সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী তোফাজ্জল হোসেন খান

প্রবীণ আইনবিদ টি এইচ খানের ১০২তম জন্মদিন উদযাপন

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনবিদ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিচারপতি তোফাজ্জাল হোসেন (টি এইচ) খানের ১০২তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। এ দিনটি উপলক্ষে ঘরোয়া পরিবেশে পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের নিয়ে কেক কাটা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসভবনে পরিবার-পরিজন, সাবেক প্রধানবিচারপতি, আইনজীবী, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করেছেন তিনি।

টি এইচ খানের জন্মদিনের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞা, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এম আই ফারুকী, তার ছেলে অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ট্রেজারার ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী প্রমুখ।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
টি এইচ খান ২১ অক্টোবর ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে। তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ময়মনসিংহের ফুলপুর হাইস্কুল থেকে। ইন্টারমিডিয়েট আনন্দ মোহন কলেজ থেকে।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আইন বিভাগে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

কর্মজীবন
টি এইচ খান প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগদেন। ১৪ মার্চ ১৯৫১ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন।

তিনি ১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে বিচারপতি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টে যোগদান করেন। বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের পূর্বে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেলের (অ্যাটর্নি জেনারেল) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৭ জুন বিচারপতি নিযুক্ত হন। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সরকার পক্ষের কৌসুলি ছিলেন। জুলাই ১৯৭৩ সালে থেকে পুনরায় আইন পেশায় যোগ দেন।

তিনি বাংলাদেশ আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১ম বার সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৭৪ সালে। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতা গ্রহণ করলে তিনি সুইজারল্যান্ডে হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার ও পরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘে নিয়োগ পান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তিনি ২য় বার সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৯৪ সালে।

তিনি সাউথ এশিয়া জোনে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্ট রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৫ সালে। আন্তর্জাতিক আদালতে এশিয়া মহাদেশে তিনিই একমাত্র বিচারপতি। জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে ১৯ জুন ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিচার পরিচালনার দায়িত্ব পালনের পর দেশে ফিরে আবারো আইন পেশায় যোগ দেন।

রাজনৈতিক জীবন
১৯৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৫ নভেম্বর ১৯৮১ সালে আইন ও বিচার, তথ্য ও বেতার, শিক্ষা, ভূমি, প্রশাসন,ধর্ম, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদের সামরিক আইন জারি হলে আবারও আইন পেশায় ফিরে যান তিনি।

এরশাদের বিরোধিতা করায় ১৯৮৬ সালে গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৯২ সালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পারিবারিক জীবন
টি এইচ খানের স্ত্রী বেগম রওশন আরা জোবায়দা খানম যিনি ৭৯ বছর বয়সে ১৭ মে ২০১১ সালে মারা যান। তাদের তিন ছেলে সন্তান আফজাল এইচ খান, ফজলে এলাহী খান এবং ফায়সাল এইচ খান।

বড় ছেলে আফজাল এইচ খান সাংবাদিক ও ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আর ফয়সাল এইচ খান আইন পেশায় নিযুক্ত আছেন।

মেজো ছেলে ফজলে এলাহী খান চাকরি করছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। একমাত্র মেয়ে ডা. মাহমুদা ফাতেমা খান ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক।