মোহাম্মদ মশিউর রহমান:
সরদার সুরুজ্জামান স্যারকে খেয়াল করতাম ২০০৭ সাল থেকে! স্যারের চেহারার সাথে আমার বাবার চেহারার অনেকটুকুই মিল আছে! কিন্তু এটাই মুল কারন নয়! তার চেহারায় একটা দীপ্তি ছিল! হাটতেন মৃদু তালে! কথা বলতেন তুলনামূলক নিচু আওয়াজে!
সিভিল প্র্যাকটিসে তার তুলনা তিনিই! ঢাকার সকল সিভিল আদালতে তার বিচরন ছিল নিয়মিত! আমিও তখন ভালবেসে সিভিল প্রেক্টিস করি! প্রতিদিন স্যারকে দেখি কোন না কোন আদালতে! মুগ্ধ হই!
স্যারের সাথে পক্ষ-বিপক্ষের হয়ে মামলা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে! ভয়ে ভয়ে সাবমিশন দিতাম! কমবয়সী প্রতিপক্ষকে তিনি কখনো নিচু করে দেখেননি! সমান-সমান ভাবতেন!
তার মুল গুন ছিল, তিনি মামলার মুল বিষয়ে ঢুকে যেতেন শুরুতেই! বিশেষ করে জেরা কিংবা যুক্তিতর্কে তিনি মামলার মুল ইস্যুতে আঘাত করতেন! অপ্রয়োজনীয় সাবমিশন দিতেন না! তার যুক্তি থাকত অল্প কথায়!
আবার শুধু ফ্যাক্টস নিয়েই তিনি খেলতেন না! ফ্যাক্টস এর সাথে আইনকে সংযুক্ত করতেন! ফ্যাক্টস এর সাথে আইনকে সংযুক্ত করে সাবমিশন দেয়ার মধ্য দিয়ে সুরুজ্জামান স্যার হয়ে উঠতেন অপ্রতিরোধ্য!
বহু মামলায় তিনি জয়লাভ করেছেন! তার কাছ থেকে মামলায় নিয়োজিত আইনজীবী, আদালতে বসে থাকা আইনজীবীরা এবং বিচারকরা শিখেছেন অবিরাম! দেওয়ানী আইনে তার জ্ঞান ছিল গভীর!
তাকে রাগতে দেখেছি দুইবার! একবার এক আইনজীবীর সাথে আর একবার এক বিচারকের সাথে!
শুধু যে আইনপেশায় তিনি সীমাবদ্ধ ছিলেন তা নয়! আইনজীবী সমিতির কয়েকবারের সভাপতি হয়ে তিনি একজন সত্যিকারের অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন! আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও আইনজীবীদের ক্ষেত্রে দলমত তার কাছে বড় হয়ে উঠেনি কখনোই! শুনতাম, সকল প্যানেলের প্রার্থীরাই তাকে সালাম করে নির্বাচনে যেতেন!
এসবই তিনি অর্জন করেছিলেন! দিয়েও গেছেন সারাজীবন! কয়েকদিন আগে ছিল স্যারের মৃত্যদিন! আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক- আইনজীবী ও সাবেক কার্যকরী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।