার ক্ষেত্রে ভাইবোনরা একত্রিত থাকতে পারবেন না, সেগুলোর ক্ষেত্রে মন্তব্যে- জমিটি ওয়ারিশ সূত্রে যৌথ মালিকানাধীন ও মালিকের সংখ্যা উল্লেখ থাকবে। এই যৌথ মালিকানাধীন জমির কোনো অংশ বিক্রি করতে চাইলে প্রথমে তাদের মধ্যে বণ্টননামা সম্পন্ন করতে হবে। যে অংশটুকু বিক্রি করা হবে, সেই অংশটুকু পৃথক করতে হবে। তারপর বিক্রি করতে হবে। যতটুকু বিক্রি করা হবে, সেটির আলাদা দাগ নম্বর পড়বে।
প্রতিটি খতিয়ান হবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী, ব্যক্তিভিত্তিক, যার যার নামে আলাদা খতিয়ান থাকবে। এই পদ্ধতিতে একজন জমি মালিকের এনআইডি নম্বর সার্চ করলে সারাদেশে তার নামের সব খতিয়ান বেরিয়ে আসবে।
সর্বশেষ আরএস জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে জমির প্রায় পাঁচ কোটি খতিয়ান আছে। একেকটি খতিয়ানের জমির মালিক পাঁচজন বা তার চেয়ে কমবেশি রয়েছে। আরএস জরিপ অনুযায়ী, সারাদেশে জমির মোট মালিকের সংখ্যা জানার উপায় নেই।