আদালতের কাছে থাকা নথির ভেতর থেকে ২৮ কোটি টাকার চেক চুরি করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর চট্টগ্রাম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক জহির উদ্দিন এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান বরাবরে।
চেক চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত ওই আইনজীবীর নাম জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যও (লিন নম্বর ২০১২০৪৪২৪৮) তিনি। তার বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্টভাবে আনা হয়েছে ২৭ কোটি ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭২ টাকার চেক চুরির অভিযোগ।
নথিটি ছিল চট্টগ্রামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এসএ গ্রুপের বিরুদ্ধে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার দায়ের করা চেক প্রতারণার মামলার। শিল্পগ্রুপ এসএ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসএ রিফাইনারি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দীন আলম ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আলমের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের এক ঘটনায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে ২৪ নভেম্বর পঞ্চম যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা হয়। পরে ২৭ কোটি ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭২ টাকার চেক প্রত্যাখ্যানের সেই মামলায় এই দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।
মহানগর দায়রা জজের কাছে পাঠানো অভিযোগে জানা গেছে, অ্যাডভােকেট জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব গত বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের অফিস সহায়কের কাছ থেকে দায়রা-১৮৩৭/২০১৪ মামলার নথিটি দেখার জন্য চেয়ে নেন। অফিস সহায়ক নথির ভেতরে থাকা সব কাগজপত্র যাচাই করে পুরো নথিটি দেখার জন্য অ্যাডভােকেট জোবায়েরকে দেন।
এর কিছু সময় পর ওই মামলার নথিটি অফিস সহায়কের হাতে আসার পর তিনি দেখেন, নথির ভেতরে থাকা ২৭ কোটি ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭২ টাকার চেকটি সেখানে নেই। এরপর অফিস সহায়ক ও বেঞ্চ সহকারী মিলে অ্যাডভােকেট জোবায়েরকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে চেক গায়েবের বিষয়টি যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক জহির উদ্দিনকে অবহিত করেন তারা। আদালতের বেঞ্চ সহকারী একইসঙ্গে বিষয়টি জানান চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিনকেও।
পরে বেঞ্চ সহকারী মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে অ্যাডভােকেট জোবায়েরের অবস্থান শনাক্ত করে রাত ১০টার দিকে নগরীর হোটেল আগ্রাবাদ থেকে চুরি যাওয়া চেকটি উদ্ধার করে আনেন।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবরে পুরো বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন এ ব্যাপারে অ্যাডভােকেট জোবায়েরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
এদিকে জোবায়ের আহমেদ আওরঙ্গজেব তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চেকটা আমি চুরি করিনি। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার দিকে আমার ক্লার্ক ইমতিয়াজকে নিয়ে মামলার নথি দেখতে যাই। আমি নথি দেখে চলে আসি। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মহানগর দায়রা জজের সহকারী আমাকে ফোন দিয়ে জানান, মামলার নথির মধ্য থেকে ২৭ কোটি টাকার চেক চুরি হয়ে গেছে। তারা ধারণা করেছে আমিই নিয়ে্ছি। আমি অস্বীকৃতি জানিয়ে আমার ক্লার্ক ইমতিয়াজকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। ইমতিয়াজ চেক চুরির কথা স্বীকার করে আমার কাছে চেকটি ফেরত দিলে আমি চেকটি পেশকারের বাসায় গিয়ে দিয়ে আসছি।’
জোবায়ের বলেন, ‘আমি আজ ক্লার্ক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করতে যাচ্ছি। কিন্তু ইমতিয়াজের ফোন বন্ধ। তার বাড়ি রংপুরে। তাই এখন ইমতিয়াজ কোথায় অবস্থান করছে আমার জানা নেই।’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘মহানগর দায়রা জজের পক্ষ থেকে আমরা একটা অভিযোগপত্র পেয়েছি। এ ঘটনায় আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তে যদি অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে সমিতির রুলস এন্ড রেগুলেশন (নিয়মনীতি) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সূত্র- চট্টগ্রাম প্রতিদিন