বিচারক সংকট কাটাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের চার বিচারপতিকে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এসব বিচারককে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আজ রোববার (৯ জানুয়ারি) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মো. গোলাম সরওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
চার বিচারপতি হলেন- বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।
প্রজ্ঞাপনে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- নতুন এই চার বিচারকের নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন: শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন বিচারকগণ
নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন চার বিচারপতির জীবন অত্যন্ত কর্মমুখর। তাঁদের জন্ম, পড়াশোনা, পরিবার ও কর্মময় জীবন সংক্ষিপ্ত আকারে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
বিচারপতি বোরহান উদ্দিন
১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বোরহান উদ্দিন। তাঁর পিতার নাম আব্দুস সবুর এবং মাতার নাম মমতাজ সবুর। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের ৩ মার্চ অধস্তন আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন তিনি। এর তিন বছর পর ১৯৮৮ সালের ১৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর আপীল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। দুই বছর পর ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন।
নিয়ানুযায়ী ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাবেন তিনি।
বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য প্রয়াত আইনজীবী এম. আব্দুর রহিমের সুযোগ্য সন্তান বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম। ১৯৬০ সালের ১১ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন ইনায়েতুর রহিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করার পর এলএলবি ডিগ্রি নেন। ১৯৮৬ সালের ১০ অক্টোবর অধস্তন আদালতে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। তিন বছর পর ১৯ ৮৯ সালের ২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০০২ সালের ১৫ মে আপীল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। এ ছাড়া তিনি অতিরিক্ত অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০০৯ সালের ৩০ জুন তাঁকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী হন তিনি। পরে ২০১৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরের বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ বিচারপতিকে হাইকোর্টে ফিরিয়ে আনা হয়।
বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ২০১৬ সাল থেকে বিনামূল্যে আইন সহায়তা প্রদান সংস্থা সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
নিয়ানুযায়ী ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় ২০২৭ সালের ১১ আগস্ট অবসরে যাবেন তিনি।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান
১৯৫৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন নাজমুল আহাসান। তাঁর পিতার নাম আনোয়ার হোসেন এবং মাতার নাম জাহানারা বেগম। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮৬ সালের ১৮ মার্চ অধস্তন আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। এরপর ১৯৯৪ সালের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এবং ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর আপীল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
২০১০ সালে তাঁকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল একই বিভাগের স্থায়ী বিচারক হন তিনি।
ভারত ও ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান।
নিয়ানুযায়ী ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাবেন তিনি।
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ
১৯৫৫ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণা দেবনাথ। তার পিতার নাম শ্রী দিনেশ চন্দ্র দেবনাথ এবং মাতার নাম বেণু দেবনাথ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন।
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে মুনসেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পদোন্নতি পেয়ে ১৯৯৮ সালের ১ নভেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হন তিনি।
এরপর ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি ও ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি পদে উন্নীত হন।
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড ল’ স্কুলে সার্টিফিকেট কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী বিচারক সমিতির সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নারী বিচারক সংঘের সম্মেলনে যোগ দেন।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রথম নারী বিচারক এবং হাইকোর্ট বিভাগের ষষ্ঠ নারী বিচারক।
নিয়ানুযায়ী ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের ১০ অক্টোবর অবসরে যাবেন তিনি।